আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বছর পাঁচেক আগে ‘অভিশপ্ত’ জাহাজ এমভি আমানে যোগ দেন মোহাম্মদ ঈসা। তারিখটি ছিল ২০১৭ সালের ৫ মে।
মিসরীয় উপকূলে চার বছর আটকা থেকে শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) তিনি মুক্তি পেলেন। এরপর সরাসরি নিজ দেশ সিরিয়া চলে যান।-খবর বিবিসির
ভয়েস মেসেজে তিনি বলেন, মনে হয়ে যেন কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছি। পরিবারের সঙ্গে যোগ দিতে যাচ্ছি। তাদের আবার দেখতে পাব।
এর মধ্য দিয়ে তার ওপর দিয়ে যাওয়া অগ্নিপরীক্ষার ইতি ঘটেছে। শারীরিক ও মানসিকভাবেও তিনি ভেঙে পড়েছিলেন।
দীর্ঘদিন তাকে বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন ও সঙ্গী ছাড়া থাকতে হয়েছে।
২০১৭ সালের জুলাইয়ে ঘটনার শুরু। তখন মিসরের আদাবিয়া বন্দরে এমভি আমানকে জব্দ করা হয়। জাহাজটির নিরাপত্তা সামগ্রী ও শ্রেণিভুক্তকরণ সনদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করা হয়।
বিষয়টি খুব সহজেই নিষ্পত্তি করা যেত। কিন্তু জাহাজের লেবাননের ঠিকাদার জ্বালানির মূল্য শোধ করতে পারেননি এবং বাহরাইনের মালিক অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে যান।
জাহাজের মিসরীয় ক্যাপ্টেন ডাঙায় উঠে যান। আর স্থানীয় আদালত নৌযানটির প্রধান কর্মকর্তা মোহাম্মদ ঈসাকে আইনি তত্ত্বাবধায়ক ঘোষণা করে।
সিরিয়ার ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর তার্তুসে জন্মগ্রহণ করেন ঈসা। আদালতের এই আদেশের অর্থ কী, তখন তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
কয়েক মাস জাহাজের অন্যান্য ক্রুরা একেক করে চলে গেলে তিনি বুঝতে পারেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
২০১৮ সালের আগস্টে তিনি মায়ের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। ঈসা বলেন, আমার জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে বলেই মনে করতে শুরু করি।
২০১৯ সালের পর জাহাজটিতে কোনো ডিজেল ছিল না। এতে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে নৌযানটি।
এমভি আমানে অবস্থান করতে তিনি আইনিভাবে বাধ্য ছিলেন। এর বিনিময়ে তাকে কোনো পয়সাও দেওয়া হয়নি। চলে যাওয়ারও সুযোগ ছিল না।
বললেন, রাতের বেলায় জাহাজটিকে কবরের মতো মনে হত। কোনো কিছু শোনা যেত না, দেখা যেত না। মনে হয় যেন একটি কফিন।
২০২০ সালের মার্চে একটি ঝড় জাহাজের নোঙ্গর উড়িয়ে নিয়ে যায়। জাহাজটি পাঁচ মাইল দূরে ভেসে যায় এবং বেলাভূমি থেকে কয়েক মাইল দূরে চড়ায় আটকে পড়ে।
ঈসা তখন খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। এ ঘটনাকে আল্লাহর ইচ্ছা ভেবে মনকে সান্ত্বনা দিতেন। কয়েকদিন পর পর সাঁতরে তীরে যেতেন খাবার নিয়ে আসতে।
এমভি আমানের স্বত্বাধিকারী টেইলস শিপিং অ্যান্ড মেরিন সার্ভিস জানায়, তারা মোহাম্মদ ঈসাকে সহায়তার চেষ্টা করলেও পারেননি। কারণ তাদের হাত বাঁধা।
কোম্পানির এক প্রতিনিধি বলেন, আমরা আদালতকে এই আইনি তত্ত্বাবধায়ক বাতিল করতে জোর করতে পারি না। কিন্তু তার স্থলাভিষিক্ত করার মতো একজন লোকও পাইনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।