জুমবাংলা ডেস্ক: সমস্যা নিয়ে নানা জায়গায় দৌড়ালেও কাজ হয় নি। পরে মেসেজ বা কল করে সরাসরি জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। নজরে পড়লে সমস্যার হয়েছে সমাধান। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে এরকম বহু সংবাদ এসেছে।
এবার সে আশায় প্রধানমন্ত্রীর দরবারে হাজির হচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, অধিভুক্ত হওয়ার পরই নানা সমস্যা লেগেই আছে ৭ কলেজে। শিক্ষার্থীরা পড়েছেন সেশনজটে। দাবি আদায়ে বারবার রাস্তায় নামলেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি। সবমিলিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও অনেক পিছিয়ে পড়েছে এ কলেজগুলো। এজন্য অনেকটা ক্ষুদ্ধ এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে চার বছরের সম্মান কোর্স প্রায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করছে সেখানে এ সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রায় দেড় বছর বা তারও বেশি সময় পিছিয়ে থাকছেন। এ ছাড়া পরীক্ষার পর ফল প্রকাশে রয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। দেরিতে পরীক্ষা দিয়েও দীর্ঘ সময়েও ফলাফল পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা।
২০১৪ সালে কবি নজরুল সরকারি কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েছিলেন আবু হানিফ নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আমি ২০১৪ সালে ২০১৪-১৫ সেশনে ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েছিলাম। এখন ২০১৯ সাল। ৫ বছর হয়ে গেছে অথচ আমরা এখনো দ্বিতীয় বর্ষে! ২০১৮ সালের শেষের দিকে আমরা দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছিলাম। দীর্ঘসময় হয়ে গেলেও আমাদের ফলাফল দেয়া হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, আমাদের সহপাঠীরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি শেষ করে বের হয়ে গেছে। অথচ আমরা এখনও দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে আছি। ৩ বছরের কোর্স। কিন্তু ৫ বছরে মাত্র দ্বিতীয় বর্ষে। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আমরা মারাত্মক সেশনজটে পড়েছি।
এছাড়া গত বছরের শেষের দিকে ডিগ্রি ২০১৩-১৪ সেশনের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সেই পরীক্ষার ফলাফলও এখনও প্রকাশিত হয়নি। ২০১৩ সালে ভর্তি হয়ে ৬ বছর হয়ে গেলেও তিন বছরের কোর্স এখনও শেষ হয়নি তাদের। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়েছে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগের ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে।
ঢাকা কলেজের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, আমার মাস্টার্সের সেশন ২০১৬-১৭। কিন্তু এখন ২০১৯ সাল। কিন্তু আমাদের শিক্ষাজীবন কবে শেষ হবে তা এখনও বলতে পারছি না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের অধীনে নেওয়ার পর রাজধানীর সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সময় যেভাবে নষ্ট করা হচ্ছে, এই ক্ষতি কোনভাবেই পূরণীয় নয়। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় বৈষম্যমূলক আচরণ করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ইলিয়াস আরও বলেন, অধিভুক্তির পর থেকে তীব্র সেশনজট, ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতা, ত্রুটিযুক্ত ফল প্রকাশসহ নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে আমাদের। এসব সমস্যার সমাধানে কর্তৃপক্ষ দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
শুধু পুরাতন ব্যাচগুলো যে এসব সমস্যার সম্মুখীন তা নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়ার পর ২০১৭-১৮ সেশনে যারা ভর্তি হয়েছেন তারাও ফলাফল নিয়ে পড়েছেন বিড়ম্বনায়। এ বিষয়ে তিতুমীর কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় আলম বলেন, পরীক্ষা শেষ হয়েছে প্রায় ৭ মাস হয়েছে। কিন্তু এখনও ফলাফল পাইনি। এখন আবার দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষারও সময় এসে গেছে। আমরা এখন অসহায়ের মত আছি। যত দ্রুত সম্ভব এ সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত।
অন্যদিকে গণহারে অকৃতকার্য করানোরও অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। জানা গেছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের রসায়ন পরীক্ষায় ঢাকা কলেজের ৪৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪০ জনই নন প্রমোটেড। যাদের অনেকে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ভালো পরীক্ষা দিয়ে আসলেও আশানুরূপ ফলাফল আসেনি। উল্টো বিভিন্ন পরীক্ষায় অধিকাংশ পরীক্ষার্থীদের ফলাফল খারাপ আসছে। পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করলেও ফলাফল আগেরটাই থাকছে। এ নিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটছে তাদের।
এ বিষয়ে কয়েজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, আমরা ভালো পরীক্ষা দিলেও ফলাফল বিপর্যয় হচ্ছে। এমনিতেই সেশনজটে আমাদের মূল্যবান শিক্ষাজীবন নষ্ট হচ্ছে। তার ওপর আবার ফলাফল বিপর্যয়। সবমিলিয়ে আমরা চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছি।
এসব বিষয়ে বারবার কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি বলে দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা। তাই এবার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনতে চান তারা। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো. মিনহাজ মজুমদার বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত করা হলেও ৭ কলেজের শিক্ষার মান নেমে এসেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েরও নিচে। প্রশাসনের অনিয়ম ও অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে এই সাত কলেজের আড়াই লাখ শিক্ষার্থীর জীবন।
তিনি বলেন, এই ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। নির্দিষ্ট সময়ে পরিক্ষা নেওয়া, ফল প্রকাশ ও নানা যৌক্তিক দাবিতে বারবার রাজপথে নামলেও বিভিন্ন মহল থেকে পেয়েছি শুধুই আশ্বাস। যার বাস্তবায়ন আজও হয়নি। রাস্তায় ঝড়েছে এই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের রক্ত, সিদ্দিকুর রহমান হারিয়েছে চোখ। তবুও সমস্যার সমাধান হয় নি। বিনষ্ট হচ্ছে মূল্যবান শিক্ষাজীবন। তাই এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় শিক্ষাবান্ধব প্রধানমন্ত্রীর নিকট সমস্যা জানানো ও দাবি তুলে ধরা।
মিনহাজ মজুমদার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তিনটি ফোন নম্বর জনসাধারনের জন্য ২৪ ঘন্টা খোলা। যাতে পাঠানো জনসাধারনের মেসেজ তিনি নিয়মিত পড়েন। ইতোমধ্যেই এই নম্বরগুলোতে মেসেজ করে অনেকেই সমাধান পেয়েছেন। তাই আমিও মেসেজ করে প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে জানাবো। প্রধানমন্ত্রী এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। দেশে ফিরলেই তার মোবাইলে মেসেজ করবেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, যদি সাত কলেজের সমস্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে মেসেজ করা হয় তাহলে আমি নিশ্চিত, আমাদের শিক্ষাবান্ধব প্রধানমন্ত্রী, মাদার অফ হিউম্যানিটির চোখে পড়বেই। তিনি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন বলে আমি আশা করছি। এই ভিন্নধর্মী উদ্যোগের সঙ্গে সাত কলেজের অনেক শিক্ষার্থীই তার পাশে রয়েছেন বলে জানান মিনহাজ।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানকে বুধবার (৩ জুলাই) বিকেলে ফোন করলে ওপাশ থেকে বলা হয়, স্যারতো এখন মিটিংয়ে আছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।