আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শেষ কর্মদিবসগুলোতে যেকোনো সময় ইরানের উপর ‘বেপোরোয়া’ সামরিক আক্রমণ করে বসতে পারে। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। জেনারেল কাসেম সোলাইমানি হত্যার প্রথম বর্ষপূর্তিতে তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় এমন আশঙ্কা করছেন তারা।
গত মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উপসাগরের উপর দিয়ে তিনবার বি-৫২ বোমারু বিমান উড়িয়েছে। সর্বশেষ গত বুধবার তারা উপসাগরে এই বিমান উড়ায়। ট্রাম্প প্রশাসন এটাকে ৩ জানুয়ারি মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত সোলাইমানির মৃত্যুবার্ষিকীর দিন ইরানকে প্রতিশোধ নেয়া থেকে বিরত রাখার কৌশল হিসেবে বর্ণনা করেছে।
তবে, হোয়াইট হাউসে আর এক মাসেরও কম সময়ের জন্য থাকা ট্রাম্প ইরানের উপর হামলা করার জন্য তার মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান মিত্র ইসরাইল ও সৌদি আরবের পক্ষ থেকে চাপে রয়েছে। নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ও অঞ্চল অধ্যয়ন সেন্টারের পরিচালক ড্যানি পোস্টেল এ কথা জানিয়েছেন।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিতে বিশেষজ্ঞ পোস্টেল জানান, ‘যুদ্ধ-শেষের পটে ট্রাম্প অত্যন্ত আহত ও খুব কোণঠাসা একজন প্রাণী হয়ে গেছেন। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আছে তার হাতে। আর আমরা জানি যে, তিনি চরম খামখেয়ালী আচরণ করতে পারেন।’
‘যেকোনো সময় তার চরম খামখেয়ালিপনা ও চরম বেপোরোয়া আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে।’
শনিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাভ জারিফ বলেছেন, ‘ইরাক থেকে নতুন গোয়েন্দারা জানিয়েছে মিথ্যা প্রপাগান্ডা করে বিদায়ী ট্রাম্পের চোখে ধুলো দিয়ে ইসরাইলি এজেন্ট ও উস্কানিদাতারা আমেরিকানদের বিরুদ্ধে আক্রমণের চক কষছে।’ তাবে তার দাবির সপক্ষে কোন প্রমাণ দেননি তিনি।
টুইটারে ট্রাম্পকে সতর্ক করে জারিফ বলেন, ‘ফাঁদে পড়ার আগে সতর্ক হোন!’ যেকোনো স্ফুলিঙ্গ পাল্টা আগুন ধরিয়ে দিতে পারে, বিশেষ করে আপনার সবসময়ের কাছের বন্ধুর বিরুদ্ধে’।
ইরান ও বাইডেন প্রশাসন
এই সপ্তাহের শুরুতে ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছিল সোলাইমানি হত্যার বর্ষপূর্তীর পূর্বে পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত না করতে। বৃহস্পতিবার জারিফ বলেছেন, ইরাক থেকে গোয়েন্দারা যুদ্ধের অজুহাত বানানোর ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছে।
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী টুইটারে বলেন, ‘ইরান যুদ্ধ চায় না, তবে এটি সরাসরি ও প্রত্যক্ষভাবে তার জনগণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থগুলোকে রক্ষা করবে’। একই দিন, জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো একটি চিঠিতে ইরান ওয়াশিংটনের ‘সামরিক হঠকারি অভিযানের’ নিন্দা জানিয়েছে।
ইরানি কর্মকর্তারা বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোলাইমানি হত্যার ‘ভয়াবহ প্রতিশোধ’ নেয়ার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছে।
তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাওয়া জো বাইডেন যেহেতু তেহরানের সাথে পুনরায় কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চাচ্ছেন, তাই তেহরান এই মুহূর্তে ট্রাম্প প্রশাসনকে সামরিক আক্রমণের জন্য কোনো অজুহাত সৃষ্টির সুযোগ দিবে না।
ইরানের নিউক্লিয়ার চুক্তিতে পুনরায় যোগদানের ব্যাপারে বাইডেন তার পরিকল্পনা জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের সময় যুগান্তকারী এই চুক্তি যৌথ বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা (জিসিপিওএ) স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তির উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার বিপরীতে ইরান তাদের পারমাণবিক সমৃদ্ধিকে সীমিত করবে।
ট্রাম্প তেহরানের বিরুদ্ধে তার প্রশাসনের ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের প্রচারণার অংশ হিসেবে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে এই চুক্তি থেকে বের করে নেয়। একই সময় ওয়াশিংটন তেহরানের কিছু প্রধান শিল্পের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
এই সপ্তাহে আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ জিসিপিওএ নির্ধারিত সীমারেখার চেয়েও ১২ গুণ কমিয়েছে। শুক্রবার ইরান আইএইএকে জানিয়েছে তারা তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ২০ শতাংশ বাড়াবে। যেটা জিসিপিওএ নির্ধারিত সীমারেখার কম।
সূত্র : আলজাজিরা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।