জুমবাংলা ডেস্ক : বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর এক সপ্তাহের মধ্যেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। কিছু দিনের মধ্যে গ্যাসের এই দাম ঘোষণা করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এবারও দাম বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে সরবরাহ বাড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হবে। একই আশ্বাস দিয়ে গত জুনে দাম ২২.৭৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। বিতরণ কম্পানিগুলোর চাপে সাত মাসের ব্যবধানে আবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এবার আবাসিক ও পরিবহন খাত বাদ দিয়ে বাকি সব খাতেই বাড়ানো হচ্ছে গ্যাসের দাম। বিশেষ করে শিল্প গ্যাসের দাম বাড়লে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। পরোক্ষভাবে তা ভোক্তার ওপর এসে পড়বে। কারণ উৎপাদন ব্যয় বাড়লে পণ্যের দামও বাড়বে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পেলে তার গেজেট প্রকাশ করা হবে। এবার সরকার বিশেষ করে শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। গ্যাসের দাম কত বাড়বে তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয়নি। তবে খাতভেদে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলেও জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির মতো গ্যাসের মূল্যও সরকারি নির্বাহী আদেশেই ঘোষণা করা হবে। আগে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এটা করত।
জানতে চাইলে বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।’
বর্তমানে দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা দৈনিক তিন হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তার মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার পেট্রোবাংলা সরবরাহ করেছে দুই হাজার ৬০৩ মিলিয়ন ঘনফুট। এখন দৈনিক ঘাটতি হচ্ছে প্রায় এক হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিল্প ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। আগামী মার্চ-এপ্রিলে গ্যাসের চাহিদা আরো বাড়বে। চাহিদা পূরণ করতে সরকারকে বাড়তি দাম দিয়ে স্পট মার্কেট (খোলাবাজার) থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে হবে। এতে বিপুল পরিমাণ টাকা লাগবে। ভর্তুকি কমাতে সেই টাকার একটা অংশ উঠানো হবে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে।
এর আগে গ্যাসের সংকটের সময় শিল্পোদ্যোক্তারা বাড়তি দাম দিয়ে হলেও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। গত বছরের জুনেও সরবরাহ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববাজারে (বিশেষ করে স্পট মার্কেট) এলএনজির দাম বাড়ার কারণে জুলাই মাস থেকে আমদানি বন্ধ করে সরকার। এতে গ্যাসের চাপ কম থাকায় শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আবাসিক পর্যায়েও সারা দেশে গ্যাসের সংকট আছে।
জ্বালানি বিভাগের সচিব মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান মজুমদার বলেন, এখন স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম কিছুটা নিম্নমুখী। এটা একটা ভালো খবর। মার্চ-এপ্রিলের দিকে যাতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো যায়, সেই ভাবনা সামনে রেখে জ্বালানি বিভাগ কাজ করছে। গ্যাসের মূল্য সমন্বয় নিয়েও সরকার ভাবছে।
শিল্পোদ্যোক্তা এনস্টার গ্রুপ ও নুসাইবা টেক্সটাইল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, দাম বাড়ানোর আগে সরকারকে শতভাগ গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ সরবরাহ নিশ্চিত হলে উৎপাদন ঠিক রাখা যাবে। দাম বাড়িয়ে যদি সরবরাহ বাড়ানো না হয় তাহলে বিশাল ক্ষতির মুখে পড়বে শিল্প খাত।
সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সরকারের ভর্তুকি কমানোর কাজে লাগতে পারে, কিন্তু এর মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহে ইতিবাচক অগ্রগতি হওয়ার সুযোগ কম। তিনি বলেন, গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর জন্য অনুসন্ধান ও ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ দরকার, কিন্তু তা দেখা যায় না। গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য সরকারের হাতে গ্যাস উন্নয়ন ফান্ড রয়েছে, সেটি যাতে অনুসন্ধানে ব্যবহার করা হয়। এগুলো না করে শুধু দাম বাড়ালে ভোক্তাকে বাড়তি ব্যয়ের চাপে ফেলা হবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরূল ইমাম মনে করেন, এই মুহূর্তে গ্যাসের দাম বাড়ানো ঠিক হবে না। কারণ জীবনযাত্রার ব্যয়ের এত চাপ মানুষ নিতে পারবে না। তিনি বলেন, দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর না দিয়ে এলএনজি আমদানিনির্ভরতার কারণেই আজ জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বেড়েছে। সেই ভর্তুকির ভার এখন ভোক্তার ঘাড়ে পড়ছে। যদিও এখন সরকার গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দিচ্ছে, স্থলভাগে অনুসন্ধানে বেশ কিছু সফলতাও আসছে। এই উদ্যোগগুলো আরো আগে নিতে পারলে ভালো হতো। তিনি এখনই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সাগরে অনুসন্ধান চালানোর পরামর্শ দেন।
বিতরণ মাসুল পাঁচ গুণ বাড়াতে চায় তিতাস : গ্যাস বিতরণ কম্পানি তিতাস বিতরণ চার্জ প্রায় পাঁচ গুণ বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটারে ৬৪ পয়সা করতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে আবেদন করেছে। বর্তমানে তিতাসের বিতরণ মাসুল প্রতি ঘনমিটারে ১৩ পয়সা। তিতাস বলছে, কেটে রাখা উৎস করের চেয়ে বিতরণ মাসুল কম হওয়ায় তাদের আর্থিক সামর্থ্য কমছে; যদিও গ্যাস বিক্রি করে লাভ করছে তিতাস।
এ ধরনের আবেদন আগে বিইআরসিতে করত গ্যাস বিতরণ কম্পানিগুলো। এখন আইন সংশোধন করার কারণে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে তারা। সূত্র : কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।