আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়া থেকে পাচার করে আনা ২ পাউন্ড ইউরেনিয়াম দেশে কাদের ব্যবহার করার কথা ছিল-তা এখনও অজানা। ২ পাউন্ড ইউরেনিয়ামসহ গ্রেফতারকৃত ৩ জন জিজ্ঞাসাবাদে কোন তথ্যই দিতে পারেনি।
র্যাব বলছে, গ্রেফতারকৃতরা ইউরেনিয়াম বহনকারী ছিলেন। তাদের কাছে একটি চক্র ওই ২ পাউন্ড ইউরেনিয়াম রাখতে দিয়েছে। সেটি কাদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল-সে বিষয়ে গ্রেফতারকৃতরা কিছুই জানেন না। তবে জিজ্ঞাসাবাদে তারা দীর্ঘদিন ধরে বাহির থেকে ইউরেনিয়াম এনে অন্য দেশে পাচার করার তথ্য স্বীকার করেছেন। এই ইউরেনিয়াম ওষুধ শিল্প ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহারের জন্য এটি পার্শ্ববর্তী একটি দেশে পাচার করা হত বলে তারা জানিয়েছেন।
গত ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর রামপুরা থানার পূর্ব রামপুরার জাকের গলির একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৫৫ কোটি টাকা মূল্যের ২ পাউন্ড ইউরেনিয়ামসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন-এ বি এম সিদ্দিকী বাপ্পী (৫৯), আক্তারুজ্জামান (৩৩) ও মিজানুর রহমান (৫০)।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, উদ্ধারকৃত ইউরেনিয়াম যে প্রকৃতপক্ষে ইউরেনিয়াম, সেটি আমরা এখনও নিশ্চিত নয়। এটি পরীক্ষার জন্য রামপুরা থানা পুলিশের মাধ্যমে পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষায় যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে সেটি ইউরেনিয়াম-তখন এ ব্যাপারে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ মামলা দায়ের করা হবে। তবে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তেমন কোনো তথ্য মেলেনি।
এদিকে, পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. সানোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশের কাছ থেকে ইউরেনিয়াম পরীক্ষার জন্য আলামত পাঠানো হয়েছে। সেটি পরীক্ষার পর নিশ্চিত করে বলা যাবে যে এটি ইউরেনিয়াম কি না। তবে অতীতে বাংলাদেশে এ ধরনের ইউরেনিয়ামের ১-২ টি চালান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিল।
সূত্র জানায়, পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বিকিরণ উন্নয়ন সেলে এই ইউরেনিয়াম পরীক্ষা করা হবে। বিকিরণ উন্নয়ন সেলের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইউরেনিয়ামের বিকিরণের ক্ষমতার ওপর এর তেজস্ক্রিয়তা নির্ভর করে। বিশেষ করে উচ্চ মাত্রার বিকিরণের ইউরেনিয়াম খুবই ভয়ঙ্কর। ইউরেনিয়াম সংরক্ষণ ও বহন করতে হয় অত্যন্ত সতর্কতার সাথে। অতীতে বাংলাদেশে যেসব ইউরেনিয়াম জব্দ হয়েছে, সেসব ইউরেনিয়াম সাধারণত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার হয়।
র্যাব-১০ এর উপ-অধিনায়ক মেজর শাহরিয়ার জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা যে ইউরেনিয়াম জব্দ করেছি, সেটি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সংরক্ষণ করা হচ্ছিল। এটি একটি চামড়ার তৈরি বড় বক্সের মধ্যে সংরক্ষণ করা ছিল। এটি থেকে ১ টি স্টিলের বক্স, রিমোট, ম্যানুয়েল বই, গ্যাস মাস্ক, ইলেটকট্রিক মিটার, রাবারের ড্রপার, স্টিলের ঢাকনাযুক্ত কাঁচেরপট, কাঁচি, মিটার, কম্পাস, মেটাল ছাঁকনি, ক্যাটালগ, এক জোড়া হ্যান্ড গ্লাভস, চামড়ার জ্যাকেট (গাউন), দুটি পাইপ ও পাঁচটি কাঁচের তৈরি ছোট চিকন পাইপ জব্দ করা হয়েছে।
ইউরেনিয়ামকে পৃথিবীতে সবচেয়ে দামি পদার্থ হিসেবে ধরা হয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান জ্বালানি হচ্ছে ইউরেনিয়াম। ৪ হাজার ৫০০ টন উচ্চ গ্রেডের কয়লা থেকে যে পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায় সেই একই পরিমাণ শক্তি মাত্র এক কেজি ইউরেনিয়াম থেকে পাওয়া যায়।
ইউরেনিয়াম একটি তেজস্ক্রিয় ধাতু ও উচ্চ ঘনত্বের মৌল। যা ১৭৮৯ সালে বিজ্ঞানী মার্টিন হাইনরিখ ক্লাপরথ ইউরেনিয়াম আবিষ্কার করেছিলেন। ধারণা করা হয় যে, তখনকার সবচেয়ে সাম্প্রতিক ঘটনা ছিল ইউরেনাস গ্রহের আবিষ্কার। তিনি তখন এই ইউরেনাস গ্রহের নামানুসারেই তার আবিষ্কৃত মৌলের নাম রেখেছিলেন ইউরেনিয়াম। ১৮৯৬ সালে বিজ্ঞানী হেনরি বেকেরেল সর্বপ্রথম ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন। পৃথিবীতে রাশিয়া, ইউক্রেন, কাজাখিস্তান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নাইজার এবং নামিবিয়ায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ইউরেনিয়াম উত্তোলিত হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।