স্পোর্টস ডেস্ক: প্রথম দুই ম্যাচে দাপট দেখালেও, তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলংকাকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারলো না বাংলাদেশ। আজ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে লংকানদের কাছে ৯৭ রানে হারে টাইগাররা। শেষ ম্যাচ হারলেও, সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতলো বাংলাদেশ।
অধিনায়ক পেরেরা সেঞ্চুরিতে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৮৬ রান করে শ্রীলংকা। জবাবে শ্রীলংকার পেসার দুসমন্থ চামিরার বোলিং তোপে ১৮৯ রানেই অলআউট হয় বাংলাদেশ।
এই ম্যাচ হারলেও ৯ ম্যাচে ৫ জয় ও ৪ হারে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগ পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষেই থাকলো বাংলাদেশ। ৬ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ১২তমস্থানে শ্রীলংকা। এই ম্যাচ দিয়ে সুপার লিগে প্রথম জয়ের স্বাদ নিলো লংকানরা।
প্রথম দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ হাতছাড়া, তাই হোয়াইটওয়াশ এড়াতে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে চারটি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে শ্রীলংকা। এরমধ্যে তিনজনেরই অভিষেক ঘটে। আর বাংলাদেশের একাদশে ছিলো দু’টি পরিবর্তন।
ওপেনার লিটন দাসের পরিবর্তে মোহাম্মদ নাইম এবং মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের জায়গায় তাসকিন আহমেদ একাদশে সুযোগ পান।
প্রথম দুই ম্যাচে টস ভাগ্যে হারে শ্রীলংকা। আজ মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অবশেষে টস লড়াইয়ে জয় পেয়ে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেন শ্রীলংকার অধিনায়ক পেরেরা।
দানুশকা গুনাতিলকাকে নিয়ে প্রথম ওভার থেকেই মারমুখী মেজাজে পেরেরা। পাওয়ার-প্লেতে ৭৭ রান তুলে ফেলেন তারা। বাংলাদেশ বোলারদের কোন রকম সুযোগ না দিয়ে দু’জনই সমান ৩৮ রান করে তুলেন।
পাওয়া-প্লেতে অবিচ্ছিন্ন থাকায় আত্মবিশ্বাসে টপবগ করছিলেন গুনাতিলকা-পেরেরার। ১২তম ওভারে তাদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরান বাংলাদেশের পেসার তাসকিন। ঐ ওভারের দ্বিতীয় বলে গুনাতিলকার উইকেট উপড়ে ফেলেন তিনি। দলীয় ৮২ রানে প্রথম উইকেট হারায় শ্রীলংকা। ৩৩ বলে ৩৯ রান করেন গুনাতিলকা।
ঐ ওভারের শেষ বলে আবারো শ্রীলংকাকে ধাক্কা দেন তাসকিন। তিন নম্বরে খেলতে নামা পাথুম নিশাংকাকে উইকেটে পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন তাসকিন। রানের খাতাই খুলতে পারেননি নিশাংকা। নিজের দ্বিতীয় ওভারের দুই উইকেট নিয়ে বিধ্বংসী মেজাজে তাসকিন।
বিধ্বংসী মেজাজে আরও উইকেট শিকারের জন্য মুখিয়ে ছিলেন তাসকিন। কিন্তু তাসকিনের জোড়া আঘাতের পর ঘুঁড়ে দাঁড়ানোর পথের খোঁজে ছিলো শ্রীলংকা। পেরেরা ও কুশল মেন্ডিসের ব্যাটিং দৃঢ়তায় সেই পথ পেয়ে যায় শ্রীলংকা।
তৃতীয় উইকেটে ৮০ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়েন তারা। জমে যাওয়া জুটি ভাঙ্গতে বোলিংএ বারবার পরিবর্তন করেছিলেন অধিনায়ক তামিম। অবশেষে সেই তাসকিনই ভরসার প্রতীক হয়ে উঠেন। ২২ রান করা মেন্ডিসকে শিকার করেন তাসকিন।
১৫১ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন হলেও, অন্যপ্রান্তে দলের চাকা সচল রেখেছিলেন পেরেরা। সাকিবের বলে ৬৬ ও ৭৯ রানে যথাক্রমে মুস্তাফিজ-আফিফের হাতে দু’বার জীবন নিয়ে সেঞ্চুরির দোড়গোড়ায় পৌঁছে যান পেরেরা। এরপর ৯৯ রানে আবারো জীবন পান পেরেরা। এবার বোলার ছিলেন মুস্তাফিজুর, ফিল্ডার মাহমুুদুল্লাহ।
তাই তিনবার জীবন নিয়ে ৯৯ বলে ১০৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবারের মত সেঞ্চুরির স্বাদ নেন পেরেরা। তিন অংকে পা দিয়েও নিজের ইনিংসটি বড় করছিলেন পেরেরা। তবে পেরেরাকে ১২০ রানে থামিয়ে দেন বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। ১২২ বলে ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় ১২০ রান করেন পেরেরা।
৪০তম ওভারে দলীয় ২১৬ রানে আউট হন পেরেরা। পেরেরার আউটের পর শ্রীলংকাকে বড় স্কোর এনে দেয়ার দায়িত্ব ছিলো লোয়ার-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের। সিরিজের প্রথমবার খেলতে নামা নিরোশান ডিকবেলা ৭ রান করে রান আউট হন। আর হাসারাঙ্গা ডি সিলভা ১৮ রান করে তাসকিনের চতুর্থ শিকার হন।
তবে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ৭০ বলে ৪টি চারে অপরাজিত ৫৫ ও রমেশ মেন্ডিসের অপরাজিত ৮ রানে ৬ উইকেটে ২৮৬ রানের বড় সংগ্রহ পায় শ্রীলংকা।
বাংলাদেশের তাসকিন ৯ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন। সদ্য আইসিসি ওয়ানডে বোলিং র্যাংকিংএ দ্বিতীয়স্থানে উঠা স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ, এ ম্যাচে উইকেটশুন্য ছিলেন। ফিল্ডারদের ভুলে উইকেট শিকারের স্বাদ নিতে পারেননি সাকিবও।
জয়ের জন্য ২৮৭ রানের লক্ষ্যমাত্রায়, শুরুতেই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। শ্রীলংকার পেসার দুসমন্থ চামিরার তোপে পড়ে ২৮ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারায় টাইগাররা। অধিনায়ক তামিম ইকবাল ১৭, মোহাম্মদ নাইম ১ ও সাকিব আল হাসান ৪ রান করে ফিরেন।
শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন ইনফর্ম মুশফিকুর রহিম ও মোসাদ্দেক হোসেন। উইকেটে সেটও হয়ে যান তারা। দলকে বড় জুটি উপহার দিতে দু’জনে ৫০ রানও করে ফেলেন মুশফিক-মোসাদ্দেক। কিন্তু ২৪তম ওভারে তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান সিরিজে প্রথমবারের মত খেলতে নামা অফ-স্পিনার রমেশ মেন্ডিস।
সিরিজে ১টি করে সেঞ্চুরি ও হাফ-সেঞ্চুরি করা মুশফিককে ২৮ রানে থামিয়ে দেন মেন্ডিস। চতুর্থ উইকেটে ৮৩ বলে ৫৬ রান করেন মুশফিক-মোসাদ্দেক।
মুশফিকের বিদায়ে ক্রিজে মাহমুদুল্লাহকে সঙ্গী হিসেবে পান মোসাদ্দেক। এই জুটিও দেখে শুনে খেলতে থাকেন। তাদেরও লক্ষ্য ছিলো বড় জুটির। ততক্ষনে ৩৭ ম্যাচে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ফেলেন মোসাদ্দেক।
হাফ-সেঞ্চুরির পরই মোসাদ্দেককে তুলে শ্রীলংকাকে আবারো ব্রেক-থ্রু এনে দেন মেন্ডিস। দলীয় ১২৫ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরেন মোসাদ্দেক। এ অবস্থায়ও লড়াইয়ে ফেরার আশায় ছিলো বাংলাদেশ।
কিন্তু মাহমুদুল্লাহর সাথে তাল মেলাতে পারেননি লোয়ার-অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেন ও মিরাজ। আফিফ ১৬ ও মিরাজ খালি হাতে ফিরেন। আর সেখানেই বাংলাদেশের ম্যাচ হার রচিত হয়ে যায়।
শেষ পর্যন্ত ৪২ দশমিক ৩ ওভারে ১৮৯ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হবার আগে ৬৩ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫৩ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। ১৯৭ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৫তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন মাহমুদুল্লাহ। শ্রীলংকার চামিরা ১৬ রানে ৫ উইকেট শিকার করে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন। ২৮ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত ৫ উইকেট নিলেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।