জুমবাংলা ডেস্ক : জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় কৃষি ব্যাংক শাখায় গ্রাহকের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে কোটি টাকা আত্মসাৎ হওয়ার ঘটনায় মাসুদুর রহমান (৩৫) নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিষয়টি জানাজানি হলে গতকাল সোমবার ব্যাংকে ভিড় করেন গ্রাহকরা। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা লাখ লাখ টাকা খুইয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক ও ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি ব্যাংক মেলান্দহ শাখায় মাসুদুর রহমান এ বছরের মার্চ মাসের তিন তারিখে শাখার দ্বিতীয় কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। চাকরির সুবাদে স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের আস্থাভাজনে পরিণত হন তিনি। বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে চতুর ব্যাংক কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান অনেক গ্রাহকের সিসি, সঞ্চয়ী, চলতিসহ বিভিন্ন হিসাব থেকে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
মেলান্দহ কৃষি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে জানান, গ্রাহক শফিকুল ইসলাম, রবিউল, আব্দুর রহমান, আকবর হোসেন, রফিকুল ইসলাম, ইমরান শেখ, নূর ইসলাম, মোখলেছুর রহমান, আবু হাসনাত, আজিজুল হক ও উমর আলীর অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৭৫ লাখ টাকা ব্যাংক কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান তার আত্মীয় সফিউল আলম, সাদ্দাম হাওলাদার, সেলফী জুয়েল গার্মেন্টস ও আশিকুর রহমানের অ্যাকাউন্টে ডাচ বাংলা ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক শাখায় পাঠান।
মেসার্স ইমরান ট্রেডার্স এর সত্ত্বাধিকারী ব্যবসায়ী হাজী মো. মোজাম্মেল হক কায়দা জানান, আমি ২০ লাখ টাকা এই ব্যাংকে রেখেছি। আমার অ্যাকাউন্ট নাম্বার হলো ৪৪৮। আমি খবর পেলাম এই ব্যাংকে অনেক গ্রাহকের টাকা অ্যাকাউন্টে নেই। এসে দেখি আমার অ্যাকাউন্টে থাকাও ১৬ লাখ টাকা উধাও। ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক জানালেন টাকা পাব।
সংবাদপত্র ব্যবসায়ী মো. শামীম জানান, আমরা মেলান্দহ বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আমরা ব্যাংকের প্রতি বিশ্বাস রেখে ব্যবসা করি। হঠাৎ করে শুনি অনলাইনে আমার টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। এখন আর আমাদের ব্যাংকের প্রতি আস্থা নেই।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আলহাজ আব্দুস ছাত্তার জানান, মেলান্দহে বাজার করতে এসে শুনি কৃষি ব্যাংকে টাকা নিয়ে ঝামেলা। পরে আমি ব্যাংকে এসে দেখি আমার একাউন্টে থাকা চার লাখ ৫০ হাজার টাকা নেই। আমার সঞ্চয়ী হিসাবে মাত্র ৩৪০ টাকা আছে। বাকি টাকা কোথায় গেছে আমি নিজেও জানি না।
রুকনুজ্জামান বলেন , গতরাত আটটার দিকে আমাকে শাখা ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম ও কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান মোবাইলে ডেকে নিয়ে আসে। সঙ্গে চেক আনতে বলে। আমার কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকার চেক নেয়। আজকে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এখন পর্যন্ত আমার টাকা ফেরত দেয়নি।
শাখা ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, আমি গতকাল একজন গ্রাহকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি অ্যাকাউন্ট খোঁজ নিয়ে সত্যতার প্রমাণ পাই। আমার শাখার কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান তার আত্মীয়ের কয়েকটি শাখায় টাকাগুলো পাঠান। তার সঙ্গে কথা বললে তিনি সব স্বীকার করেন। তার সঙ্গে অন্য কোনও কর্মকর্তা জড়িত নেই। নিজের মুনাফার লোভে এমন কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করছি। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা অনু্যায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ভুক্তভোগী সবাইকে ব্যাংক ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিবে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় জেনারেল ম্যানেজার মো. দিদারুল ইসলাম মজুমদার বলেন, আমি খবর পেয়ে এখানে এসেছি। এসে দেখি আসামিকে রুমে আটকে রেখেছে। তাকে আমিসহ কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনি ৭৫ লাখ টাকা অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। আমি প্রাথমিকভাবে রিপোর্ট পাঠাব। বাকি সব তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সবার টাকা পরিশোধ করা হবে। কারও টাকার কোনও সমস্যা হবে না।
মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, কৃষি ব্যাংক মেলান্দহ শাখায় টাকা আত্মসাতের ঘটনায় শাখা ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলামের অভিযোগে ব্যাংক কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সূত্র : আরটিভি অনলাইন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।