স্পোর্টস ডেস্ক : মেহেদি হাসান মিরাজকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে টপ-এজ হয়ে ফিরলেন রেজিস চাকাভা। বাংলাদেশের পথের কাঁটাকে উপড়ে ফেললেও আনন্দের জোয়ারে ভাসার সুযোগ ছিল না তামিম ইকবালের দল। বাংলাদেশের পরিকল্পনাহীন বোলিংয়ের সুযোগ লুফে নিয়ে দারুণ সব শটের ফুলঝুড়িতে সেঞ্চুরি তুলে নেন চাকাভা এবং সিকান্দার রাজা। ১০২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরার আগে রাজার সঙ্গে ২০১ রানের জুটি গড়েন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক।
সেঞ্চুরির পর চাকাভা ফিরলেও প্রথম ওয়ানডের মতো এদিনও জিম্বাবুয়ের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন রাজা। অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের অপরাজিত ১১৭ রানের ইনিংসের ওপর ভর করে ৫ উইকেটের জয়ে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে জিম্বাবুয়ে। ফলে ২০১৩ সালের পর প্রথমবার বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতল স্বাগতিকরা। এদিকে ওয়ানডে সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলে রীতিমতো রাজত্ব করছে বাংলাদেশ। দুইয়ে থাকা তামিমের দলকে সিরিজ হারিয়ে মাটিতে নামাল জিম্বাবুয়ে।
হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে জয়ের জন্য ২৯১ রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। হাসান মাহমুদের অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তাকুওয়াদনাশে কাইতানো। ডানহাতি এই ব্যাটার আউট হয়েছেন শূন্য রানে।
নিজের দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে ইনোসেন্ট কাইয়াকে ফেরালেন হাসান। ডানহাতি এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের গুড লেংথ ডেলিভারিতে উইকেটকিপার মুশফিকের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান কাইয়া। ডানহাতি এই ব্যাটার এদিন ফিরেছেন মাত্র ৭ রানে।
হাসানের পর বল হাতে জিম্বাবুয়ের শিবিরে আঘাত হেনেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ডানহাতি এই অফ স্পিনারের বলে সুইপ করতে গিয়ে বলের লাইন মিস করেন ওয়েসলে মাধেভেরে। ফলে বল সরাসরি মাধেভেরের প্যাডে আঘাত হানে। জোরালো আবেদনে আউট দেন আম্পায়ার। ১৬ বলে মাত্র ২ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন মাধেভেরে। ফলে পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩০ রান তোলে জিম্বাবুয়ে।
মাধেভেরে ফেরার পর সিকান্দার রাজাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন তাদিওয়ানাশে মারুমানি। তবে সেই জুটি খুব বেশি বড় হতে দেননি তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনারের বল অনসাইডে খেলতে গিয়ে শর্ট কভারে ক্যাচ দেন মারুমানি। ড্রাইভ দিয়ে মিরাজ দারুণভাবে ক্যাচ নিলে ২৫ রানে ফিরতে হয় বাঁহাতি এই ওপেনারকে।
মারুমানি ফেরার পর দারুণ এক জুটি গড়েন রাজা ও চেজিস চাকাভা। দারুণ ব্যাটিংয়ে তারা দুজনে মিলে জিম্বাবুয়েকে পথ দেখাচ্ছেন। চাকাভার সঙ্গে জুটি গড়দে ড়িয়ে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন রাজা। মিরাজের বলে এক্সট্রা কভার দিয়ে ছক্কা মেরে ৬৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ডানহাতি এই ব্যাটার। যদিও ৪২ রানেই ফিরতে পারতেন রাজা। দ্রুত রান নিতে গিয়ে রান আউট হতে বসেছিলেন রাজা। তবে মিরাজের ব্যর্থতায় জীবন পান তিনি। ডানহাতে বল রেখে বাম হাত দিয়ে স্টাম্প ভাঙায় আউট হননি রাজা।
৩৮ ওভারে দলের রান দুইশ পেরোনার পর চাকাভা ও রাজা মিলে পঞ্চম উইকেটে গড়েছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে সেরা জুটি। গত বছর ওয়েলিংটনে ডেভন কনওয়ে এবং ড্যারিল মিচেল মিলে গড়েছিলেন ১৫৯ রানের জুটি। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তারা দুজনে ছাড়িয়ে গেছেন কনওয়ে এবং মিচেলের জুটি। সেই সঙ্গে দারুণ ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন রাজা।
হাসানের বলে লেগ সাইডে ঠেলে দিয়ে ২ রান নিয়ে ১১৫ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ডানহাতি এই ব্যাটার। প্রথম ওয়ানডেতেও অপরাজিত ১৩৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন রাজা। অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের পর সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন চাকাভাও। হাসানের বলে ছক্কা মের ৭৩ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন জিম্বাবুয়ের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। সেঞ্চুরির পরই অবশ্য আউট হয়েছেন চাকাভা।
মিরাজের টসড আপ ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারতে গিয়ে তামিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৭৫ বলে ১০২ রান করা ডানহাতি এই ব্যাটার। চাকাভার বিদায়ে ভাঙে রাজার সঙ্গে ২০১ রানের অনবদ্য জুটি। শেষ দিকে টনি মনিয়ঙ্গাকে সঙ্গে নিয়ে জিম্বাবুয়ের জয় নিশ্চিত করেন রাজা। ১৬ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলে মনিয়ঙ্গা এবং ১২৭ বলে ১১৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন রাজা।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। নিয়মিত ওপেনার লিটন দাস ইনজুরির কারণে না থাকায় নিয়মিত ওপেনার তামিম ইকবালের সঙ্গে মাঠে নামেন এনামুল হক বিজয়। আগের ম্যাচে তামিমের খেলা ডট বলগুলো বাংলাদেশের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই ম্যাচে তাই শুরু থেকেই বাড়তি সতর্ক হতে দেখা যায় তামিমকে। ম্যাচের প্রথম ওভারে ব্র্যাড ইভান্সকে দুটি চার মেরে শুরু করেন তিনি।
পরের ওভারে ভিক্টর এনাউচিকে আরও একটি চার মারেন তামিম। বাঁহাতি এই ওপেনার নিজেকে আরও মেলে ধরেন ইভান্সের তৃতীয় ওভারে। সেই ওভারে তাকে দুটি চার ও শেষ বলে একটি ছক্কাও হাঁকান। ইনিংসের নবম ওভারেই বাংলাদেশের দলীয় হাফ সেঞ্চুরি পূরণ হয়। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ভিক্টর এনাউচিকে ফ্লিক করে চার মেরে ৪৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম। এরপর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি।
ব্যক্তিগত ৫০ রানেই তানাকা চিভাঙ্গাকে পুল করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে কাইতানোর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন বাঁহাতি এই ওপেনার। অপরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তামিমকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন বিজয়। কিন্তু ২৫ বলে ২০ রান করে অদ্ভুতভাবে রানআউটের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় তাকে। তানাকা চিঁবাঙ্গার বলে সামনের দিকে খেলেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু বলটি চিঁবাঙ্গার হাতে লেগে অপরপ্রান্তের স্টাম্পে আঘাত করে।
নন স্ট্রাইকে দাগ থেকে কিছুটা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বিজয় কিছু বুঝে উঠার আগে, খানিকটা অসাবধানতায় রানআউট হয়ে বিদায় নেন। চটজলদি দুই উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে টাইগাররা। তখন আস্তে আস্তে রান বাড়াচ্ছিলেন শান্ত এবং মুশফিকুর রহিম। যদিও বেশীক্ষণ রানের চাকা সচল রাখতে পারেনি এই জুটি। দলীয় ১২৭ রানে ফিরে যান আগের ম্যাচের আরেক হাফ সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম।
মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নিয়েছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। ফেরার আগে ৩১ বলে একটি চারের সাহায্যে ২৫ রান করেন তিনি। নিজের দ্বিতীয় ওভারে মুশফিকের উইকেটটি নেন ওয়েসলি মাধভেরে। মুশফিক ফেরার কয়েক ওভার পর বিদায় নেন শান্তও। মাধভেরের দ্বিতীয় শিকার হয়ে বিদায় নেয়ার আগে ৫৫ বলে ৩৮ রান করেন লিটনের পরিবর্তে একাদশে খেলতে নামা এই ব্যাটার। ইনিংসে ছিল পাঁচটি চারের মার।
দলীয় ১৪৮ রানে নিজেদের চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর ৮১ রানের জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং আফিফ হোসেন। এই জুটিতে আফিফ রান বলের ভারসাম্য ঠিকমতো রাখলেও শুরুর ভাগে চরমভাবেই ব্যর্থ হন মাহমুদউল্লাহ। ৪১ বলে ৪১ রান করে সিকান্দার রাজার বলে ফিরে যান আফিফ। শর্ট থার্ডম্যান অঞ্চলে তার ক্যাচটি ধরেন চিভাঙ্গা। তারপর চটজলদি ১২ বলে ১৫ রান করে সিকান্দারের বলে লেগ বিফোর উইকেটের শিকার হয়ে ফিরে যান মেহেদী হাসান মিরাজ।
মিরাজ ফিরে গেলে কাঙ্খিত হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান মাহমুদউল্লাহ। ৬৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি। এ সময়ে তার স্ট্রাইক রেট ছিল ৭৩.৯১। শেষদিকে অবশ্য ভিন্ন ভিন্ন ওভারে তিনটি ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহ এনে দেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ পর্যন্ত ৮৪ বলে ৮০ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ২৯০ রান। জিম্বাবুয়ের হয়ে ৫৬ রান খরচায় তিন উইকেট নেন রাজা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ- ২৯০/৯ (৫০ ওভার) (মাহমুদউল্লাহ ৮০*, তামিম ৫০, আফিফ ৪১, শান্ত ৩৮; সিকান্দার ৩/৫৬)।
জিম্বাবুয়ে- ২৯১/৫ (৪৭.৩ ওভার) (কাইয়া ৭, মারুমানি ২৫, রাজা ১১৭*, চাকাভা ১০২, মনিয়ঙ্গা ৩০*; হাসান ২/৪৭, মিরাজ ২/৫০)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।