জুমবাংলা ডেস্ক : “ফোনে মিস্ত্রি আমাকে জানালো স্যার একটু নিচতলায় আসেন। সে আমাকে ফোনে কথাটা বলতে চায়নি। নিচে যাওয়ার পর যখন সে আমাকে বলল যে স্যার বাথরুমের ফলস ছাদের ওপর মনে হয় একটা লাশ পাইছি। আমি বললাম ব্যাটা কি কস, পাগলের কথা।”
বিবিসি বাংলাকে সম্প্রতি এমনটা বলেন রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা হানিফ সরকার।
তার দিনটা খুব সাদামাটাভাবেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু বিকালে পিলে চমকে ওঠার মতো এমন এক তথ্য তিনি পেলেন যা কোনো দিন কল্পনাও করেননি।
দীর্ঘদিন ধরে তার বাড়িতে পানির লাইন মেরামতের জন্য যে মিস্ত্রি কাজ করেন তিনিই লাশের তথ্যটি জানান। পরে পলিথিন, সিমেন্ট ও কংক্রিট দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায় মানুষের কঙ্কাল। যার বিভিন্ন অংশ টুকরো হয়ে গেছে অথবা খুলে আলাদা হয়ে গেছে।
সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে হানিফ সরকারের নিচতলার ভাড়াটিয়া জানালেন যে বাথরুমে পানি আসছে না। “আমি আমার পারমানেন্ট মিস্ত্রিকে বললাম বিষয়টা দেখতে। সে কয়েক দিন পরে সেখানে গেল। খুঁজে কোন সমস্যা না পেয়ে সে বাথরুমের ওপরে ফলস ছাদে ওঠে। সেখানে পাইপ পরীক্ষা করতে গিয়ে দেয়াল ভাঙতে হয়েছে। সেই সময় বের হয়ে এলো প্লাস্টিকে মোড়ানো কিছু একটা।”
হানিফ থানায় গিয়ে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন। ঘটনার দিন পুলিশের প্রায় সবগুলো বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা সারা রাত জুড়ে তার বাড়িতে আসা যাওয়া করে।
এ নিয়ে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোস্তাজিরুর রহমান বলেন, তার কর্মজীবনে এযাবতকালে এমন রহস্যজনক অভিজ্ঞতা হয়নি।
তিনি বলেন, “লাশ সংরক্ষণ করার জন্য চা পাতা ব্যবহার করা হয়েছে। তারপর পলিথিন দিয়ে সেটি মোড়ানো হয়েছে এবং সিমেন্ট, বালু, সুরকি দিয়ে সেটিকে চাপা দেওয়া অবস্থায় পাওয়া গেছে।”
আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে যে কাজটি করেছে সে এই বিষয়ে বেশ দক্ষ। তবে কঙ্কালটি নারী না পুরুষের, বয়স কত, কত দিন আগে হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয়েছে, অথবা মৃত্যু হয়েছে সেসব কিছুই এখনো জানা যায়নি। মো. মোস্তাজিরুর রহমান বলছেন, কঙ্কালটি ফরেনসিক ও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এই পরীক্ষা না করে বিস্তারিত জানা যাবে না।
হানিফ সরকার জানিয়েছেন বাড়িটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে ১৯৯০ সালে। এর তিন বছর পর তিনিই নিচতলার প্রথম বাসিন্দা। বাড়ির ওপরের অংশ তৈরি হয়ে গেলে তিনি উপড়ে উঠে যান। এরপর থেকে সেখানে মোট চারজন ভাড়াটিয়া উঠেছে।
একজন ভাড়াটিয়া দীর্ঘদিন ছিলেন। তার পরিবার চলে যাওয়ার পর একবার ফ্ল্যাটটিতে সংস্কার কাজও করা হয়েছে।
পুলিশ এখন ভাড়াটিয়াদের খোঁজ করে জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
কঙ্কালটির ফরেনসিক ও ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়া গেলে সেটি ভাড়াটিয়াদের পরিবার, কর্মচারী ও বাড়িওয়ালার পরিবার সবার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কঙ্কাল উদ্ধারের পর পুলিশ নিজে একটি হত্যা মামলা করেছে।
এ দিকে ছয়জনের পরিবার নিয়ে শ্যামল খান নিচতলায় উঠেছিলেন গত বছরের জানুয়ারি মাসে। দুটি ঘর, একটা বাথরুমের ফ্ল্যাটটি নিচতলায় হওয়াতে এমনিতেই বেশ অন্ধকার।
তিনি বলেন, “মাথার ওপরে কঙ্কাল নিয়ে এত দিন আমি, আমার বাচ্চা ও পরিবার বাথরুম ব্যবহার করছি। এখানে রাতে ঘুমাইছি ভাবলে গা ছমছম করে ওঠে।”
শ্যামল খান বলেন, এই ভয় তিনি ও তার পরিবার এখনো কাটাতে পারছেন না। কিন্তু ভয় নিয়েই অন্ধকার ফ্ল্যাটটিতে থাকতে হচ্ছে কারণ তদন্তের স্বার্থে বাড়িটি ছেড়ে তারা যেতে পারছেন না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।