দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আযহা। এই লম্বা ছুটিতে কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছেন গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার, কেউ বা প্ল্যান করছে পরিবার নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরে আসার। উভয় ক্ষেত্রেই একটু স্মার্ট চিন্তার অভাবে বহু প্রত্যাশিত ভ্রমণটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ভ্রমণের পূর্ব প্রস্তুতিসহ চলুন জেনে নিই ঈদের ছুটিতে নিরাপদে ভ্রমণের কিছু দরকারি তথ্য।
ঈদের ছুটিতে ভ্রমণের পূর্ব প্রস্তুতি-
গন্তব্য সুনির্দিষ্টকরণ: বেড়াতে যাওয়ার আগে সর্বপ্রথম ঠিক করতে হয় গন্তব্য। আর এর উপর নির্ভর করেই পরবর্তীতে নির্ধারিত হয় ভ্রমণের সময়, বাজেট, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি। গত বছরের ন্যায় এবারের ঈদও বেশ গরমের মধ্যেই পড়তে যাচ্ছে। তাই যে জায়গাগুলোতে অত্যধিক কায়িক পরিশ্রম হবে সে জায়গাগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া উত্তম। যেমন-পাহাড় ও ঘন বনাঞ্চলের স্থলে গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে সাগর, নদী, হাওড় এবং হালকা গাছ-গাছালি ঘেরা উদ্যান বা এরকম কোনো খোলামেলা জায়গা।
যে জায়গাটিকে গন্তব্য হিসেবে ঠিক করা হবে তার ব্যাপারে স্থানীয় বা আগে কেউ সেখানে গেছে এরকম কারো কাছ থেকে তথ্য নেওয়া উত্তম। এছাড়াও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে ভ্রমণ বিষয়ক বিভিন্ন পরিচিত-অপরিচিত জায়গাগুলোর তথ্য অনায়াসেই পাওয়া যায়।
পরিবহন ব্যবস্থা বাছাই: প্রতি ঈদে গ্রামের বাড়ি যাওয়া এবং ঢাকার বাইরে পরিজন নিয়ে ঈদের ছুটি কাটানো উভয়ের ক্ষেত্রেই পরিবহন ঠিক করা বেশ ঝামেলার কাজ। বিশেষ করে যারা মাঝারি ধরনের পাবলিক পরিবহনগুলোতে যাতায়াত করে থাকেন, তাদের জন্য এই সময়টা রীতিমত বিভীষিকাময়। প্রতি ঈদে পরিবহনগুলোর সিট বুকিংয়ের লাইনে প্রচুর মানুষের ভিড়ে হাজারো ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই টিকেট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই যত আগে সম্ভব সিট বুক করে নেওয়া উত্তম।
তাছাড়া প্রত্যহ যানজট অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পাবার ফলে স্থলপথে যাতায়াত এখন সমূহ হয়রানির নামান্তর। তাই যারা শুধুমাত্র প্রমোদ ভ্রমণে ঢাকা ছাড়ছেন তাদের জন্য ঈদের দিন দিবাগত রাত বা পরদিন রওনা হওয়া ভালো। এছাড়া একই গন্তব্যের যাত্রীরা ৬ থেকে ৭ জন হলে একসঙ্গে একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করেও যাওয়া যায়। বড় গ্রুপের পর্যটকরাও এভাবে ঈদের মৌসুমে যে কোনো সময় যাতায়াত করতে পারেন।
থাকা-খাওয়ার পূর্ব পরিকল্পনা: ঈদের ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এই বিষয়টি নিয়ে আগে থেকেই ভেবে রাখা ভালো। কি ধরনের আবাসিক হোটেল ঠিক করা হচ্ছে, সাথে বা আশেপাশে খাবারের হোটেল আছে কিনা প্রভৃতি ব্যাপারগুলো ঢাকা থেকেই ঠিক করে যাওয়া উচিত। বিশেষ করে ২ থেকে ৩ দিনের ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভ্রমণ সঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনা করে বাজেট অনুযায়ী একটি উপযুক্ত লোকেশনে আবাসন ঠিক করতে হবে।
এই লোকেশন থেকে খাবারের হোটেল এবং দর্শনীয় স্থানসমূহের দূরত্বের ব্যাপারটা খেয়াল রাখতে হবে। কেননা এই বিষয়টি বাজেটের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। যেহেতু ঈদের সময় যাওয়া হচ্ছে সেহেতু অত্যধিক হোটেল ভাড়া বিবেচনার মধ্যে রাখতে হবে।
অভিজাত রেস্টুরেন্ট এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। এক্ষেত্রে স্থানীয় কারো থেকে অথবা ট্রাভেল ব্লগগুলোর মাধ্যমে খাবার খরচের ব্যাপারে জেনে নেওয়া যেতে পারে।
ভ্রমণের জন্য ব্যাগ গোছানো: এই গোছগাছের ব্যাপারটির সঙ্গে কি ধরনের জায়গায় যাওয়া হচ্ছে এবং কতদিন থাকতে হবে তা জড়িত। যারা বাড়িতে ঈদ করতে যান তাদের লাগেজটা স্বভাবতই একটু বড় হয়। আর পর্যটকদের জন্য বেশ মাপজোখ করেই ব্যাগ গোছাতে হয়। উভয় ক্ষেত্রেই যতটা সম্ভব অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দেওয়া উচিত।
ঈদে ভ্রমণে দুর্ঘটনা এড়াতে সতর্কতা-
ভ্রমণ পথ ও গন্তব্যের ব্যাপারে যথাযথ তথ্য নেওয়া: যে কোনো গন্তব্যে যাওয়া আগে তার ব্যাপারে যত বেশি জেনে নেওয়া যায় ততই ভালো। প্রথমেই সেখানকার আবহাওয়া এবং আইনশৃঙ্খলার অবস্থা জেনে নিতে হবে। নিকটস্থ থানা, হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্সের নাম্বার, আবাসিক হোটেল, এবং ভ্রমণকারীর যে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে তার শাখা লোকেশন ও যোগাযোগ নাম্বার মোবাইলে সংরক্ষণ করতে হবে।
এছাড়া যে রুট ব্যবহার করে গন্তব্যে পৌছবে সে রুটেও কোনো ঝামেলা চলছে কি-না আগে থেকেই যাচাই করে নিতে হবে। মোবাইলে নূন্যতম একদিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনে নেওয়া যেতে পারে। এতে করে যাত্রাপথে যে কোনো জায়গায় নিকটস্থ অ্যাম্বুলেন্স ও থানার নাম্বার খুঁজে বের করা যাবে।
নিকট বন্ধু ও আত্মীয়দের জানিয়ে রাখা: বাড়িতে বাবা-মার সঙ্গে ঈদ করার জন্য ঢাকার ছাড়ার সময় ঢাকার অন্তত একজন নিকট আত্মীয় বা বন্ধুকে প্রস্থানের বিষয়টি জানিয়ে রাখা উচিত। সেই সঙ্গে রওনা হওয়া সময়টিও জানাতে হবে গন্তব্যের লোকদের। বিশেষত পৌছতে গভীর রাত হয়ে গেলে তারা যেন গাড়ির ব্যবস্থা করতে সহায়তা করতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় গ্রামের বাড়িটি বাস বা ট্রেন ষ্টেশন থেকে অনেক ভেতরে। একই কথা খাটে যারা প্রতিনিয়ত ঢাকাতে ঈদ করেন তাদের জন্যও।
ওষুধপত্র ও ফার্স্ট এইড বক্স সঙ্গে রাখা: যাত্রাপথে বা গন্তব্যে পৌঁছে বিভিন্ন সময় ছোট-খাট দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই চট জলদি প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ফার্স্ট এইড কিট সঙ্গে রাখা জরুরি। জ্বর, বমি, মাথা ব্যথা, পেট খারাপের ওষুধ এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে অ্যান্টিবায়োটিক সঙ্গে রাখা জরুরি। সঙ্গে নেওয়া যেতে পারে মশা নিরোধক ওডোমোস। সাথে বাচ্চা থাকলে তাদের স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
খাবার পানীয় নেওয়া: ভয়াবহ দাবদাহে ঈদ উৎসবে শক্ত সমর্থ থাকতে বিশুদ্ধ পানি পানের কোনো বিকল্প নেই। শুধু দীর্ঘ মেয়াদের ভ্রমণেই নয়; রোদের মধ্যে ঘন্টাখানেক হাটার ক্ষেত্রেও সঙ্গে পানি বা জুসের বোতল বহনে অভ্যস্ত হওয়া উচিত।
ভ্রমণের সময় খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা: ভ্রমণের সময় খাবারের মান যাচাইয়ের ক্ষেত্রে খাবারটি কিভাবে প্রস্তুত হচ্ছে তা দেখা জরুরি। কিন্তু সেটা সম্ভব না হলে খাবারটি যথেষ্ট রান্না হয়েছে কি-না সেদিকে নজর দিতে হবে। কোনো খাবারে অ্যালার্জি থাকলে সেটি সেখানকার বিখ্যাত খাবার হলেও এড়িয়ে যাওয়া উচিত। ব্যাকটেরিয়া থেকে দূরে থাকতে শুধুমাত্র যেগুলো খোসা ছাড়িয়ে খেতে হয় সে ফলগুলো খাওয়া যেতে পারে।
ভ্রমণের পূর্বে পর্যাপ্ত ঘুম: ভ্রমণের সময় দীর্ঘ দূরত্ব না থাকা সত্ত্বেও প্রায়ই যানজটের জন্য দীর্ঘক্ষণ রাস্তাতেই কেটে যায়। এমতাবস্থায় শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে শক্তির যোগানের জন্য ভ্রমণের পূর্বে পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। এছাড়াও ট্রেনে মোশন সিকনেস থেকে রক্ষা পেতে যানবাহন চলাকালে অল্প কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ রাখা অথবা সম্ভব হলে ঘুমিয়ে নেওয়া ভালো।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: শুধু এই ঈদের জন্য নয়; দেশের ভেতরে যে কোনো ভ্রমণকালে জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে থাকা উচিত। বর্তমানে কোভিড টিকা কার্ডও একটি অবিচ্ছেদ্য সংযোজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোর প্রতিটির স্ক্যান কপি অনলাইনে তথা- ড্রপবক্স, গুগল ড্রাইভ, ওয়ান ড্রাইভ অথবা অফলাইনে মোবাইলের ফাইল ম্যানেজারে সংরক্ষণ করা উচিত, যেন মোবাইলের মাধ্যমে দ্রুত দেখা যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।