জুমবাংলা ডেস্ক : পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সামিরা। অভাব-অনটনে বেড়ে ওঠা পরিবারের মেয়ে। প্রতিবেশী উচ্চশিক্ষিত। মুন্সিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক। তিনি সামিরার বাবাকে বড় স্বপ্ন দেখান। তার মেয়েকে লেখাপড়া করানোর পাশাপাশি বিয়ের দায়িত্বও তিনি নেবেন। তবে শর্ত হলো বাসার কাজ করে দিতে হবে। গরিবের জন্য এটাই বা কম কীসে!
কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। মেয়ে সামিরা এখন উচ্চ শিক্ষিত ওই পরিবারের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।
সামিরা (১৪) শিকার হয়েছে উচ্চশিক্ষিত ওই পরিবারের বিকৃত মানসিকতার। পাথরের শিল ও কাঠের বেলাইনের উপর্যুপরি আঘাতে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে ওই স্কুলছাত্রী। বর্তমানে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নির্যাতনের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে নির্যাতনকারী গৃহকর্তা একই গ্রামের অধিবাসী এবং মুন্সিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রশিদ ও তার স্ত্রী বিউটি আক্তারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পাকুন্দিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন সামিরার বাবা সেলিম মিয়া।
গত ২৮ জুলাই ঢাকার মিরপুরের একটি বাসায় এমন বর্বরোচিত নির্যাতনের পর বাড়িতে এনে মুমূর্ষু অবস্থায় বাবার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে টাকার বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালায় নির্যাতনকারী পরিবার।
সামিরা উপজেলার পাটুয়া ভাঙা ইউনিয়নের বাগপাড়া গ্রামের দিনমজুর সেলিম মিয়ার মেয়ে।
থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই মাস আগে একই গ্রামের পার্শ্ববর্তী বাড়ির সরকারি চাকরিজীবী ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রশিদের ঢাকার মিরপুরের ভাড়া বাসায় সামিরাকে গৃহকর্মী হিসেবে নেয়া হয়।
এ সময় কাজের পাশাপাশি তাকে লেখাপড়া করানো এমনকি বড় করে বিয়ে দিয়ে দেওয়ারও আশ্বাস দেয়া হয় সামিরার বাবাকে। কিন্তু ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর থেকেই নানা বিষয় নিয়ে গৃহকর্ত্রী বিউটি আক্তার সামিরাকে কারণে-অকারণে বকাঝকা ও মারধর করতে থাকে।
একপর্যায়ে সামিরা মারধরের ভয়ে পাশের এক বাসায় পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে গৃহকর্তা ড. মাহবুবুর রশিদ সামিরাকে আবার তার বাসায় নিয়ে আসেন। বাসায় এনে মসলা বাটার পাথরের শিল দিয়ে ড. মাহবুবুর রশিদ এবং রুটি বানানোর কাঠের বেলাইন দিয়ে গৃহকর্ত্রী বিউটি আক্তার সামিরার শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। নির্মম ও নিষ্ঠুর এ নির্যাতনে সামিরা জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
এ ঘটনার পর গত ৩০ জুলাই সামিরাকে মুমূর্ষু অবস্থায় ড. মাহবুবুর রশিদ নিজ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন। বাড়িতে এনে নির্যাতনের বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য তাকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন । পরে ড. মাহবুব মোবাইলে সামিরার বাবাকে খবর দেন তার বাড়িতে আসার জন্য।
খবর পেয়ে সামিরার বাবা ওই বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলে তার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে তার হাতে সামিরাকে তুলে দেন। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর সামিরা তার ওপর অমানবিক ও মধ্যযুগীয় নির্যাতনের বিষয়টি তার বাবার কাছে খুলে বলে।
এদিকে, সামিরার শারীরিক অবস্থারও চরম অবনতি হতে থাকলে গত ২ আগস্ট বাজিতপুরের ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান গৃহকর্তা ড. মাহবুবুর রশিদ। সেখানে চিকিৎসকগণ মুমূর্ষু অবস্থায় সামিরাকে ভর্তি না রাখায় পরে তাকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে পালিয়ে আসেন ওই গৃহকর্তা।
বর্তমানে সামিরা কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছে।
সামিরার বাবা সেলিম মিয়া জানান, অভাব-অনটনের সংসারে মেয়ের সুখের আশায় ওই শিক্ষিত প্রতিবেশীর বাসায় দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা এতো কিছু স্বপ্ন দেখিয়ে মেয়েটিকে নিয়ে তার ওপর এমন নিষ্ঠুর ও বর্বরোচিত নির্যাতন চালাবে তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। এখন আমাকে টাকা দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে চান।
এ সময় তিনি বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়ে এ ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
অভিযুক্ত গৃহকর্তা ড.মুহাম্মদ মাহবুবুর রশিদের মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
যোগাযোগ করা হলে পাকুন্দিয়া থানার ওসি মো. মফিজুর রহমান লিখিত অভিযোগ পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়ে নির্যাতিত শিশুর খোঁজখবর নেয়ার বিষয় নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি জানান, ঘটনাস্থল (পিও) যেহেতু ঢাকার মিরপুরের, তাই অভিযুক্তদের বাসার প্রকৃত ঠিকানা সংগ্রহ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অভিযোগটি তিনি সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠিয়ে দিবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।