জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার হাট-বাজারে ইঁদুর মারার ওষুধ বিক্রি করতে দেখা যায় ষাটোর্ধ্ব আনোয়ার হোসেনকে। একই সঙ্গে তিনি ইঁদুর ধরা ও ইঁদুর মারার কাজও করেন।
স্থানীয়রা তাকে ‘ইঁদুর আনোয়ার’ হিসেবেই চেনেন। প্রতি বছর কৃষি অফিসে ১০ থেকে ১২ হাজার ইঁদুরের লেজ জমা দিয়ে টাকা ও উপহার সামগ্রী পান আনোয়ার হোসেন।
আনোয়ার হোসেনের বাড়ি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের নুরনগর গ্রামে।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় আয়োনার হোসেনের সঙ্গে। ওই দিন তিনি সরেজমিনে আলুর ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে ইঁদুর ধরার কলাকৌশল দেখান। এ সময় তার সঙ্গে আরও দুজন ইঁদুর ধরার কলাকৌশল রপ্তকারী শিষ্য ছিলেন।
আনোয়ার হোসেন বলেন, কৃষকরা আমাকে ডেকে নিয়ে যান ইঁদুর ধরার জন্য। আমি কৃষকের ফসলের ক্ষেত ও বাড়ি থেকে ইঁদুর ধরে মৃত ইঁদুরের লেজ সংগ্রহ করি। এতে কৃষকরা খুশি হয়ে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বকশিস দিয়ে থাকেন।
মাত্র ১৬ বছর বয়স থেকে ইঁদুর ধরেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইঁদুর ধরার জন্য কোনো মন্ত্র পড়ি না। শুধু কৌশল অবলম্বন করি। দীর্ঘদিন ইঁদুর ধরতে ধরতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ইঁদুর আমার কাছ থেকে দূরে পালাতে পারে না। আমাকে লোকজন এখন ইঁদুর আনোয়ার হিসেবেই ডাকেন। এতে আমি অখুশি কিংবা বিরক্ত হই না বরং খুশি হই। এ নামে ডেকে লোকজনও খুশি হন।
আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি প্রতি বছর আক্কেলপুর কৃষি অফিসে ১০-১২ হাজার ইঁদুরের লেজ জমা দিই। এতে কৃষি অফিস আমাকে টাকাসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী দিয়ে থাকে। জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযানে অংশগ্রহণ করে কৃষি অধিদপ্তর থেকে কয়েকবার জাতীয় পুরস্কার ও সনদ পেয়েছি। ইঁদুর ফসলের ও বাড়ির আসবাবপত্রের অনেক ক্ষতি করে। গ্রামের কৃষি পরিবারগুলো ইঁদুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ থাকে। আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা অসংখ্য কৃষি পরিবারকে এই যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করেছে। আমি এতে খুশি।
আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, ছোটবেলায় গ্রামে কৃষিজমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তিনি ইঁদুর নিধন কাজে জড়িয়ে পড়ি। ধীরে ধীরে ইঁদুর নিধন পেশায় পরিণত হয়ে গেছে। এ কাজ করে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে, বসতভিটা করেছি এবং কিছু আবাদি জমিও কিনেছি।
স্থানীয় কৃষক আফজাল হোসেন বলে, আমার পরিবার ইঁদুরের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। পরে আনোয়ারকে বাড়িতে ডাকলে তিনি সবগুলো ইঁদুর ধরে মেরে ফেলেন। এছাড়া আমার ফসলের ক্ষেতের ইঁদুর ধরেও মেরে ফেলেছেন আনোয়ার।
নুরনগর গ্রামের আরেক কৃষক রমজান আলী জানান, ফসল রক্ষায় বাজার থেকে অনেক ধরনের ওষুধ কিনেও যখন ইঁদুর নিধন করতে পারিনি, ঠিক তখন আনোয়ারের শরণাপন্ন হই। পরে ধীরে ধীরে আমার ফসলের ক্ষেত ইঁদুর মুক্ত হয়।
এ বিষয়ে আক্কেলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, ‘ইঁদুর ফসলের জন্য খুব ক্ষতিকর। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে ফসল ইঁদুরের পেটে চলে যায়। প্রতি বছরই ইঁদুর নিধন অভিযান পরিচালিত হয়। আক্কেলপুর উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ইঁদুর নিধনে সেরা অবস্থানে রয়েছেন আনোয়ার হোসেন। তিনি ইঁদুর নিধন করে কৃষি পরিবারের অনেক উপকারে আসছেন।
সূত্র : বাংলানিউজ২৪
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।