জুমবাংলা ডেস্ক : নিরাপত্তার স্বার্থে কোটা আন্দোলনের যে পাঁচ সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে রাখা হয়েছে তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে পরিবারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
রবিবার (২৮ জুলাই) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অনুরোধ জানান। গত শুক্রবার কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। গত সন্ধ্যায় আরো দুই সমন্বয়ককে নিয়ে আসা হয় ডিবি কার্যালয়ে।
এ বিষয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন লাগিয়েছে, এসব দুর্বৃত্তদের, জামায়াত-শিবির চক্রকে ধরার দায়িত্ব আমাদের কাছে।’
তিনি বলেন, ‘কেউ যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং তারা যদি বিভিন্ন জায়গায় বলে তাদের সঙ্গে যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হতে পারে, এটা জানার পর আমাদের নৈতিক দায়িত্ব তাদের নিরাপদে নিয়ে আসা। প্রশ্ন আসতে পারে শুধু তাদের ক্ষেত্রে কেন নিরাপত্তার বিষয়। মনে রাখতে হবে এই লোকগুলোকে কেন্দ্র করে অর্থাৎ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঘিরেই কিন্তু একটি অসাধু চক্র জামায়াত-বিএনপি এই সুযোগে অনুপ্রবেশ করে একটা গণতান্ত্রিক সরকারকে পতন ঘটাতে চেয়েছিল।
এই চক্র রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী আগুন লাগাতে চেয়েছিল। সেই কারণে আমি মনে করি, এই চক্র যদি আবার শিক্ষার্থীদের কোনো কিছু করে আন্দোলনের কিছু করতে চায়, সেজন্য নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে নিয়েছি।’
কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে কত দিন রাখা হবে জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা সমন্বয়কদের সঙ্গে কথা বলব এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলব।’
নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি সমন্বয়কদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘যেহেতু তারা নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের কাছে তারপরেও তাদের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে কথা-বার্তা হচ্ছে।
আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সুন্দর একটা আন্দোলন ছিল, এই আন্দোলনের সময় তাদের সঙ্গে কারা কারা যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। কারা কারা তাদের উস্কানি দিয়েছিল। আমরা তাদের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চেয়েছি। তারা কিছু নাম নম্বর আমাদের দিয়েছে।’
গুজব ছড়াচ্ছে ডিবিতে সমন্বয়কদের মারধর করা হয়েছে, এমন প্রশ্ন করা হলে হারুন বলেন, ‘যারা ফেসবুকে লেখালেখি করে তারা অনেকের নাম-নম্বর ধরে বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছে।
আমি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছি, এই গুজবও ছড়িয়েছে। আমাদের রাষ্ট্রের অনেক ব্যক্তির নামেও কিন্তু অনেক গুজব ছড়িয়েছে। তাহলে এটাও বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। আমরা যাদের নিরাপত্তার স্বার্থে নিয়ে এসেছি, তাদের নিয়ে যদি কোনো গুজব ছড়ায় সেটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। তারা এই গুজব ছড়িয়ে কিছু ভিউ বাড়িয়ে টাকা আয় করতে চায়।’
বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন আসছে যে আন্দোলনকারীদের পুলিশ ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, যাতে করে তারা আর একত্রিত হতে না পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এসব গুজবকে আপনারা বিশ্বাস করবেন না। আইনের স্বার্থে আমরা অনেককে অনেক সময় গ্রেপ্তার করেছি। যারা পুলিশকে হত্যা করেছে এবং গত ২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির সেই সময় তো ওইসব ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে অনেককে গ্রেপ্তার করেছিলাম। সে সময় তো প্রশ্ন আসেনি যে, আমরা তাদের প্রতি অন্যায় করেছি। আজকে যে মানুষকে আমরা নিরাপত্তার স্বার্থে নিয়ে এসেছি এই গুজব আপনারা বিশ্বাস করবেন না।’
সমন্বয়কদের পরিবারের পক্ষ থেকে ও তাদের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যদি নিরাপত্তা দেওয়া হয় তাহলে যেন পরিবারের মাধ্যমে দেওয়া হয়—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষল করলে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘কারা কী বলেছে, এ বিষয়ে আমরা কোনো কিছু জানি না। আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো আবেদন আসেনি। আমাদের কাছে এ বিষয়ে কেউ কিছু বলেননি। আমরা জাস্ট নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নিয়ে এসেছি। তাদের আন্দোলন সম্পর্কে টুকটাক আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘যাদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা নিয়ে এসেছি তাদের পরিবারের কাছে অনুরোধ করব, দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। আমরা মনে করি তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা দেখছি। তাদের পরিবার যেন নিশ্চিন্ত থাকে, সেই বিষয়ে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।