জুমবাংলা ডেস্ক : মেজর সিনহাকে হত্যা করা হয়েছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী সদস্যরা পৌঁছলে তাদের সঙ্গে ওসি প্রদীপ এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা দুর্ব্যবহার করেন বলে জানিয়েছেন মামলার সাক্ষী সার্জেন্ট মো. আইয়ুব আলী। এরপরই ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতের ঘটনা আদালতের কাছে বিবরণ দিয়েছেন তিনি।
মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার তৃতীয় দফার তৃতীয় দিনে ১২তম সাক্ষী হিসেবে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে তিনি এ সাক্ষ্য দেন।
সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সার্জেন্ট আইয়ুব আলী বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টায় শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পৌঁছে দেখি পুলিশ পুরো ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে। সেখানে ওসি প্রদীপ, নিজাম, মাহমুদ রাজিব, লিয়াকত, নন্দ দুলাল মামুনসহ মোট ১৫ জন ছিলেন। তখন আমি পরিচয় দিয়ে কর্ডন এলাকায় ঢুকি। সেখানে আমি পুলিশ চেকপোস্টে ভেতরে চোখ-মুখ গামছা দিয়ে বাঁধা অবস্থা লম্বাচুলওয়ালা এক ব্যক্তিকে ও ফাঁড়ির সামনে দাঁড়ানো গাড়িতে সেনা পোশাকে এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখি। কাছে গেলে দেখতে পাই তিনি সিনহা মো. রাশেদ খান।
তখন আমি ছবি তুলি। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা আমার পরিচয়পত্র ও মোবাইল কেড়ে নেয়। বিষয়টি আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু কোনো পুলিশ সদস্য কথা বলেনি সেদিন। পরে ওসি প্রদীপ আমাকে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রে যেতে বলেন। আমি সেখানে গেলে ঘণ্টা দুয়েক ভেতরে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ আমাকে। এরপর লে. মুনতাসির আরেফিনসহ দুই পিকআপ সেনাসদস্য বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রে আসেন এবং প্রবেশ করেন।
সঙ্গে আমিও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে প্রবেশ করি। ওই সময় পুলিশ আমাদের সবার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছে। ওসি প্রদীপ লে. মুনতাসীরের উদ্দেশ্যে বলেন, এখান থেকে চলে যান, কাজ শেষ হলে সব জানতে পারবেন। তখন ওসি প্রদীপ কার সঙ্গে ফোনে ফিসফিস করে কথা বলেন আর জানান, স্যার সেনাবাহিনীর লোকের জন্য কাজ করতে পারছি না, তারপর ডিজিএফআই কর্নেল জিএস হাজির হন। একটু পরে আয়াস, নিজামউদ্দিন আসলে ওসি প্রদীপ কিছু আলামত দ্রব্য তাদের দেখান। সাক্ষী হিসেবে কিন্তু সেসব দ্রব্য সংগ্রহ করতে দেখিনি আমি।
বুধবার দ্বাদশ সাক্ষী হিসেবে আদালতকে এমন সাক্ষ্য দিয়েছেন সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই) সদস্য সার্জেন্ট আইয়ূব আলী। এমনটি জানিয়েছেন সিনহা হত্যার বিচার কাজের সঙ্গে জড়িত একাধিক আইনজীবী।
দ্বাদশ সাক্ষী সাক্ষ্যের পরে তাকে জেরা করতে অপারগতা প্রকাশ করেন ওসি প্রদীপের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত। তখন আদালত ওসি প্রদীপের কাছে জানতে চান তিনি কোনো আইনজীবীর সহযোগীতায় সাক্ষীকে জেরা করবেন কিনা। ওসি প্রদীপও সাক্ষীকে জেরা করতে অনীহা প্রকাশ করেন। তবে সার্জেন্ট আইয়ূবকে জেরা করেছেন অন্য ১৪ আসামির আইনজীবীরা।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালেতের সরকারি কৌঁসুলি ফরিদুল আলম বলেন, সার্জেন্ট আইয়ুব ছাড়াও বুধবার কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও মেজর সিনহার মরদেহ ময়নাতদন্তকারী কর্মকর্তা শাহীন আবদুর রহমানের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত।
ডাক্তার শাহীন আবদুর রহমানের জেরা শেষ হলে আদালতে তৃতীয় দফার শেষ দিনের কার্যক্রমের মুলতবি ঘোষণা করা হয়। মামলার পরবর্তী সাক্ষী শুনানির জন্য ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল। এ পর্যন্ত ১৩ জনের সাক্ষী ও জেরা সম্পন্ন করেছেন আদালত। ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে।
এর আগে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে মামলার ১৫ আসামিকে প্রিজনভ্যান করে কড়া পুলিশ পাহারায় আদালতে আনা হয়।
তারা হলেন- বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেব নাথ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।