আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার পর সৌদি আরবের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছেন তার বন্ধু ওমর আব্দুল আজিজ। সৌদি রাজপরিবারের এই সমালোচক এখন ক্যানাডায় বাস করেন। দেশটির পুলিশ তাকে সম্ভাব্য হুমকির ব্যাপারে সতর্ক করেছে।
ওমর আব্দুল আজিজ জানেন, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। এ কারণে অনেক বছর ধরেই কানাডায় আশ্রয়ে আছেন তিনি। এখন তিনি বলছেন, রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ তার বিরুদ্ধে হামলা হতে পারে বলে তথ্য পেয়েছে। সে হুমকির উৎপত্তি সৌদি আরব বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
আব্দুল আজিজ নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টের এক ভিডিওতে এমন তথ্য জানিয়েছেন। ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘মোহাম্মদ বিন সালমান ও তার লোকজন আমার ক্ষতি করতে চায়। তারা আমাকে হত্যা করতে চায় নাকি অপহরণ, তা জানি না।’
ওমর আব্দুল আজিজকে কয়েক বছর আগে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া হয়। জার্মানির ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের গুইডো শ্টাইনবার্গ মনে করেন, ‘তার (ওমর আব্দুল আজিজ) অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এরই মধ্যে সৌদি সরকারের বিরোধিতাকারী সবাইকে চুপ করিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই হয় কারাগারে, অথবা অন্য কোনোভাবে তাদেরকে কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয়েছে।’ কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না থাকায় আব্দুল আজিজের গুরুত্ব আরও বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি।
এবারই প্রথম কানাডিয়ান পুলিশ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে জানান ওমর আব্দুল আজিজ। তার আইনজীবী আলা মহাজন ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, এই হুমকির তথ্য খুবই নির্ভরযোগ্য।
কাওয়াকিবি ফাউন্ডেশনের প্রধান এবং গণতান্ত্রিক অধিকারকর্মী ইয়াদ আল-বাগদাদী বলেন, তারা আরও আগে থেকেই এমন হুমকির আশঙ্কা করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, অনেকদিন ধরেই তাকে টার্গেট করে রেখেছেন এমবিএস (মোহাম্মদ বিন সালমান)।’
আল-বাগদাদীও এমবিএসের অধীনে সৌদি নীতির কট্টর সমালোচক। তিনি এখন নরওয়েতে বাস করেন এবং ২০১৯ সালে তাকেও সৌদি আরব থেকে হুমকি পাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছিল।আল-বাগদাদীর সঙ্গে কখনও আব্দুল আজিজের দেখা না হলেও দু’জনই লেখালেখি ও একই ধরনের নীতির পক্ষে কথা বলেন। ২০১৮ সালের অক্টোবরে তুরস্কে সৌদি দূতাবাসে খুন হওয়া সাংবাদিক খাশোগির বন্ধু ছিলেন তারা দু’জনই।
২০১৭-১৮ সালে আব্দুল আজিজের সঙ্গে খাশোগির নিয়মিত যোগাযোগ হতো। গুইডো শ্টাইনবার্গ বলেন, ‘জামাল খাশোগি যখন ওয়াশিংটন ডিসিতে ছিলেন তখন তিনি আব্দুল আজিজের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তারা একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারেও পরিকল্পনা করেছিলেন। ফলে খাশোগি যখন টার্গেট হলেন, সৌদি আরব বুঝতে পারলো আব্দুল আজিজও তাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারেন।’
হ্যাকিংয়ের শিকার
২০১৮ সালে আব্দুল আজিজ টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটিজেন ল্যাবে পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারেন- তার ফোন সৌদি আরব থেকে হ্যাক করা হয়েছিল এবং এই হ্যাকের পরই সৌদিতে অবস্থানরত তার পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। টুইটার ভিডিওতে আব্দুল আজিজ বলেন, ‘সমালোচনার কারণে তারা আমাকে আঘাত করতে চায়। কিন্তু এর সঙ্গে আমার পরিবারের সম্পর্ক কী? আমার বাবা-মা ও ভাইবোনদের কেন আমার সঙ্গে যোগাযোগ ও ভ্রমণ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না?’
নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও একসঙ্গে কাজের পরিকল্পনার ফলেই তাকে ও খাশোগিকে টার্গেট করা হয় বলে দাবি আব্দুল আজিজের। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ওয়াশিংটন পোস্টের সম্পাদকীয়তে এমন দাবি করেছিলেন তিনি।
তিনি লিখেছিলেন, ‘পুরোটাই একটি সমন্বিত ও পরিকল্পিত হয়রানি। সৌদি আরব ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসও’র বিক্রি করা যন্ত্র দিয়ে আমার ও জামালের মধ্যে চালাচালি করা বার্তা পড়েছে। আমি ও জামাল টুইটারে সৌদি ট্রলকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছিলাম। আমরা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তুলতে চাচ্ছিলাম।’
সৌদির গলার কাঁটা টুইটার
আব্দুল আজিজের পাঁচ লাখের মতো ফলোয়ার রয়েছেন টুইটারে। নিজের আর্টিকেলে তিনি নিজেকে সৌদি আরবের শীর্ষ তিন টুইটার ইনফ্লুয়েন্সারের মধ্যে জায়গা দিয়েছেন। এর মধ্যে তিনি আছেন নির্বাসনে, দ্বিতীয় জনকে আটক করা হয়েছে, তৃতীয় জন নিখোঁজ রয়েছেন।
আব্দুল আজিজের মতে, ২০১৭ সালে মোহাম্মদ বিন সালমান যুবরাজ হওয়ার পর দেশটিতে টুইটারও পাল্টে গেছে। এর আগে মানুষ টুইটারে পোস্ট করে নিজেদের মত জানাতে পারতো, সমালোচনা করতে পারতো। ডি ডব্লিউ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।