জুমবাংলা ডেস্ক : আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পবিত্র ঈদুল আজহায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা বিভিন্ন ধরনের পশু কোরবানি করে থাকেন। এক্ষেত্রে আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি কোরবানি হয় গরু। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় কৃত্রিম উপায়ে স্টেরয়েড জাতীয় হরমোন প্রয়োগ করে গরু মোটাতাজা করার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরু চেনার উপায় জানিয়েছেন।
অধ্যাপক বলেন, ডেক্সামেথাসন, ওরাডেক্সন, প্রেডনিসোলন জাতীয় ওষুধ সেবন করিয়ে অথবা ডেকাসন, ওরাডেক্সন স্টেরয়েড জাতীয় ইনজেকশন দিয়ে গরুকে মোটাতাজা করা হয়। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের হরমোন যেমন ট্রেনবোলন, প্রোজেস্টিন, টেস্টোস্টেরন প্রয়োগ করেও গরুকে মোটাতাজা করা হয়।
কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা অসুস্থ গরুর মাংস খেলে মানুষের শরীরে পানি জমে যাওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, মূত্রনালি ও যকৃতের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কোরবানির হাটে গেলে কীভাবে এসব গরু সহজেই চিহ্নিত করা যাবে সে ব্যাপারে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু ঘন ঘন শ্বাস নিবে। একটু হাঁটলেই হাঁপিয়ে যাবে। সর্বদা ক্লান্ত দেখাবে। গরুর দেহ থলথলে থাকবে এবং দেহে পানির পরিমাণ বেশি বোঝা যাবে। গরুর গায়ে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ওই স্থানের মাংস দেবে যাবে এবং আগের অবস্থায় ফিরে আসতে অনেক সময় লাগবে।
তিনি বলেন, গরুর দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি থাকবে। কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু খাবার খেতে চাইবে না বরং ক্ষুধামন্দার লক্ষণ দেখা দিবে। নিয়মিত জাবর কাটবে না। অসুস্থ গরুর মুখ থেকে অতিরিক্ত লালা পড়তে থাকে এবং এই লালা ফেনাযুক্তও হতে পারে অথবা ফেনা ছাড়াও হতে পারে। ইনজেকশন দেয়ায় গরুর রানের মাংস স্বাভাবিক গরুর রানের মাংসের চেয়ে অনেক নরম থাকে। অসুস্থ গরুর নাকের উপরের অংশ বা মাজেল শুষ্ক থাকবে। বেশি পানি জমার কারণে গরু সহজে হাঁটতে চায় না এবং এক জায়গায় বসে থাকে। কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরুর হাড় খুবই নরম থাকবে। কোনো কারণে যদি দুর্ঘটনাবশত গরুটি পড়ে যায়, তাহলে তার হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কোরবানির হাট থেকে সুস্থ গরুর কেনার উপায় সম্পর্কে এ অধ্যাপক বলেন, সুস্থ গরুর গায়ের রঙ চকচকে থাকবে, কুঁজ মোটা থাকবে, চামড়া টানটান থাকবে, চামড়ায় কোন দাগ থাকবে না এবং গরুর গায়ে স্পর্শ করা হলে সে স্থানে প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে। সুস্থ গরুর নাকের ওপরের অংশ ভেজা বা বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা থাকবে। সুস্থ গরুর দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে।
তবে সুস্থ গরুর ক্ষেত্রেও যখন অনেক দূর থেকে হাঁটিয়ে হাটে নিয়ে আসা হয় তখন শরীরের তাপমাত্রা বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু তা এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। খাবার দেখলেই খাওয়ার আগ্রহ দেখাবে। নিয়মিত জাবর কাটবে। গরুর মুখে কম লালা বা ফেনা থাকবে।
এসব লক্ষণ খুঁজে পেতে দিনের আলো থাকতে থাকতেই গরু কিনে নিতে চেষ্টা করতে বলেছেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। কেননা রাতের বেলায় এসব লক্ষণ সহজে পরখ করা সম্ভব হয় না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।