জুমবাংলা ডেস্ক : আমাদের সমাজে সচরাচর দেখা যায়- ক্যারিয়ারের দিক থেকে কিংবা অর্থবিত্তের দিক থেকে বন্ধুদের কেউ উপরে উঠে গেলে তার পেছনে পড়া বন্ধুদের অবহেলা করেন, অবজ্ঞা করেন কিংবা ছোট করে দেখেন। যেখান থেকেই শুরু হয় বন্ধুত্বের দূরত্ব।
এক্ষেত্রে এক ভিন্নরকমের উদাহরণ স্থাপন করলেন সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে কর্মরত বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ। পুলিশ প্রশাসনের পদবির প্রটোকল আটকাতে পারেনি কনস্টেবল আর পুলিশ সুপারের (এসপি) বন্ধুত্বকে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ নিজের ফেসবুক আইডিতে তার বন্ধুকে নিয়ে একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। তার পোস্টে তিনি লিখেছেন-
বন্ধুর জন্য ভালোবাসা
বিসিএসের রেজাল্ট যেদিন বের হয় সেদিন কীভাবে জানি সে খবর পেয়ে যায়। ফোনের ও প্রান্ত থেকে খুশিতে তার উল্লাস উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। মনে হচ্ছিল যেন সেই চাকরি পেয়েছে। বলতেছিল তুমি পুলিশের এএসপি হয়েছ, একসময় এসপি হবে, ডিআইজি হবে। কী যে ভালো লাগছে আমার, তোমাকে বুঝাতে পারব না। মনে হচ্ছে যেন আমিই এএসপি হয়েছি।
সে বলতেছিল- আমাদের এলাকায় শিক্ষক, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, আর্মি অফিসার অনেক রয়েছে, কিন্তু বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তা একেবারেই নেই, অবশেষে তুমি আমাদের এই অভাবটা পূরণ করলে। কথাগুলো সে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল।
সিদ্দিক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে নিউমার্কেট থানার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। আমরা ছেলেবেলার বন্ধু, প্রাইমারি আর হাইস্কুল একই সঙ্গে পড়েছি। সুদর্শন সুঠাম চেহারার সিদ্দিক এসএসসি পাশ করার পর পুলিশে যোগ দেয়। একজন টগবগে যুবক দ্রুত চাকরি পেয়ে এলাকায় পুলিশ সিদ্দিক হিসেবে পরিচিতি পায়। সবাই তাকে চিনে, মানুষের প্রয়োজনে সাধ্যমতো কমবেশি সে পাশে দাঁড়ায়।
ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা ভার্সিটিতে পড়াকালীন আমার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখে সে। পনেরো বছর পুলিশি চাকরিকালীন তার সঙ্গে অনেকবার দেখা হয়েছে কথা হয়েছে। তার এলাকার সমস্যায় আমাকে ইনভলভ করেছে। তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক সেই ছেলেবেলার মতোই।
আমার বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব যারা সাব-ইন্সপেক্টর/সার্জেন্ট থেকে ইন্সপেক্টর হয়েছে, আবার অনেক বন্ধু বিসিএসে জুনিয়র তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ কিংবা কথা হলে আমি সহজ করে দিলেও তাদের ভিতর একটা অস্বস্তি ভাব কাজ করে, তারা আমায় আপনি বলবে, না স্যার বলবে, না তুই বলবে দ্বিধায় থাকে!
কিন্তু কনস্টেবল বন্ধুটির মাঝে বিন্দু পরিমাণ ভাবনা আসতে দিতাম না, যাতে সে কখনই মনে না করে তার সামনে আমি একজন বড় কর্মকর্তা। সে যেন সবসময় ধারণা রাখে আমি তার ছেলেবেলার বন্ধু।
সম্প্রতি সে ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে সিলেট বিভাগে বদলির আদেশ পায়। পরিবার সন্তান-সন্ততি নিয়ে ময়মনসিংহে বসবাস করে সিদ্দিক। জামালপুরের গ্রামের বাড়িতে মা-বাবা ভাই-বোনসহ অনেকের প্রয়োজনে মুহূর্তেই পাশে দাঁড়ায়। সিলেট বিভাগে বদলির খবরে বেশ অসহায় বোধ করে এবং ভেঙে পড়ে সে। চারদিকে জোর চেষ্টা-তদবির এবং দৌড়িয়েও বদলি বাতিলে ব্যর্থ হয় সে।
তার সমস্যার কথাটা অবশেষে আমায় জানায়। পুলিশে জুনিয়র সদস্যদের জেলার ভিতরে বদলির জন্য সহজে চেষ্টা করা যায় কিংবা বিভাগের মধ্যেও ডিআইজি স্যারকে বলা যায়। কিন্তু এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে বদলি আইজিপি স্যারের অফিস তথা পুলিশ সদর দপ্তর করে থাকে, সেজন্য এ কাজটা সবসময়ই কঠিন থেকে কঠিনতর হয়। নিয়তি আর ভাগ্য বলে মেনে নেয় অনেকেই। সিদ্দিক অনেক জায়গায় যোগাযোগ করেও তেমনি ব্যর্থ হয়।
আমি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে যোগাযোগ করি। সাত দিনের ভেতরেই সিদ্দিকের কাজটা হয়ে যায়। আমি আগেও এরকম কাজে চেষ্টা করেছি অনেককে বদলি করিয়েছি, কিন্তু এটা এত দ্রুত সাত দিনের ভেতরে হয়ে যাওয়ায় আমি তাজ্জব বনে যাই, আশ্চর্য হই আবার লজ্জাবোধও করি, ফোন না করে শুধুমাত্র টেক্সটে থ্যাংকস জানাই।
পুলিশ সদর দপ্তরের কনসার্নড ডেস্ক অফিসার এআইজি মাহবুব ভাই চব্বিশ বিসিএসে আমার ব্যাচমেট। সশরীরে তার সঙ্গে সাক্ষাতে কৃতজ্ঞতায় বলি, ম্যাজিকের মতো কাজটা কীভাবে এত দ্রুত করে দিলেন?
মাহবুব ভাইয়ের উত্তরটা ছিল মাত্র দুই লাইনের- ‘একজন কনস্টেবলের আপনত্ব বোধে আপনি যেভাবে হাইলাইটস করে বলেছেন, সে আপনার প্রাইমারি এবং হাইস্কুলের বন্ধু, একই এলাকার আপনারা। বদলিতে তার পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপদে পড়ছে, ভাই আপনি একটু দেখবেন প্লিজ!
আপনার দরদমাখা আকুতিটা আমার কাছে অন্যরকম লেগেছে, এত ভালো লেগেছে যে- একজন সামান্য কনস্টেবলকে সম্মান দিয়ে নিজের ভাই বন্ধু বলে সম্বোধন করেছেন আপনি! অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ দিয়ে তাই আপনার বন্ধুর কাজটাই আমার কাছে মহাগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।