জুমবাংলা ডেস্ক: বড় কিছুর সাথে তুলনা করে যদি সাইজে ছোট হয় সেটা তো ছোটই হবে। আর তাই গৌড়ের বড় সোনামসজিদের সঙ্গে তুলনা করে পরিমাপে ছোট বলে একে ছোট সোনামসজিদ বলা হয়। প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড় নগরীর উপকন্ঠে ফিরোজপুর গ্রামে এ স্থাপনাটি নির্মিত হয়েছিলো, যা বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার অধীনে পড়েছে। বিশ টাকার নোটের উপর ছাপানো মসজিদটিই ছোট সোনা মসজিদ, যা বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ।
মসজিদের মাঝের দরজার উপর উপর প্রাপ্ত এক শিলালিপি থেকে এসব তথ্য জানা যায়। তবে লিপির তারিখের অংশটুকু ভেঙ্গে যাওয়ায় নির্মাণকাল জানা যায়নি।
সুলতানি আমলের অনন্য স্থাপনা ছোট সোনামসজিদ। বিশাল এক দীঘির দক্ষিণ পাড়ের পশ্চিম অংশজুড়ে এর অবস্থান। মসজিদের উত্তর-পশ্চিম কোণে মহিলাদের নামাজ পড়ার আলাদা জায়গা। কারুকার্যখচিত মিহরাব আছে একটি।
মসজিদের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা যথাক্রমে ৮২, ৫২ ও ২০ ফুট। ইটের ইমারত হলেও এর বহির্গাত্র পাথর দিয়ে ঘেরা। মসজিদের গায়ের লতাপাতার কারুকাজও পাথরে খোদাই করা।
১৪৯৩ থেকে ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে এটি নির্মিত হয়। এ মসজিদে চৌচালা ঘরের চালের মতো তিনটি গম্বুজ এবং চার সারিতে তিনটি করে আরো ১২টি গোলাকৃতি গম্বুজ। গম্বুজের তলদেশ ফুল, ফল ও লতাপাতার নকশা।
মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ৮২ ফুট লম্বা ও পূর্ব-পশ্চিমে ৫২.৫ ফুট চওড়া। উচ্চতা ২০ ফুট। এর দেয়ালগুলো প্রায় ৬ ফুট পুরু। দেয়ালগুলো ইটের তৈরী কিন্তু মসজিদের ভেতরে ও বাইরে পাথর দিয়ে ঢাকা। মসজিদের চারকোণে রয়েছে চারটি বুরুজ । এগুলোর ভূমি নকশা অষ্টকোণাকার। বুরুজগুলোতে ধাপে ধাপে বলয়ের কাজ আছে। বুরুজগুলোর উচ্চতা ছাদের কার্নিশ পর্যন্ত। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে রয়েছে পাঁচটি মাল্টিফয়েল্ড আর্চড দরজা। আর্চগুলো বহুভাগে বিভক্ত (multiple cusped)এবং বিভিন্ন অলংকরণে সমৃদ্ধ।
উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে রয়েছে তিনটি করে দরজা। তবে উত্তর দেয়ালের সর্ব-পশ্চিমে ব্যতিক্রম রয়েছে। সেখানে দরজাটির জায়গায় রয়েছে সিঁড়ি। এই সিঁড়িটি উঠে গেছে মসজিদের অভ্যন্তরে উত্তর-পশ্চিম দিকে দোতলার একটি বিশেষ কামরায়। কামরাটি পাথরের স্তম্ভের উপর অবস্থিত। মসজিদের গঠন অনুসারে এটিকে জেনানা-মহল বলেই ধারণা করা হয়। তবে অনেকে মনে করেন এটি ছিলো সুলতান বা শাসনকর্তার নিরাপদে নামাজ আদায়ের জন্য আলাদা একটি কক্ষ।
মসজিদটি তিনটি আইল ও পাচটি সারি (বে) তে বিভক্ত। মাঝের আইলটি পুরো স্থানটিকে দুভাগে বিভক্ত করেছে। প্রতিটি ভাগে রয়েছে ছয়টি চতুর্ভুজ আকৃতির অঞ্চল যেগুলোর উপরে অবস্থান করছে ছয়টি গম্বুজ। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খড়ের ছাদ বিশিষ্ট ঘরগুলো থেকেই এসেছে এধরনের নির্মাণশৈলী।পূর্ব দেয়ালের পাঁচটি দরজা বরাবর মসজিদের অভ্যন্তরে রয়েছে পাঁচটি মিহরাব। এদের মধ্যে মাঝেরটি আকারে বড়। প্রতিটির নকশাই অর্ধ-বৃত্তাকার। মিহরাবগুলোতে পাথরের উপর অলংকরণ রয়েছে। দোতলার কামরাটিতেও একটি মিহরাব রয়েছে।
মসজিদের অভ্যন্তরের ৮টি স্তম্ভ ও চারপাশের দেয়ালের উপর তৈরি হয়েছে মসজিদের ১৫টি গম্বুজ। এদের দুপাশে দুসারিতে তিনটি করে মোট ১২টি গম্বুজ রয়েছে। এ মসজিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, বাইরের যে কোনো পাশ থেকে তাকালে কেবল পাঁচটি গম্বুজ দেখা যায়, পেছনের গম্বুজগুলো দৃষ্টিগোচর হয় না।
পুরো মসজিদের অলংকরণে মূলত পাথর, ইট, টেরাকোটা ও টাইল ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের সম্মুখভাগ, বুরুজসমূহ, দরজা প্রভৃতি অংশে পাথরের উপর অত্যন্ত সুক্ষ ভাবে লতাপাতা, গোলাপ ফুল, ঝুলন্ত শিকল, ঘণ্টা ইত্যাদি খোদাই করা রয়েছে। মাঝের দরজাটির উপরে একটি শিলালিপি পাওয়া যায়। ক্রেইটন ও কানিংহামের বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়, একসময় বাইরের দিকে পুরো মসজিদটির উপর সোনালী রঙের আস্তরণ ছিলো, আবার কেউ কেউ বলেন কেবল গম্বুজগুলোর ওপর সোনালী রঙের আস্তরণ ছিলো । গম্বুজগুলোর অভ্যন্তরভাগ টেরাকোটা সমৃদ্ধ।
মসজিদের দরজাগুলোর প্রান্তদেশ বলিষ্ঠ শোভাবর্ধক রেখা দিয়ে ঘেরা। কিন্তু খোদাই কাজটি অগভীর এবং দালানের খুব কাছে না পৌঁছলে এ খোদাই কাজ চোখে পড়ে না। দরজাগুলোর মধ্যবর্তী কুলঙ্গীগুলোতেও রয়েছে একই অগভীর খোদাই মসজিদটি ইট ও পাথরে নির্মিত।
কিভাবে যাবেন: ঢাকার কল্যাণপুর থেকে ন্যাশনাল ট্রাভেলস, দেশ ট্রাভেলস আরো কিছু পরিবহনের বাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও শিবগঞ্জ যাওয়া যায়। সময় লাগে সাত ঘণ্টা, ভাড়া ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। তারপর লোকাল বাসে ছোট সোনামসজিদ যেতে আরো এক ঘণ্টা লাগবে। এছাড়া ট্রেনে যেতে হলে কমলাপুর থেকে পদ্মা, সিল্কসিটি ও ধুমকেতু ট্রেন আছে। এগুলো রাজশাহী পর্যন্ত। তারপর বাসে করে সোনামসজিদ যেতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।