অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ। নদী-পাহাড়, সমুদ্র আর শ্যামলিমা এই রূপকে যেন শতভাগ বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনি সবুজে ঘেরা ‘হিমালয়কন্যা’ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের সর্বোত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়া। হিমালয়ের পাদদেশে এই ভূখণ্ডের অবস্থান বলে উত্তরবঙ্গে তা হিমালয়কন্যা নামেই পরিচিতি লাভ করেছে। তাই শরতের শুভ্র আকাশে সাদা মেঘের ভেলার পাশাপাশি সুউচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট ও কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মেলে। ফলে পর্যটক আকর্ষণের মূলকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এই রূপবতী কাঞ্চনজঙ্ঘা।
ঝকঝকে মেঘমুক্ত আকাশে ভোরের সূর্যের সঙ্গে পূর্ব দিগন্তে শুভ্র বরফাচ্ছন্ন পর্বতশৃঙ্গদের দেখা মেলে। শুধুই কাঞ্চনজঙ্ঘা নয় বরং তার সহোদর শ্রেণির কাবরু, তালুং, পান্ডিম, সিনিওলচু, কুম্ভকর্ণ পর্বতশৃঙ্গের দেখাও মেলে তেঁতুলিয়া থেকে। অক্টোবর-নভেম্বরের মেঘমুক্ত আকাশে খুব স্পষ্ট আর লাস্যময়ী রূপ ধরা পড়ে।
তাই তো দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ পাহাড়ের বিশালতাকে ধারণ করতে কিংবা অশান্ত মনকে স্থির করতেই ছুটে যায় তেঁতুলিয়ায়। বছরের এই সময়টায় কনকনে শীত জেঁকে না বসলেও ভোরবেলা মৃদুমন্দ বাতাস হাড়ে যে হালকা কাঁপুনি তৈরি করে না তা কিন্তু না! তা সত্ত্বেও সকালের নরম সোনালি রোদ আর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল এই পর্বতশৃঙ্গ যেন অপূর্ব পরিবেশ তৈরি করে।
যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমী মহানন্দার তীরে দাঁড়িয়ে এই অসাধারণ দৃশ্যের সাক্ষী হলে মনের অজান্তেই বলে উঠবে ‘একেই বলে পৃথিবীর স্বর্গ’। আর হাতে যদি হাতে এক কাপ অর্গানিক চা থাকে, তাহলে তো বলতেই হয় ষোলোকলা পূর্ণ! শুধুই যে কাঞ্চনজঙ্ঘার টানে পর্যটকেরা পাড়ি জমান তেঁতুলিয়ায় তা কিন্তু নয়। দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ চা–বাগানগুলোও কিন্তু এখানেই অবস্থিত। ফলে রথা দেখা আর কলা বেচা উভয়ই হয়ে যাবে একবারে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সড়কপথে এসি ও নন–এসি বাসে পঞ্চগড় এবং তেঁতুলিয়া যাওয়া যায় খুব সহজেই। অধিকাংশ বাসের শেষ গন্তব্য থাকে তেঁতুলিয়া। রেলপথে কিংবা আকাশ পথেও যাওয়া যায় পঞ্চগড়ে। তবে আপনি বিমানে গেলে আপনাকে সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে যেতে হবে পঞ্চগড়। এবং রেলপথে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও একতা এক্সপ্রেস ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে চলাচল করে। পঞ্চগড়-রাজশাহী রুটে চলে বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস।
যেকোনো মাধ্যমে আপনি জেলা শহর পঞ্চগড়ে পৌঁছালেই ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তেঁতুলিয়ায় পৌঁছানো খুবই সহজ। ছোট্ট মনোরম আর অতিথিপরায়ণ এই শহরে নাগরিক চাকচিক্য হয়তো নেই, তবে মানুষ্যের সারল্য আর আন্তরিকতায় মুগ্ধ হতে আপনি বাধ্য হবেন, এ আমি হলফ করেই বলতে পারি।
সরকারি ও বেসরকারি হোটেল ও বাংলো রয়েছে জেলা শহর এমনকি তেঁতুলিয়াতেও। মহানন্দা নদী ঘেঁষে উঁচু টিলার ওপর অবস্থিত শতবর্ষ পুরোনো তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো। একটা সময় এই এলাকায় গা ছমছমে পরিবেশ থাকলেও বর্তমানে সেজেছে বেশ সুন্দর করে। শত বছরের পুরোনো গাছগুলোও যেন বহন করে হাজারো গল্প। আপনি চাইলে সেখানেও রাতযাপন করতে পারেন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে।
এ ছাড়া পর্যটকের পরিমাণ দিনে দিনে বৃদ্ধি পাওয়ায় তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়ে বেসরকারিভাবে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে, যেখানে অনেক সুলভ মূল্যে রাত যাপন করতে পারবেন।
স্রষ্টার সৃষ্টি যে কত মোহনীয়, তা নিজ চোখে না দেখে বিশ্বাস করা কঠিন তাই এই অক্টোবর- নভেম্বরে নাগরিক সব ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে নিজের জন্য দুটি দিন বের করে ফেলুন আর ঘুরে আসুন স্বর্গরাজ্যে। খুব বেশি সময় আর অর্থ প্রয়োজন নেই শুধু প্রয়োজন প্রকৃতির প্রতি প্রেম; তবে এ কথা নিশ্চিত সেই স্বর্গীয় সকালের সাক্ষী হলে প্রেমময়ী কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রতিবছর তার রূপের মোহে আটকে ফেলবে আপনাকে। আপনি বারবার পেতে চাইবেন এই নৈসর্গিক সুখ আর অপার শান্তি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।