জুমবাংলা ডেস্ক : চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতো সাবরিনা সুলতানা নূরা। মা-বাবা, শিক্ষক ও সহপাঠীদেরও তার স্বপ্নের কথা জানাতো। চিকিৎসক হতে চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তার বাবাকে সে জানিয়েছিল, নিজের গ্রামের মানুষদের সেবা করবে সে। তার প্রতিশ্রুতি ছিল, চিকিৎসা দিয়ে কখনো টাকা নেবে না। এসএসসি পরীক্ষার পর নূরা ভালো ফলাফল করবে বলে মা-বাবাকে জানিয়ে পরবর্তী প্রস্তুতিও নেওয়া শুরু করেছিল। কিন্তু স্বপ্ন বুনার শুরুতেই সব শেষ!
গত ২৩ এপ্রিল রাতে দুর্বৃত্তদল সাবরিনা সুলতানা নূরা, তাঁর মা স্মৃতি ফাতেমা, ছোট বোন হাওয়ারিন ও একমাত্র ভাই বাকপ্রতিবন্ধী শিশু ফাদিলকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। রোমহর্ষক-নারকীয় ওই হত্যাকাণ্ডকালে দুর্বৃত্ত দল নূরা, তাঁর মা ও ছোট বোনকে ধর্ষণ করে।
বর্বরতম এই হত্যাকাণ্ডের ৩৮ দিন পর আজ রবিবার প্রকাশ হওয়া এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে নূরা।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটী ইউনিয়নের আবদার এলাকায় দোতলা একটি বাড়িতে নারকীয় ওই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। পরে র্যাব ও পিবিআইয়ের অভিযানে খুনিরাও ধরা পড়ে।
নূরার বাবা রেজোয়ান হোসেন কাজল মালয়েশিয়াপ্রবাসী। তার মা স্মৃতি ফাতেমা ইন্দোনেশিয়ান বংশোদ্ভূত।
নূরা এবার পাশের জৈনাবাজার এলাকার এইচ এ কে অ্যাকাডেমি থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এইচ এ কে অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষক শাহীন সুলতানা জানান, নূরা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল। তাঁদের বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৩৯ জন শিক্ষার্থী। নূরাসহ ৩৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
তিনি আরো জানান, ফলাফলে তাঁরা খুশি হলেও নূরা নেই তাই বিষাদ বিদ্যালয়জুড়ে। নূরার ফলাফল জেনে শিক্ষক ও সহপাঠীরা কান্নায় ভেঙে পড়ে।
মালয়েশিয়া থেকে নূরার পরীক্ষার ফল জেনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার বাবা। সেখান থেকে আজ রাত সাড়ে ৯টার দিকে মুঠোফোনে রেজোয়ান হোসেন কাজল জানান, তাঁরও স্বপ্ন ছিল বড় মেয়ে পড়ালেখা করে বড় চিকিৎসক হোক। কিন্তু এখন তাঁর আর কিছুই নেই।
রেজোয়ান হোসেন কাজল জানান, নূরা মেধাবী ছাত্রী ছিল। জেএসসিতেও জিপিএ-৫ (গোল্ডেন) পেয়ে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছিল।
তিনি জানান, নূরার মা ছিলেন খুবই ধার্মিক একজন নারী। তাঁর (নূরার মা) পরিকল্পনা ছিল, এসএসসি পরীক্ষার পর নূরাকে বিয়ে দেওয়ার। কিন্তু নূরা তাতে রাজি ছিল না। নূরা চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নটি তার মা-বাবাকে জানায়। এতে তাঁরা সায় দেন।
কান্নায় ভেঙে পড়ে রেজোয়ান হোসেন কাজল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুর্বিষহ কষ্টের স্মৃতি ছাড়া আমার এখন আর কিছুই নাই। নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পর থেকেই আমি অসুস্থ। দুই-একদিন ধরে কথা বলতে পারছি। এই মুহূর্তে আমি শুধু হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই।’- কালের কন্ঠ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।