জুমবাংলা ডেস্ক: প্রকৃতির আপন নিয়মে সমুদ্রের কিছুটা অগভীর অংশের দিকে বিচরণ করে কৈ কোরালের মতো সমুদ্রের অতিকায় প্রাণী। সুস্বাদু মাছ ‘পাকা’ বা পূর্ণবয়স্ক কৈ কোরাল। তবে ধরা পড়ে কদাচিৎ। এবার জেলেদের ট্রলারে শিকার হয়েছে সাত মণ ওজনের ঢাউস সাইজের একটি কৈ কোরাল।
গতকাল বন্দরনগরী চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত অভিজাত-বনেদী-ধনী লোকদের বাজার হিসেবে খ্যাত কাজীর দেউড়ী কাচা বাজারে মাছের দোকানে কেটে বিক্রি হয় কৈ কোরালটি। কেননা এত বিশাল মাছটির একক কোনো ক্রেতা ছিলেন না। আবার চাহিদাও অনেকেরই। অতিকায় মাছটি বাজারে এসে পৌঁছার সাথে সাথেই অনেকেই কেনার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন। রীতিমতো ভিড় জমে উঠে বাজারে।
এ অবস্থায় আগ্রহী ক্রেতাদের অগ্রিম অর্ডার অনুসারে তালিকা তৈরি করা হয়। কৈ কোরাল মাছের খন্ড প্রতিকেজি বিক্রি হয় ১২শ’ টাকা দরে। প্রায় পৌনে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি হয় পুরো মাছটি। সাধারণত ছোট ও মাঝারি সাইজের কোরাল ও কৈ কোরাল প্রতিকেজি ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। কাজীর দেউড়ী বাজারে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যেই দুয়েক কেজি থেকে চার-পাঁচ কেজি পর্যন্ত সাত মণ ওজনের পুরো কৈ কোরাল মাছটিই বিক্রি করা হয়ে যায়। মাছের মাথার অংশ, হাড়-গোড়ও বাদ যায়নি। বিভিন্ন দামে সেগুলো বিক্রি হয়। সামুদ্রিক বড় জাতের কোরাল মাছ শুধুই সুস্বাদু নয়। স্বাস্থ্যের জন্যও বেশ উপকারী।
কোনো কোন ক্রেতা জানান, তারা কৈ কোরাল কিনে নিয়েছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে আস্বাদ গ্রহণ করবেন। শুধু তাই নয়। এর পাশাপাশি বিদেশে থাকা তাদের আত্মীয়-পরিজনের কাছেও মাছের ভুনা-রান্না কিছুটা পাঠাবেন।
কাজীর দেউড়ী বাজারের হারুনের মাছের দোকানে ইতোপূর্বেও মাঝেমধ্যে বড় সাইজের সামুদ্রিক মাছ বিক্রির জন্য আনা হয়। সচরাচর শীতকালে সমুদ্র শান্ত থাকায় ঢাউস আকারের মাছ ট্রলারের জালে ও বরশিতে ধরা পড়ে। গতকাল বিক্রীত মাছটি ছিল এ বাজারে চলতি মৌসুমের সবচেয়ে বড়। এটি বঙ্গোপসাগরে ট্রলারে শিকার হওয়ার কৈ কোরাল মাছটি গত বৃহস্পতিবার কর্ণফুলী নদীর ৪ নম্বর ঘাটে এসে পৌঁছা একটি ফিশিং ট্রলার থেকে সংগ্রহ করা হয়। সেখানে কত দামে মাছটি কেনা হয় তা জানা যায়নি। মাছটি সংগ্রহের পর ভ্যানযোগে নিয়ে আসা হয় কাজীর দেউড়ী বাজারে।
দোকান কর্মচারীরা জানান, কাটাকুটির আগে ৬ হাজার টাকার বরফ কিনে নিয়ে কৈ কোরাল মাছটি যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করা হয়। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় মাছটি কাটা হয়। কেটে টুকরো টুকরো করে ক্রেতাদের আগে করা তালিকা অনুযায়ী বিক্রি শুরু হয়। গরু কাটাছেড়ায় অভিজ্ঞ কসাইয়ের মতোই বিশাল আকারের মাছ কাটাছেড়ার কাজে অভিজ্ঞ তিন জন ‘মাছের কসাই’ প্রথমেই মাছটির আঁইশসহ মোটা চামড়া ছেড়া-ছাড়ানোর কাজগুলো শেষ করেন।
প্রায় ২৬৪ কেজি ওজনের মাছটির মূল ‘গোশত’র বা মাংশল অংশ কেজি ১২শ’ টাকা ছাড়াও মাছের বিভিন্ন অংশ বিক্রী হয় ভিন্ন ভিন্ন দামে। ঢাউস মাছের মাথা বিক্রি হয় কেজি ৪ থেকে ৫শ’ টাকা দরে। তবে মাছের নাড়িভুঁড়ি, কাঁটা, আঁইশ ও লেজের শেষাংশ ওজনে ধরলে বাদ গেছে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ কেজির মতো। মাছের মাংশল অংশগুলো বেছে নিয়ে তারপর গোশত কাটার মতো কেটে টুকরো টুকরো করা কৈ কোরাল মাছের ‘গোশত’র অংশগুলো বেচাবিক্রী শুরু হয় সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ। তার আগেই তালিকাভূক্ত ক্রেতারা এসে ভিড় জমান। সেখানে শীতের সকালবেলায় তাও ছুটির দিনটিতে গতকাল রীতিমতো উৎসবের আমেজ তৈরি হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।