কাজী ওয়াজেদ আলী: কাপড় দিয়ে পেঁচানো চাপাতি হাতে ছেলেটি খুব দ্রুতবেগে থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষে প্রবেশ করেই বললো স্যার, ‘আমাকে অ্যারেস্ট করে জেলে দিন।’
ছেলেটির কথা শুনে হকচকিয়ে গেল এসআই জহির। সাথে সাথেই নিয়ে আসলো ওসির রুমে। কিছুটা চিন্তাযুক্ত ছেলেটিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে তার নাম বললো। বললাম, কেনো অ্যারেস্ট হতে চাও? আর চাপাতি কেনো?
বললো, ‘স্যার, আমার পরিচিত একজন মাদকসেবীকে কিছুদিন আগে মাদক মামলায় অ্যারেস্ট করে পাঠিয়েছিলেন জেলে। জেল খাটার পর ও এখন পুরোপুরি সুস্থ। স্ত্রী নিয়ে সংসার করছে। একটা চাকরি করে।’
সে আরো বললো, ‘আমিও একজন মাদকসেবী। আমিও মাদক ত্যাগ করতে চাই। আর কিছু একটা ছাড়া চালান দিবেন কিসে? সেজন্যই চাপাতি আনা। তাই স্বেচ্ছায় জেলে যেতে এসেছি, যাতে একেবারেই মাদক ছাড়তে পারি, ভালো হতে পারি, ছোট ভাইটাকে পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করতে পারি।’
ওর কথাগুলো শুনে আমিও চমকিয়ে গেলাম। যেখানে সবাই গ্রেপ্তার এড়াতে চায়, সেখানে সে স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হতে সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে এসেছে থানায়! ওর কথাগুলো শুনে এবং বাবা-মা আর ভাইয়ের প্রতি ওর দরদ দেখে খুব আশ্চর্য হলাম। বসলাম ছেলেটিকে নিয়ে ওর আরো কথা শুনতে।
পিচ ঢালাইয়ের কাজ করা অষ্টম শ্রেণি পাশ এই ছেলেটি থাকে সিটিপল্লীতে। দৈনিক ৭০০ টাকা রোজগার করে ৬০০ টাকাই খরচ করে নেশার পেছনে। আয় করা টাকা নেশার পেছনে খরচের কারণে একই পেশার বাবাকে কিছুই দিতে না পারা আর ছোট ভাইটির পড়ালেখার খরচ দিতে না পারায় সে এক ধরনের আত্মদহনে ভুগছে। তাই সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে এসেছে থানায়।
জেলে গেলেই যে কেউ নেশা ছেড়ে দিবে সেটা সবসময় সত্য নাও হতে পারে বা বেশিরভাগ সময় বিপরীতটাই হয়। তারপরও ছেলেটি নেশামুক্ত হওয়ার জন্য আত্মোপলব্ধি করেছে, ভালো হওয়ার জন্য নিজের মনকে বসে আনতে পেরেছে সেটাই বা কম কি!
ছেলেটিকে নেশামুক্ত করার জন্য একটু ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে দেখি। জেলখানা ছাড়াই কিভাবে ওকে ভালো করা যায়!
লেখক: ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), যাত্রাবাড়ী থানা, ঢাকা।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।