জুমবাংলা ডেস্ক : চলতি মৌসুমে আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৮০০ কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। গোলাপভোগ, গুটি ও ক্ষিরসাপাত জাতের আম পাকলেও এখনও বাজার পুরোপুরি জমে ওঠেনি।
তবে গত বছর কী পরিমাণ টাকার আম বিক্রি হয়েছে, তার কোনো নিদিষ্ট তথ্য নেই কৃষি বিভাগের কাছে। কৃষি বিপণন শাখার দাবি, গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে ফলন কম হলেও দাম ভালো পেয়ে লাভবান হতে পারবে আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা।
প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে গত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে আমের মুকুল কম আসে। এতে ফলন ও উৎপাদন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। বেশির ভাগ বড় ও মাঝারি গাছে ফলন কম। তবে ছোট গাছের বাগানগুলোতে আমের ফলন ভালো হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন, আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের সুবিধা করতে চলতি মৌসুমেও আমপাড়া বা বাজারজাতকরণে কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করেনি। পরিপক্ব হলেই আম বাজারজাতকরণ করতে পারবেন চাষিরা। এখন বাজার দখল করে আছে গোপালভোগ আম। আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভৌগোলিক পণ্য সুমিষ্ট ক্ষিরসাপাত আমে ভরে উঠতে শুরু করেছে বাজার।
সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের চাঁপাই-মহেশপুর গ্রামের আমচাষি আপন রেজা বলেন, ৭ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আম রয়েছে। এ বছর গাছে মুকুল কম এসেছিল। শুরু থেকেই বাজারে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর বাম্পার ফলন থাকলেও প্রাণঘাতী করোনা সংক্রমণের কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। অনেক কম দামেও বিক্রি করতে না পেরে পঁচে নষ্ট হয়েছে। ফলন কম হলেও এ বছর দামে পুষিয়ে যাবে বলে আশা করছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের পুরাতন বাজারের আম ব্যবসায়ী খোকন আলী জানান, গোপালভোগ জাতের আম বাজারে সবচেয়ে প্রথমে আসে। সেই জাতের আম প্রায় শেষের দিকে। এখন বাজারে বিভিন্ন গুটি ও ক্ষিরসাপাত আম পাওয়া যাচ্ছে। ল্যাংড়া ও লক্ষণভোগ জাতের আম বাজারে আসতে শুরু করেছে।
তিনি আরও জানান, গোপালভোগ জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা মণ দরে। ক্ষিরসাপাত আমের দর মণ প্রতি ৩০০০ থেকে ৩৬০০ টাকা দরে। লক্ষণভোগ ১৮০০-২২০০ টাকা ও ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে মণ প্রতি ২০০০-২৫০০ টাকা দরে। এছাড়া বিভিন্ন গুটি জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকা দরে। ফজলি আম আসতে শুরু করলে বাজার আরও জমে উঠবে বলে জানান তিনি।
কৃষক আব্দুর রাকিব বলেন, অসময়ে অতিবৃষ্টির কারণে চলতি মৌসুমে গাছে ফলন কম। তাছাড়া ফলন কম হওয়ার আরেকটি কারণ রয়েছে। তা হলো এবার অফ ইয়ার (এক বছর পর পর গাছে ফলন কম হয়)। তারপরও এখন পর্যন্ত আমের দাম কৃষকদের অনুকূলেই রয়েছে। বেশির ভাগ আম শিবগঞ্জের কানসাট বাজারে বিক্রি করি। সেখান থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা আম কিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠায়।
পাইকারী ব্যবসায়ী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে আম পাঠানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম কুরিয়ার সার্ভিস। ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ১২-১৩টি কুরিয়ার সার্ভিসে আম পরিবহন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে। অনলাইনে অর্ডার নিয়ে ব্যবসায়ীরা এসব কুরিয়ারে আম পরিবহন করে।
অনলাইনে অর্ডার নিয়ে আম পাঠান শরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, ইতোমধ্যেই ৮ চালানে প্রায় ১৭ মণ গোপালভোগ ও ক্ষিরসাপাত আম ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়েছি। আর এক সপ্তাহ পর থেকে চলতি মৌসুমের বাজার জমে উঠবে। আমি প্রত্যেক বছর আমের মৌসুমে এই ব্যবসা করি। আমার মতো অনেক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তরুণ উদ্যোক্তারা এই কাজ করে থাকে।
সওদাগর কুরিয়ার সার্ভিস চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক সাখাওয়াত জামিল দোলন বলেন, বিভিন্ন মাধ্যম ছাড়াও শুধুমাত্র কুরিয়ার সার্ভিসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে দৈনিক কয়েক কোটি টাকার আম সারাদেশে যায়। কম সময় ও সহজলভ্য হওয়ায় অনলাইনে অর্ডার ছাড়াও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আম পাঠানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান মাধ্যম হলো কুরিয়ার সার্ভিস।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. ইউসুফ জানান, জানুয়ারির শেষ ও ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে আমের গাছে মুকুল বের হয়। সে সময় গাছে সেচের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বৃষ্টির কারণে গাছে সেচ ও আবহাওয়া শীতল হয়ে যাওয়ায় মুকুল না বের হয়ে কচি পাতা বের হয়।
যে আমগুলো গাছে রয়েছে, তা বৃষ্টির আগেই মুকুল ফুটেছিল। অফ ইয়ার বা অন ইয়ারও এ বছর আমের ফলন কম হওয়ার অন্যতম কারণ। গত বছর ব্যাপক পরিমাণে ফলন হয়েছিল। সে সময় ৯৫ শতাংশ গাছে মুকুল আসলেও, চলতি বছর ৫০-৫৫ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে আম পাড়ার কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। আম পাকলেই চাষিরা বাজারজাত করতে পারবেন।
মহানবীকে কটূক্তি, ৩ খানের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন নাসিরুদ্দিন শাহের
এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। প্রায় ৫৫-৬০ লাখ গাছে চলতি মৌসুমে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। ৫০-৫৫ টাকা কেজি দরে প্রায় ১৮০০ কোটি টাকা আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।
প্রসঙ্গত, গত বছর জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আড়াই লাখ মেট্রিক টন এবং তার আগের বছর ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।