কয়েকদিন ধরে আলোচনায় বিগত ৪৩ বছরের মধ্যে সবচাইতে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণি। বঙ্গোপসাগরের গভীরে সৃষ্টি হওয়া ফণি প্রবল বেগে ইতোমধ্যে ভারতের ভুবনেশ্বর, পুরী এবং উড়িষ্যায় তাণ্ডব চালিয়ে কলকাতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শনিবার সকালে বাংলাদেশে আঘাত হানবে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই ফণি। তবে শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া-বৃষ্টির সম্মূখীন হবে বাংলাদেশ।
ইতোমধ্যে ফণির প্রবাহে রাজধানীসহ সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কোথাও কোথাও বাঁধ ভেঙে গেছে, গাছ উপড়ে যাচ্ছে। তবে গতকাল পর্যন্ত আবহাওয়াবিদরা বলেছিলেন, শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় ভারতে স্থলভাগ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ক্রমশই দুর্বল হয়ে পড়বে।
তবে আজ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দীন আহমেদ বলেছেন, ফণি ইতোমধ্যে ভারতে যেভাবে আঘাত হেনেছে তা থেকে বুঝা যাচ্ছে এটি একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। বাংলাদেশে প্রবেশের সময় কিছুটা শক্তিমত্তা হয়তো কমবে কিন্তু দুর্বল বলার সুযোগ নেই।
আবহাওয়া বিষয়ক ওয়েবসাইট উইন্ডি ডট কমের স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, মহাপ্রলয়ংকারী এই ঘূর্ণিঝড় শনিবার সকাল সাতটার দিকে খুলনা উপকূল হয়ে রাজশাহী হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। তবে ফণি প্রভাবে ঝড়বৃষ্টি শুরু হবে শুক্রবার দিবাগত তিনটা-চারটার দিকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দীন আহমেদ বলেছেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণির প্রভাবে শুক্রবার রাতে বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার সৃষ্টি হতে পারে। যা সারা রাত পর্যন্ত চলবে। এরপর রাজশাহীর দিকে অগ্রসর হবে।’
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণি সমুদ্র থেকে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ভারতের ওড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করেছে। ওড়িষ্যা উপকূল অতিক্রমের সময় বাতাসের বেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার। বাংলাদেশে প্রবেশের সময় এর গতিবেগ ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার হতে পারে।’
এদিকে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের ঘুর্ণনের গতিবেগ বর্তমানে ১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটার আর এটির অগ্রসর হওয়ার গতিবেগ ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার। তবে ঘূর্ণিঝড়টি পানির সংস্পর্শে আসলে এটির গতি বাড়বে আর স্থলভাগ দিয়ে অতিক্রম করলে গতিবেগ কমতে পারে।’
সামছুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে ফণি উড়িষ্যা উপকূল থেকে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে পশ্চিমবঙ্গ-কোলকাতা হয়ে বাংলাদেশের উপকূল খুলনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সতর্কতার জন্য পায়রা ও মংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রামকে ৬ নম্বর, কক্সবাজারে ৪ নম্বর হুশিয়ারি সংকেট দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।’ ফণি খুলনা, সাতক্ষীরা, রাজশাহী ও রংপুর হয়ে উত্তরাঞ্চলের দিকে অগ্রসর হবে বলে জানান তিনি।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, অস্বাভাবিক আকার ধারণ করে বঙ্গোপসাগরের গভীরে প্রবল শক্তি সঞ্চয় করছে মহাপরাক্রমশালী এই ঘূর্ণিঝড়। ১৯৭৬ সালের পর এতো শক্তিশালী ঝড়ের মুখোমুখি হয়নি এই ভারতীয় উপমহাদেশ। ফলে ৪৩ বছরের মধ্যে এটিই সবচাইতে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। যার তাণ্ডবে ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এই অঞ্চল। ইতোমধ্যে ভারতে অনেক প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।