আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফল বদলে দিতে জর্জিয়ার একজন কর্মকর্তাকে করা ট্রাম্পের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা ভিন্ন দিকে মোড় নিতে শুরু করেছে। এ ঘটনায় এরইমধ্যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে (এফবিআই) চিঠি দিয়েছেন দেশটির দুই জন আইনপ্রণেতা। খবর দ্য গার্ডিয়ান এবং ডিডব্লিউর।
ওই দুই জন আইনপ্রণেতা হচ্ছেন ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেসম্যান টেড লিউ এবং নিউ ইয়র্কের ক্যাথলিন রাইস। গত ৪ জানুয়ারি এফবিআই পরিচালক ক্রিস্টোফার রে-কে চিঠিটি পাঠানো এ দুই রাজনীতিকের দুই জনই ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য।
চিঠিতে বলা হয়েছে, মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য ও প্রসিকিউটর হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কয়েকটি নির্বাচনি অপরাধের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অবিলম্বে প্রেসিডেন্টের বিষয়ে ফৌজদারি তদন্ত শুরুর আহ্বান জানাচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে জেনেশুনে ও ইচ্ছাকৃতভাবে ভোটারদের সুষ্ঠু নির্বাচন থেকে বঞ্চিত করা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার বলেন, এই টেপটি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আপনি এটিকে ফৌজদারি আইনে বিবেচনা করবেন।
আলোচিত ওই ফোনালাপে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট ব্র্যাড রাফেনসপার্জারকে রাজ্যটির নির্বাচনি ফল বদলে দিতে চাপ দেন ট্রাম্প। প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট ওই ফোনালাপ ফাঁস করে দেওয়ায় মার্কিন রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
ব্র্যাডকে ট্রাম্প বলেছেন, জর্জিয়ায় জেতার মতো ভোট খুঁজে বের করতে। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন না, জর্জিয়ায় জো বাইডেনের কাছে তিনি হেরেছেন।
এই প্রথম জর্জিয়ায় কোনও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী রিপাবলিকান প্রার্থীর চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। রাজ্যটির ইতিহাসে এমন ঘটনা অভূতপূর্ব। নির্বাচনের আগে জর্জিয়া জেতার ব্যাপারে ট্রাম্প যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। ১১ হাজার ৭৭৯টি ইলেকটোরাল ভোট বেশি পেয়েছেন বাইডেন। আর তাতেই চটেছেন ট্রাম্প। প্রাথমিকভাবে তিনি দাবি করেছিলেন, ডেমোক্র্যাটরা ভোটে কারচুপি করেছে। কিন্তু সেই দাবি ধোপে না টেকায় জর্জিয়ার রাজ্য সরকারের ওপর চোটপাট করতে শুরু করেন তিনি। ওই ফোন কলই এর প্রমাণ।
ফোন কলে শোনা যাচ্ছে, ব্র্যাড এবং তার আইনজীবীকে রীতিমতো হুমকি দিচ্ছেন ট্রাম্প। বলছেন, তিনি বিশ্বাস করেন না, জর্জিয়ায় তিনি হেরেছেন। যেভাবেই হোক তার জন্য ভোট জোগাড় করে দিতে হবে। প্রয়োজনে আবার গণনা করতে হবে। জর্জিয়া স্টেট তার চাই। ব্র্যাড ও তার আইনজীবী একাধিকবার ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, ওইভাবে ভোট জোগাড় করা সম্ভব নয়। ট্রাম্প যে কারচুপির কথা বলছেন, তার কোনও প্রমাণ নেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প কোনও কথাই মানতে রাজি হননি।
ট্রাম্পের এই ফোন কল রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বিষয়টিকে ছেলেমানুষি বলে উড়িয়ে দিলেও অন্যপক্ষের বক্তব্য, ট্রাম্প নিজেই আসলে কারচুপির চেষ্টা করেছেন। যেভাবে ব্র্যাডকে তিনি হুমকি দিয়েছেন তা অভূতপূর্ব ঘটনা। জর্জিয়া জিতলেও অবশ্য ট্রাম্প জিততে পারবেন না। ওই ভোট ট্রাম্পের পক্ষে গেলেও জাতীয়ভাবে বাইডেন এগিয়ে থাকবেন। আগামী ২০ তারিখ প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের শপথ নেওয়ার কথা। তার আগে ট্রাম্পের এই ফোন কল শেষ মুহূর্তের মরিয়া চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর জেরেই ডেমোক্র্যাট শিবির থেকে তার বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি উঠেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।