সড়কপথে ১৬০ দেশ ভ্রমণের বিরল রেকর্ড গড়ে মক্কায় নাজমুন নাহার
জুমবাংলা ডেস্ক: প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ১৬০ দেশ ভ্রমণের রেকর্ড গড়েছেন নাজমুন নাহার। ভ্রমণে বাংলাদেশের পতাকাবাহী নাজমুন নাহার বিশ্ব মানচিত্রে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সকল বাধা-বিঘ্নকে অতিক্রম করে নারীর অগ্রযাত্রায় আজও যারা অবদান রাখছেন, তাদেরই একজন নাজমুন নাহার। বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা হাতে যিনি পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ একাকী সড়কপথে ভ্রমণ করেছেন। খবর-ইউএনবি’র।
২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি নাজমুন নাহার ১৬০তম দেশ হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পুণ্যভূমি সৌদি আরবের মাটিতে পা রাখেন। এরই মধ্যে তিনি দেশটির বিভিন্ন শহর যেমন- রিয়াদ, জেদ্দা ও মক্কা সফর করেন এবং ওমরাহ পালন করেন। তারপর নিজ দেশের মাটিতে ফিরে আসেন। তিনি বিশ্ব শান্তির বার্তা ও পরিবেশ সচেতনতায় তরুণ ও শিশুদেরকে উৎসাহিত করেন।
দেশে ফিরেই ২৪ ফেব্রুয়ারি রোটার্যাক্ট দক্ষিণ এশিয়া সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৪৫০ জন প্রতিনিধির সামনে নাজমুন নাহার বিশ্ব ভ্রমণের সাহসিকতার গল্প তুলে ধরেন। নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য, বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকাকে বহন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী তরুণদেরকে উৎসাহিত করার জন্য এই সম্মেলনে সকল প্রতিনিধিদের সামনে রোটেশিয়ার পক্ষ থেকে নাজমুন নাহারকে বিশেষ সম্মাননা “রোটেশিয়া লেজেন্ডস অ্যাওয়ার্ড” দেওয়া হয়।
বন-জঙ্গল, পর্বতমালা, মহাসমুদ্র, মরুভূমির লাখ লাখ মাইল একাকী পাড়ি দিয়ে আসা তার বিশ্ব ভ্রমণের এই অভিযাত্রাকে অভিনন্দিত করেন এশিয়া থেকে আসা সকল প্রতিনিধিরা। ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশন আয়োজিত “মিট দ্য সেলিব্রেটি” সেশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে আসা তরুণ ডিবেটারদেরকে উৎসাহিত করেন তিনি।
৩ মার্চ নাজমুন নাহার বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের আমন্ত্রিত স্পিকার হিসেবে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সপ্তম ডিভিশনাল রেড ক্রিসেন্ট ক্যাম্পে সারা বাংলাদেশ থেকে আসা সকল ইয়ুথ ভলান্টিয়ারদেরকে বিশ্ব ভ্রমণের সংগ্রাম সাফল্য এবং অর্জনের কথা তুলে ধরেন। তিনি সকল তরুণদেরকে আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন।
২০০০ সালে ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নাজমুন নাহারের প্রথম বিশ্ব ভ্রমণ অভিযাত্রা শুরু হয়। ২০১৮ সালের ১ জুন ১০০তম দেশ দেশ ভ্রমণের রেকর্ড সৃষ্টি করেন জিম্বাবুয়েতে। তারপর, ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে বিশ্ব ভ্রমণের এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক সৃষ্টি করেন আফ্রিকার দেশ সাওটোমে ও প্রিন্সিপ ভ্রমণের মাধ্যমে।
যেখানেই গিয়েছেন বাংলাদেশের পতাকার পাশাপাশি তিনি উঁচু করে ধরেছেন বিশ্ব শান্তির বার্তা “নো ওয়ার, অনলি পিস”।
নাজমুন নাহার তার ভ্রমণের সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোকাল কমিউনিটি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যান। সেখানেই তিনি বিশ্ব শান্তি ও পরিবেশ সচেতনতায় নারী, শিশু ও তরুণদেরকে উৎসাহিত করেন।
তার বিশ্ব ভ্রমণ এতটা সহজ ছিল না। বিশ্ব ভ্রমণ করার জন্য তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। দীর্ঘ ২২ বছরের অভিযাত্রায় নাজমুন অনেক কঠিন-দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছেন। অনেক কঠিন পরিস্থিতিসহ মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন বহুবার। তবুও থামেনি তার পদযাত্রা। তিনি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েও বাংলাদেশের পতাকাকে নিয়ে যাচ্ছেন তার বিশ্ব অভিযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে। বাংলাদেশের পতাকা হাতেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, রাষ্ট্রপ্রধান ও বিখ্যাত ব্যক্তিরা তাকে সংবর্ধিত করেছেন।
পিস টর্চ বিয়ারার অ্যাওয়ার্ডসহ দেশ ও বিদেশে ৫৫ টিরও বেশি সম্মাননা অর্জন করেছেন। নাজমুন নাহার সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। তার জন্মস্থান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর সদরে।
নাজমুন নাহারের লক্ষ্য বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে তিনি বিশ্বের প্রতিটি দেশে ভ্রমণ করবেন। বেগম রোকেয়া, প্রীতিলতাসহ এ দেশের আলোকিত নারীরা যুগে যুগে পথ দেখিয়েছেন পিছিয়ে পড়া নারীদেরকে। তাদেরই মত নাজমুন নাহার এই প্রজন্মের নারীদেরকে সামনে এগিয়ে চলার দারুণ উৎসাহ যোগাচ্ছেন তার বিশ্ব ভ্রমণ অভিযাত্রার মাধ্যমে। তার অর্জনের আলো ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বময়। বাংলাদেশের মানুষ আরও গর্ব করুক আমাদের নাজমুন নাহারকে নিয়ে।
৪০ বছর ধরে বিনা পয়সায় ইমামতি, বিদায়ের দিনে গ্রামবাসীর জমকালো সংবর্ধনা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।