রফিক সরকার, গাজীপুর থেকে : গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীর বাইমাইল এলাকার মো. আব্দুস সালাম বিজয় (১৯) গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের চলতি বছরের এইচএসসি দেওয়ার কথা। সে লক্ষ্যে ফরম পূরণও সম্পন্ন করেছেন। বাবা জাহাঙ্গীর আলম পেশায় একজন পোশাক শ্রমিক আর মা বিভিন্ন মেসে রান্না করেন। তাদের পরিবার চলে বাবা আর মায়ের আয়েই। বাবা-মা, দুই ভাই ও এক বোন নিয়ে ৫ সদস্যের পরিবার তাদের। সংসার চালিয়ে ছেলের লেখাপড়া চালানো বিজয়ের বাবার জন্য কঠিন হলেও জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া ছেলের মেধার কথা চিন্তা করে তিনি তা চালিয়ে গেছেন।
সব কিছু ঠিকই ছিল কিন্তু গত বছরের ১৬ ডিসেম্বও হঠাৎ এক অজানা ঝড় তাদের সুখের পরিবারকে তছনছ করে দিয়েছে। ওই কোনাবাড়ীর আমবাড়ী এলাকায় ডেমু ট্রেনের ধাক্কায় মাথায় আঘাত পেয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয় বিজয়। দরিদ্র বিজয়কে হাসপাতালে ভর্তি করার সামর্থ ছিল না তার পরিবারের। কিন্তু কলেজের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের সহায়তায় সাভারের এনাম মেডিকেলে ভর্তি করা (নিউরো সার্জারি ওয়ার্ড, বেড নম্বর : ৪০৬, রোগীর আইডি : ১২১৪) হয় বিজয়কে। সেখানকার চিকিৎসক ব্রেইন, স্পাইন ও স্পাইনাল কর্ড সার্জন বি করিমের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে। বিজয়ের মাথার দু’পাশের হাড় খুলে ফেলে চিকিৎসা দেওয়ার পর প্রায় দেড় মাস চিকিৎসা নিয়ে মোটামুটি সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে। এতে প্রায় সাড়ে ১২ লক্ষ টাকার মত ব্যয় হয়েছে। যা বিজয়ের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীদের মাধ্যমে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগীতা নেওয়া হয়েছে।
বিজয়ের মাথার দু’পাশের হাড়ে পানি জমে যাওয়ায় তাকে আবার গত ৮ এপ্রিল এনাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার মাথার পানি বের করে এবং গত ১৬ এপ্রিল বিজয়ের মাথার হাড় সার্জারি করা হয়। এতে সার্জারি মেডিসিন, আইসিও বাবদ এবং হাসপাতালের ফার্মেসীর বকেয়া বিলসহ প্রায় আড়াই লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু ওই বিল পরিশোধ করতে পারছে না বলে হাসপাতাল থেকে ছাড়াও পাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে কথা হয় বিজয়ের বন্ধু আইয়ুবুর রহমান তৌফিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী নুসরাত কবিরের সাথে। তারা জানায় বর্তমানে দেশে করোনা পরিস্থিতি চলছে। স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা বিজয়ের জন্য সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগীতা নিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে গেছি। কিন্তু বর্তমানে দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা কোথাও গিয়ে ওর জন্য সহযোগীতা চাইতেও পারছেন না। আবার তার দরিদ্র বাবার পক্ষে এই টাকা পরিশোধ করাও সম্ভব হচ্ছে না। তাই তারা সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
বিজয়য়ের বাবা বলেন, বিজয়ের চিকিৎসায় এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে বারো লাখ টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে। আর সবই ওর কলেজের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা সমাজের বিত্তবানদে কাছ থেকে সহযোগীতা নিয়ে তা করেছেন। বর্তমানে বিজয়ের শরীরের অবস্থা কিছুটা ভালো। ডাক্তার বলেছে চাইলেই আমরা বাড়ীতে চলে যেতে পারি। এখন নিয়মীত ঔষধ সেবনেই সে সুস্থ্য হয়ে উঠবে। তাছাড়া প্রতিদিন হাসপাতালের বেড ভাড়া আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভবও নয়। তারচেয়ে ভালো বাড়ী রেখেই চিকিৎসা দেওয়া। কিন্তু হাসপাতালের ভাড়া, ফার্মেসীর বকেয়া বিল পরিশোধ করতে পারছিনা বিধায় হাসপাতাল ছাড়তেও পারছি না। এদিকে প্রতিদিন বেড়েই চলছে হাসপাতালের বিল। এ অবস্থায় আড়াই লাখ টাকার মতো হলে আমরা বিজয়কে নিয়ে বাড়ী ফিরতে পারতাম। যদি সমাজের কোন বিত্তবান এগিয়ে আসেন। চাইলে ০১৯৩২৭০৪৭৭৫ ( বিজয়ের বাবা) নম্বরে বিকাশের মাধ্যমে সহযোগীতা পাঠাতে পারেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।