জুমবাংলা ডেস্ক : লিচুর জন্য বিখ্যাত নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা। গুরুদাসপুরের নাজির এলাকায় প্রচুর পরিমাণে মোজাফ্ফর জাতের লিচু চাষ হয়। আগাম এ জাতের লিচু বাজারেও উঠতে শুরু করেছে। চাষিরা জানান, দীর্ঘ খরতাপ ও অনাবৃষ্টির কারণে লিচু বাগানগুলোতে মুকুলের প্রায় অর্ধেক ঝরে গেছে।
তাপদাহে লিচু আকার ছোট ও তাপে পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা। তবে গত সপ্তাহে শিলা ও দুর্যোগবিহীন স্বাভাবিক বৃষ্টির ফলে লিচু চাষিদের ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটাই কেটেছে। দুর্যোগবিহীন বৃষ্টি লিচুর জন্য উপকারী হয়েছে বলে লিচু চাষিদের অভিমত। তাই লিচু চাষিদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। দেশজুড়ে আগাম মোজাফফর জাতের লিচুর জন্য সুনাম ও খ্যাতি রয়েছে এই গুরুদাসপুর উপজেলার। আগাম জাতের মোজাফফর লিচু যেমন লাল টসটসে, তেমনি সুস্বাদু। বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক।
উপজেলার বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে দেখা গেছে, নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর, মাহমুদপুর, মোল্লাবাজার, হামলাইকোল, বিয়াঘাট, চন্দ্রপুর, কুমারখালিসহ বিভিন্ন গ্রামের বাগানের গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে লিচু। লিচু রক্ষায় চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরই মধ্যে কিছু লিচু বাজারজাত করা হচ্ছে।
যদিও জেলা প্রশাসন আগামী ২৫ মে থেকে লিচু বাজারে তোলার সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। নাটোর শহরসহ জেলার প্রায় সব জায়গাতেই স্থানীয় জাতের লিচু বাজারে উঠেছে। তবে লিচুগুলো পরিপুষ্ঠ না হওয়ায় স্বাদে টক। বাজারে ১০০ লিচু ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার লিচু চাষি জামাল, রেজাসহ অনেকেই জানান, লিচু বাগান কয়েকবার বিক্রি হয়। গত দুই বছর করোনা আর এবছর প্রচণ্ড খরতাপ ও অনাবৃষ্টির প্রভাব পড়েছে লিচু বাগানে। বেপারিরা এলেও বাগান দেখে দাম বলার সাহস পাচ্ছেন না।
বর্তমানে দুই লাখ টাকার বাগান ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় দর কষাকষি চলছে। তবে গত সপ্তাহে স্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ায় সতেজ হয়ে উঠেছে লিচুর গুটি। খরা ও অনাবৃষ্টিতে মুকুল এবং গুটির ক্ষতি হলেও স্বস্তির বৃষ্টিতে এখন অনেকটাই পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা। নাজির ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, এবছর লিচুর তেমন দাম নেই।
বাজারে ১০০ লিচু ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় খুচরা বিক্রি হচ্ছে। তবে ২৫ মে মাসের পরে লিচুর আড়তগুলোতে লিচু আসবে। তখন ধারণা করা যাবে লিচুর প্রকৃত দাম কেমন হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাহমুদুল ফারুক জানান, এখনো লিচু পরিপুষ্ঠ হয়নি। সে কারণে লিচুর স্বাদে তারতম্য হচ্ছে। এ কারণে এক সপ্তাহ পরেও লিচু বাজারজাত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলায় ৪১০ হেক্টর জমিতে ২৫০টি লিচু বাগান রয়েছে। প্রতিটি বাগানে লিচুর ভালো মুকুল এসেছিল। কিন্তু অনাবৃষ্টির কারণে অর্ধেকের মতো মুকুল ঝরে পড়েছে। তাই লিচুর গুটি কম দেখা যাচ্ছে। ফলে এবার ফলন কম হতে পারে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ বলেন, মাঠ পর্যায়ে লিচু বাগান পরিদর্শন করে দীর্ঘ অনাবৃষ্টি ও খরা মোকাবেলায় চাষিদের বাগানে সেচ দেওয়াসহ সকল পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহের বৃষ্টি লিচুর জন্য বেশ উপকারী হয়েছে। এবার উপজেলায় ৩ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
অপরদিকে নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাহমুদুল ফারুক জানান, বাজারে আসা লিচু খাবার উপযোগী হলেও আরও রসালো হতে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তাই বাগান মালিকদের বাজারে আরও এক সপ্তাহ পর লিচু সরবরাহের পরামর্শ দেন তিনি। চলতি বছর নাটোর জেলায় ৯৮৩ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদন হবে ৮ হাজার ৮১৫ মেট্রিক টন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।