আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তীব্র পানির সংকট চলছে ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। পানির দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভে হতাহতেরও ঘটনা ঘটেছে। বিবিসি বাংলা’র।
গত মাসে পানির দাবিতে টানা তিন সপ্তাহ ধরে দেশটিতে বিক্ষোভ চলেছে। এই বিক্ষোভে কয়েকজন নিহত হয়েছে। এই সংটের জেরে সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির বিভিন্ন শহরে।
বিবিসি জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞরা ইরানের পানি পরিস্থিতি নিয়ে বহু বছর ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন। এপ্রিল মাসে ইরানের আবহাওয়া দফতর ‘নজিরবিহীন খরা’ সম্পর্কে হুশিয়ার করে জানায় যে দীর্ঘ মেয়াদে গড়পড়তা বৃষ্টিপাতের হারের থেকে বৃষ্টি হয়েছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কম।
ইরান এখন অতিরিক্ত তাপমাত্রা, দূষণ, বন্যা এবং হ্রদ নিশ্চিহ্ণ হয়ে যাওয়ার মত বিশাল পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।
ইরানের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, দেশটির প্রধান নদী অববাহিকার বেশিরভাগ অঞ্চলে ২০২০এর সেপ্টেম্বর আর ২০২১এর জুলাইয়ের মধ্যে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে, তা ছিল গত বছর একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম।
ইরানে বৃষ্টিপাতের ইতিহাস সংক্রান্ত তথ্যউপাত্ত সরকারি সূত্র থেকে বিবিসি পায়নি, তবে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা উপগ্রহ চিত্র থেকে বৃষ্টিপাতের উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন।
এই তথ্যউপাত্ত থেকে গত ৪০ বছরের গড় বৃষ্টিপাতের হারের বিপরীতে গত মার্চ পর্যন্ত দেশটিতে বৃষ্টিপাতের হারের তুলনা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, আরভিনের সেন্টার ফর হাইড্রোমেটেরিওলজি বিভাগের এই তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে ২০২১ সালের প্রথম তিন মাসে ইরানে বৃষ্টিপাত হয়েছে গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় অনেক কম।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ইরানে যেসব গমের ক্ষেতের ফলন খুবই মূল্যবান, তার মধ্যে এক তৃতীয়াংশ অনাবৃষ্টিতে সেচের সমস্যায় পড়বে। যার জন্য ইরানে কৃষি কঠিন সমস্যার মুখে পড়তে পারে।
খুজেস্তান প্রদেশে তীব্র খরায় বিপর্যস্ত স্থানীয় মানুষ পথে নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে- অনেকের কণ্ঠে স্লোগান ছিল- আমি তৃষ্ণার্ত!
এই অঞ্চলে আগে পানির কোন অভাব ছিল না। ওই প্রদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত কারুন নদীতে প্রচুর পানি ছিল। এখন সেই নদী বেশিরভাগ সময়ই শুকনো।
উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে, এই নদীর পানি গত বছর ক্রমান্বয়ে কমেছে। জার্মানির স্টুটগার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগৃহীত তথ্য উপাত্তে খুজেস্তানের খরার এই চিত্র দেখা গেছে।
বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ বাঁধগুলোতে বর্তমানে পানির স্তর খুবই নিচে নেমে গেছে। এই বাঁধগুলোর নিচের এলাকায় ধান চাষ ও গবাদি পশুর জন্য সংরক্ষিত পানি ছেড়ে দেবার জন্য দাবি ক্রমেই বাড়ছে।
কেউ কেউ বলছে এর জন্য দায়ী তেল উৎপাদন শিল্প। তাদের যুক্তি পরিবেশের ভারসাম্য ব্যাহত হয়েছে তেল উৎপাদন শিল্পের জন্য।
অনেকে বলছে বর্তমানের খরা পীড়িত এই এলাকাগুলো থেকে দেশটির মধ্যাঞ্চলে মরু এলাকায় পানি টেনে নেয়ার কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে।
ইরানের পরিবেশ দফতরের সাবেক উপ প্রধান কাভে মাদানি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং খরা এই পরিস্থিতির প্রধান অনুঘটক, তবে সমস্যার শিকড় আরও অনেক গভীরে। কয়েক দশক ধরে অপরিকল্পিত পানি ব্যবস্থাপনা, পরিবেশগত বিষয়গুলো নিয়ে পর্যালোচনা ও দূরদৃষ্টির অভাব এবং এরকম একটা পরিস্থিতি যে হতে পারে তার জন্য কোনোরকম আগাম প্রস্তুতি না রাখা এখন পরিস্থিতিকে এরকম ভয়াবহ করে তুলেছে।
ইরানে প্রায়ই খরা হয় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন দেশটির আবহাওয়ায় চরম পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়ায় অতিমাত্রায় বদল ঘটছে।
আবহাওয়া এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি উষ্ণ ও শুষ্ক হয়ে ওঠায় জলবিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর এর বড়ধরনের প্রভাব পড়ছে।
এছাড়াও ইরানে আরেকটা বড় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে দেশটির জলাভূমি এবং নদীনালা শুকিয়ে যাওয়ার কারণে। এর ফলে দেশটিতে বিপদজনক ধূলি ঝড় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।