জুমবাংলা ডেস্ক: কোলাহলের এই নগর থেকে কয়েকটি দিন দূরে চলে গেলে কেমন হয়! ঈদ বা অন্য কোন ছুটি কাজে লাগিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার বাহিরে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে। সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন আপনার পরিবার বা বন্ধু-বান্ধব। তাছাড়া বুকিং দিয়ে দিতে পারেন আপনার পছন্দের রিসোর্টে। জুমবাংলার পাঠকদের জন্য প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের বর্ণনা দেওয়া হবে এখানে। আজ আলোচনা করা হবে মহারাজা প্রাণনাথ ও তাঁর পোষ্যপুত্র রামনাথ নির্মিত অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দিনাজপুর রাজবাড়ি।
ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত দিনাজপুর রাজবাড়ী এখন এক নিস্তব্ধ পোড়াবাড়ী। এই ঐতিহ্য রক্ষায় নেয়া হয়নি কোনো সরকারি উদ্যোগ। ফলে অনিবার্য ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলেছে দিনাজপুরের এককালের গৌরব ঐতিহাসিক পীঠস্থান।
বাংলাদেশে যে কয়টি শক্তিশালী রাজবংশের উদ্ভব হয়েছিল দিনাজপুরের রাজবংশ ছিল তার মধ্যে অন্যতম। মুঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বের প্রায় শেষ লগ্নে এক ধর্মপ্রাণ ব্রহ্মচারীর দেবদত্ত সম্পত্তি থেকে দিনাজপুর রাজবংশ তথা জমিদারির সূচনা হয়। ওই ব্রহ্মচারীর নাম ছিল কাশী ঠাকুর। রাজা গণেশ থেকেই দিনাজপুর রাজবংশের যাত্রা শুরু হয়েছিল।
কিন্তু দেখা যায়, গণেশরাজ আর দিনাজপুরের রাজবংশের মধ্যে কালগত ব্যবধান পুরো ৩শ’ বছর। রাজার রাজধানী ছিল দিনাজপুর শহর আর গণেশের জমিদারী ছিল দিনাজপুরের রাণীশংকৈল এলাকার ভাতুরিয়া পরগনা। তাই গণেশ যে দিনাজপুরের রাজবংশের আদি পুরুষ তার কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি বা দলিল আজও পাওয়া যায়নি।
ব্রহ্মচারীর মৃত্যুর পর ঠাকুরের সব সম্পদের মালিক হন ছেলে শ্রীমন্ত চৌধুরী। ব্রহ্মচারী কাশী ঠাকুরের মন্দির সংলগ্ন এলাকা ঘিরেই রাজার জমিদারী বিস্তৃত হতে থাকে। শ্রীমন্ত চৌধুরীর ভাগ্নে শুকদেব ছিলেন দিনাজপুর রাজবংশের প্রথম পুরুষ। আর এই রাজবংশের শুরু পঞ্চাদশ শতাব্দীতে। সুদীর্ঘ তিনশ’ বছর স্থায়ী এ রাজবংশে প্রায় ১১ জন রাজত্ব করেন।
দিনাজপুর রাজাদের মধ্যে রাজা প্রাণনাথ এবং রাজা রামনাথ ছিলেন অত্যন্ত শক্তিমান। তাদের রাজত্বকালেই রাজবংশের ক্ষমতা আর সম্পদ যেন ফুলে ফেঁপে ওঠে। স্থাপত্য বিলাসী এবং পুরাকীর্তিপ্রিয় রাজা প্রাণনাথের সময়ই ঐতিহাসিক কান্তজীর মন্দির নির্মাণ শুরু হয়। তবে তার ছেলে রামনাথই ছিলেন দিনাজপুর অঞ্চলের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা।
রাজা রামনাথের অসীম সাহসিকতার জন্যই নিষ্ঠুর হিংস্রবর্গীরা পদ্মা পাড়ি দিয়ে এই অঞ্চলে হামলা চালাতে বার বার ব্যর্থ হয়েছে। পানির কষ্ট লাঘবের জন্য তিনি বিশাল রামসাগর দীঘি খুঁড়ে স্মরণীয় হয়ে আছেন। দিনাজপুরের রাজবংশের শেষ যুগের রাজা ছিলেন মহারাজা গিরিজানাথ। তিনি ছিলেন কিংবদন্তীর মতো। তার পৃষ্ঠপোষকতায়ই ১৯১৪ সালে দিনাজপুরে উত্তরবঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের ষষ্ঠ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
১৬৪০ সালে যাত্রা শুরু হয়ে টানা ৪শ’ বছর রাজা-মহারাজারা দিনাজপুর শাসন করেন। বর্তমানে বিশাল রাজপ্রাসাদ নিঝুম হতে হতে পরিত্যক্ত সম্পদে পরিণত হয়েছে। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজবাড়ীটি।
কিভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে বাস ও ট্রেন দুই পথেই যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী বাসগুলো সাধারণত গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে ছাড়ে। এ পথে নাবিল পরিবহনের বাস চলে। ভাড়া ৯০০ টাকা। ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেন দ্রুতযান এক্সপ্রেস ছাড়ে সন্ধ্যা ৭ টা ৪০ মিনিটে। আর একতা এক্সপ্রেস ছাড়ে ৯ টা ৪০ মিনিটে।
দিনাজপুর শহর থেকে অটোরিকশায় পৌঁছে যাওয়া যায় এ রাজবাড়িতে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।