ধর্ম ডেস্ক : মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়। তবে এ জোড়া মিলিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব মানুষের। নর-নারীর মধ্যে এ জোড় বাঁধার উপায় হিসেবে আল্লাহ দিয়েছেন বিয়ের বিধান। বিয়ের জন্য দরকার পড়ে সঠিক পাত্র-পাত্রী নির্বাচন। এ ব্যাপারে ইসলাম সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ বিষয়টি পরিষ্কার ভাষায় জানিয়েছেন। তিনি আত্মীয়তা স্থাপনের ক্ষেত্রে ধার্মিকতা ও চারিত্রিক বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন তোমাদের কাছে আত্মীয়তার প্রস্তাব আসে আর তাদের চারিত্রিক এবং ধর্মীয় বিষয়টি সন্তোষজনক হয়, তাহলে সে প্রস্তাব গ্রহণ করবে। যদি তা না করো তাহলে ফেতনার সৃষ্টি হবে।’ (তিরমিজি : ১/২০৭)। অন্য আরেকটি বর্ণনায় আছে, ‘চার কারণে কোনো মেয়েকে বিয়ে করা যায়। সম্পদ, বংশ-খান্দান, রূপ ও ধার্মিকতা। তার মধ্যে ধার্মিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে দাম্পত্য জীবন সফল করে তোলে।’ (তিরমিজি : ১/২০৭)
বিয়ের ক্ষেত্রে নারীর রূপ-সৌন্দর্য এবং স্বভাব মোতাবেক অন্য কোনো গুণকেও পাত্রী নির্বাচনের মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। এদিকে ইঙ্গিত করে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যেসব নারী তোমাদের পছন্দ হয় তাদের বিয়ে করো।’ তবে ভালো হয়, ছেলে এবং মেয়ের দীনদারী ও চারিত্রিক বিষয়টাকেই মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ করলে। আল্লামা কাসানি (রহ.) লিখেছেন, ‘আমাদের দৃষ্টিতে শুধু দীনদারীকে মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ করাটাই উত্তম।’ (বাদায়েউস সানায়ে : ২/৩১৭)। তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণিত কোনো কোনো হাদিসে স্বামী-স্ত্রীর সমতার বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফকিগণ স্বামী-স্ত্রীর সমতার ক্ষেত্রে নয়টি বিষয় বিবেচনায় রাখার কথা বলেছেন। যথা—বংশ-খান্দান, স্বাধীন ও দাস, খানদানি মুসলমান ও নওমুসলিম, দীনদারী ও তাকওয়া, সম্পদ ও অর্থনৈতিক অবস্থান, আভিজাত্য, পেশা, শারীরিক সুস্থতা এবং বিবেক বুদ্ধি। তবে প্রকৃত সত্য হলো, দীনদারী এবং চারিত্রিক বিষয়টিই মূলত সবিশেষ লক্ষণীয়।
বংশ-খান্দানের বিচারে বাড়াবাড়ি করা ইসলামের সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ পরিপন্থি। রাসুলুল্লাহ (সা.) পরিষ্কার বলেছেন, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তোমাদের মূর্খকালের মন্দ স্বভাব ও তার অহংকার থেকে মুক্ত করেছেন। মানুষ হয়তো মুমিন মুত্তাকি হবে, অথবা হবে পাপী দুর্ভাগা।’ (আবু দাউদ)। রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরাম (রা.) তাদের নিজ নিজ আমল দ্বারা এ ক্ষেত্রে সুন্দর উপমা স্থাপন করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার চাচাতো বোন জায়নাব (রা.)-কে নিজের গোলাম জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.)-এর কাছে বিয়ে দিয়েছেন। (বাইহাকি : ১/১৩৪)। এই জায়েদ (রা.)-এর ছেলে উসামা (রা.)-এর কাছে বিয়ে দিয়েছেন কোরাইশী কন্যা ফাতিমা বিনতে কায়েস (রা.)-কে। জাবায়াহ বিনতে জুহাইর ইবনে আবদুল মুত্তালিবকে বিয়ে দিয়েছেন মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ (রা.)-এর কাছে। অতঃপর ইরশাদ করেছেন, ‘(আমি মিকদাদ ও জায়েদের বিয়ে এ কারণে এভাবে দিলাম) যেন তোমাদের মধ্যে চরিত্রে যারা উত্তম তারাই আল্লাহর কাছে মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়।’ (বাইহাকি : ৭/১৩৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামের আলোকময় জীবনে এ জাতীয় উপমা প্রচুর। তাই বিয়েশাদিতে লক্ষণীয় বিষয় হওয়া উচিত, আবাস-নিবাস, অর্থ-সম্পদ, দীনদারী এবং আখলাক চরিত্র। তবে মানুষের স্বভাবগত বৈচিত্র্যের বিবেচনায় খানদান পেশা অর্থনৈতিক অবস্থান এবং ইসলাম গ্রহণে আগ-পরের বিষয়গুলোও বিবেচনায় রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।