আদর্শগতভাবে হিযবুত তাহ্রীরের লক্ষ্য বিশ্বজুড়ে ‘ইসলামি খিলাফত’ প্রতিষ্ঠা করা। তারা গণতন্ত্র বিরোধী। হিযবুত তাহ্রীর কুরআন সুন্নাহ’র আলোকে সংবিধান চান তারা। এরকম একটি খসড়া সংবিধানও সংগঠনটির রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের কয়েকটি আরব দেশ, জার্মানি, তুরস্ক, পাকিস্তানে হিযবুত তাহ্রীর নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যেও তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়।
বিভিন্ন দেশে নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে সংগঠনটির বক্তব্য হলো, বিভিন্ন রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিশ্বের কিছু দেশে হিযবুত তাহ্রীর- এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ অনেক দেশে সংগঠনটি বৈধভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে।
বাংলাদেশে ২০০৯ সালের ২২ই অক্টোবর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রেসনোট জারি করে হিযবুত তাহ্রীর নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ওই প্রেসনোটে সংগঠনটিকে ‘শান্তি শৃঙ্খলা এবং জননিরাপত্তার জন্য হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশে জঙ্গী তৎপরতা বিষয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, হিযবুত তাহ্রীরকে যখন নিষিদ্ধ করা হয় তখন তাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ এনেছিল আওয়ামী লীগ সরকার।
“দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাইরে যোগাযোগ মিলিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ এনেছিল এবং তার প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই করা হয়েছিল কি না এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল একটা প্রেসনোটের মাধ্যমে তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে,” বলেন মি. খান।
“কিন্তু তারপরেও আমরা দেখেছি দেশের প্রায় সব অঞ্চলে হিযবুত তাহ্রীরের পোস্টার, লিফলেটিং এবং বিভিন্ন সময় তাদের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা। এমন একটা সময়ে হিযবুত তাহ্রীরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল যখন দেশের ভেতরে অনেক জঙ্গী সংগঠন তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছিল এবং সশস্ত্র আক্রমণের ঘটনাও আমরা দেখেছি।”
৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দুদিন পর ৭ই আগস্টে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে সভা করতে দেখা যায় হিযবুত তাহ্রীরের কর্মীদের।
সাদা কালো কাপড়ে ইসলামের কলেমা লেখা পতাকা, খিলাফতের দাবি সম্বলিত ব্যানার লিফলেট নিয়ে শ’খানে কর্মী সেখানে উপস্থিত ছিল। একই দিনে সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে একটি সভা করে।
এছাড়া সরকার পতনের পর হিযবুত তাহ্রীর ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি পালন করেছে।এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় স্টল দিয়ে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। অগাস্ট মাসে বন্যার সময় ‘ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদ’ শিরোনামে হিজবুতের ব্যানারে ঢাকায় বড় বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা গেছে।
৯ই সেপ্টেম্বর ঢাকার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ডেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে হিযবুত তাহ্রীর। সরকার পতনের পর সৃষ্ট পরিস্থিতিতে প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে হিযবুত তাহ্রীরের।
হিযবুত তাহ্রীর দাবি করছে সরকার পতনের আন্দোলনে তাদের কর্মীরাও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে। সংগঠনের পক্ষে মিডিয়া সমন্বয়ক ইমতিয়াজ সেলিম জানান, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কর্মীরা সংগঠনের ব্যানার ছাড়াই মাঠে ছিল।
“ইনক্লুডিং জেন-জি হিযবুত তাহ্রীর একটা ইন্টেলেকচুয়্যাল এবং পলিটিক্যাল লিডিং ফোর্স। ডেফিনিটলি আমরা মাঠে ছিলাম। কিন্তু এই আন্দোলনটা স্বতস্ফূর্ত যে গণঅভ্যুত্থান এটা কোনোভাবে যাতে কালার না হয় এবং কোনোভাবে যাতে এটাকে কেউ প্রভাবিত করতে না পারে আমরা খুবই সতর্কতার সাথে উইদাউট আওয়ার ব্যানার, আমরা মাঠে ছিলাম।”
তবে কী পরিমাণ কর্মী মাঠে ছিল, হতাহতের সংখ্যা কত সেটি সুনির্দিষ্ট করে বলেনি তারা। এছাড়া বাংলাদেশে সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বে কে আছেন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আগে সেটিও প্রকাশ করতে চায় না হিজবুত তাহ্রীর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।