জুমবাংলা ডেস্ক : অর্থ আত্মসাতের মামলায় কারাদণ্ড ভোগ করেছেন ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) উপমহাব্যবস্হাপক ও রাজশাহীর শাখা প্রধান আব্দুল মোত্তালিব। তবে নিজের কারাভোগের সময়কে তিনি ছুটি হিসেবে দেখিয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়ে ছুটি শেষে তিনি ফিরেছেন অফিসে। তবে তার কারাভোগের বিষয়ে কিছুই জানে না আইসিবি কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর আব্দুল মোত্তালিবকে কারাগারে পাঠান সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক। সেদিন থেকেই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন তিনি। গত ২৮ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত তাকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয়। এরপর গত ৩০ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। এরপর আবার নিয়মিত অফিস করতে শুরু করেন।
যে মামলায় এই কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানো হয়, তার বাদী রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কানোপাড়া সাজুরিয়া এলাকার মত্স্যচাষি আব্দুল বারিক মন্ডল। পুঠিয়ার তাহেরপুর অ্যাগ্রো লিমিটেডের পরিচালক তিনি। এ প্রতিষ্ঠানের নামে ইকুইটি অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিওরশিপ ফান্ড (ইইএফ) থেকে ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ মঞ্জুর করে আইসিবি। কিন্তু ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে ঋণের প্রথম কিস্তির ২৭ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন পুঠিয়ার মঙ্গলপাড়া গোবিন্দপাড়া এলাকার গোলাম মোর্শেদ হক (৩৫)। এ ঘটনায় তাকে সহায়তা করেন আইসিবির ডিজিএম ও রাজশাহী শাখার প্রধান আব্দুল মোত্তালিব ও প্রধান কার্যালয়ের এ জি এম আহম্মদ হোসেন। পরে এই তিন জনের বিরুদ্ধে আব্দুল বারিক দুর্নীতি দমন আইনে রাজশাহীর সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে মামলা করেন।
মামলার তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাশেদুল ইসলাম। অর্থ আত্মসাৎ ছাড়াও কোম্পানির ৬০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির বিষয়টিও তদন্তে উঠে আসে। আদালত সূত্র জানা যায়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর জামিন চেয়ে আসামি গোলাম মোর্শেদ হক ও আব্দুল মোত্তালিব আদালতে হাজির হন। কিন্তু দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। তবে পরে উচ্চ আদালতে তারা ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন এবং ৩০ সেপ্টেম্বর রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে দুই জনই মুক্তি পান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আব্দুল মোত্তালিব ১৬ সেপ্টেম্বর অফিসের হাজিরা খাতায় সই করে বেরিয়ে যান। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। এরপরের দুই দিন ছিল শুক্র ও শনিবার, অর্থাৎ সরকারি ছুটি। সে হিসেবে ১৯ সেপ্টেম্বর রবিবার থেকে কর্মস্হল ত্যাগের অনুমতিসহ ১২ দিন অর্জিত ছুটির আবেদন করেন তিনি। অর্থাৎ কারাগারে যেতে হবে, এটি নিশ্চিত হয়েই সে অনুযায়ী ছুটির দরখাস্ত জমা দেন এই কর্মকর্তা। আইসিবির রাজশাহী শাখার হাজিরা খাতার তথ্যে দেখা যায়, ১৯ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আব্দুল মোত্তালিবের স্বাক্ষরের ঘরে লাল কালিতে অর্জিত ছুটি (ইএল) লেখা রয়েছে।
ছুটির আবেদনে এই কর্মকর্তা লিখেছেন, পৈতৃক জমি ভাগ-বাটোয়ারা, খাজনা পরিশোধ ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ পারিবারিক কাজে তিনি নাটোরে গ্রামের বাড়িতে যাবেন। সেজন্য তার ছুটি প্রয়োজন। তবে ছুটিতে তিনি গ্রামের বাড়ি যাননি, তার প্রমাণ দিয়েছেন প্রতিবেশী ও এলাকাবাসী। রাজশাহী শাখায় গিয়ে অফিস করতে দেখা যায় আব্দুল মোত্তালিবকে।
কারাভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, এটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। কোনো ব্যবস্হা নিতে হলে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ নেবে। কারাভোগের বিষয়টি পর্ষদ জানে কি না? তা জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে আইসিবির ব্যবস্হাপনা পরিচালক আবুল হোসেনের ব্যক্তিগত সেলফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে তার ফোনটি ধরেন তার ব্যক্তিগত সহকারী। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে পরে মন্তব্য জানানো হবে।’
তবে আইসিবি রাজশাহী শাখার প্রধানের কারাগারে থাকার বিষয়টি জানতেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কিসমাতুল আহসান। তিনি বলেন, বিষয়টি তাকে কেউ জানায়নি। তবে এমন ঘটনা ঘটলে সেটি খতিয়ে দেখা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।