জুমবাংলা ডেস্ক: ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ফুসলিয়ে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ করে আসছিল একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাশেদুজ্জামান রয়েল। একপর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে রয়েলের পরিবার ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তাদের ভয়ে মামলা করার সাহস পায়নি মেয়েটির দিনমজুর বাবা। রয়েলের পরিবারের অব্যাহত হুমকি-ধমকি ও লোকলজ্জায় মেয়েটির বাবা তাকে পাশের উপজেলায় ফুপুর বাড়িতে রেখে আসেন।
এদিকে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দফায় দফায় বৈঠকে সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে গত ২৬ মে রাতে মেয়েটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। একই দিন রাতে ধর্ষক রয়েলকে আটক করে পুলিশ। ঘটনাটি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নের মিরাপাড়া গ্রামে।
এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পীরগাছা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রয়েলকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরই মধ্যে ধর্ষিতা কিশোরী দুই মাস আগে এক ছেলেসন্তানের জন্ম দিয়েছে। রয়েল জামিনে বেরিয়ে এসেছে। ধর্ষিতার পরিবার সমঝোতার মাধ্যমে মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় রয়েল ও তার পরিবারের লোকজন অব্যাহত হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। এদিকে ধর্ষিতার ঘরে জন্ম নেওয়া ছেলেসন্তান ধর্ষকের সামনেই বড় হচ্ছে নানা অপবাদে। প্রতিনিয়তই নষ্টা মেয়ে ডাক শুনতে হচ্ছে ধর্ষিতাকে।
ওই ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, ধর্ষক রয়েল জামিনে আসার পর তাদের সমঝোতা করার জন্য হুমকি দিচ্ছে। স্থানীয় একটি মহলের সহযোগিতায় রয়েল ও তার পরিবার ধর্ষিতার নামে চার শতক জমি ও তিন লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। শর্ত দেওয়া হয়, জন্ম নেওয়া ছেলেটিকে দূরে কোথাও দত্তক হিসেবে দিতে হবে। কিন্তু ছাত্রীর পরিবার রাজি না হওয়ায় ২০ দিন আগে বাদীর চাচার সহযোগিতায় তার বাবা ও মাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে থানায় আরো একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের তদন্ত হলেও অজ্ঞাত কারণে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
স্থানীয় সূত্র ও মামলার বিবরণে জানা গেছে, ওই ছাত্রীর দাদি পাশের আশরাফুজ্জামান ভুট্টুর বাড়িতে কাজ করতেন। এ সময় ওই ছাত্রী দাদির সঙ্গে প্রায় গিয়ে ভুট্টুর নাতনিকে দেখাশুনা করত। একপর্যায়ে ভুট্টুর ছেলে রয়েল মেয়েটিকে ফুসলিয়ে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক একাধিকবার ধর্ষণ করে। পরে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ওই ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখায় রয়েল।
গত ২৩ মে ওই ছাত্রীর পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হলে পরিবারের সদস্যরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। চিকিৎসক তার আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে বলেন। পরে পীরগাছার একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ওই ছাত্রীর আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওই ছাত্রী ২৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। গত ১২ আগস্ট সে একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেয়। বর্তমানে শিশুটি বাবার পরিচয় ছাড়াই বড় হচ্ছে।
শিশুটির মা জানায়, আমার বাবা দিনমজুর। মা ও দাদি পরের বাড়িতে কাজ করেন। শিশুসন্তান নিয়ে নানা অপবাদ, হুমকি-ধমকি ও কষ্টে দিন যাচ্ছে। আমাকে যে ধর্ষণ করেছে সে জামিনে এসে চোখের সামনে চলাফেরা করছে। মেয়েটির বাবা বলেন, মামলা তুলে নিতে সমঝোতা না করায় প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আমার বাবা-মাকে মারধর করেছে। থানায় অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। ওদের ভয়ে আমাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোকুল চন্দ্র বলেন, ভিকটিমের দাদা-দাদিকে মারধরের বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তদন্তে এ বিষয়ে কোনো সাক্ষী পাওয়া যায়নি। পীরগাছা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দেবাশীষ রায় বলেন, ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল না আসায় এখনো মামলার চার্জশিট দেওয়া সম্ভব হয়নি।
পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল ইসলাম বলেন, বাদীর অভিযোগের বিষয়ে একটি জিডি করে আদালতে দাখিল করা হবে। আদালতের নির্দেশনামতো পরে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।