সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ: বর্তমান সরকার চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন করতে নিরলসভাবে কাজ করলেও মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসকরা নির্ধারিত সময়ের ডিউটি না করে ডিউটি ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ অসহায় রোগীরা। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিজ জেলায় সরকারি হাসপাতালের কর্মরত ডাক্তারদের দীর্ঘদিনের এমন কর্মকাণ্ডে নাজেহাল সাধারণ রোগীরা।
জানা গেছে, মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট থাকায় কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনেক চিকিৎসক এখানে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। রুটিন অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ডিউটি থাকলেও মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধিকাংশ চিকিৎসক আসেন প্রায় ১০টার পরে। অনেকেই আবার ডিউটিতে যোগ দিয়েই ওয়ার্ড রাউন্ডে যান। জেলার একমাত্র আধুনিক সরকারি হাসপাতাল হওয়ায় দূর দুরান্ত থেকে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সাধারণ রোগীরা আসেন চিকিৎসা নিতে। এসব পরিবারের লোকজন হাসপাতালে এসেই ভোগান্তিতে পরেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের এমন চিত্র নিত্যদিনের। এখানে অধিকাংশ ডাক্তাররা আসেন প্রায় ১০টার দিকে আবার চলে যান ১ টার আগেই। সাধারণ অসহায় রোগীরা সরকারি হাসপাতালে এলেও যন্ত্রপাতি নেই বা নষ্ট হয়ে গেছে এমনসব অযুহাতে রোগীদের প্রাইভেট চেম্বারে যেতে বাধ্য করা হয়। সেখানে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভিজিট দিয়ে ডাক্তার দেখাতে হয় গরীব অসহায় রোগীদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নতুন ভবনের ২১২ ও ২১৩ নং রুমের সামনে রোগীরা জটলা বেঁধে দাড়িয়ে আছে। ঘড়ির কাটা তখন প্রায় দশটার দিকে। ২০৪ নং রুমের সার্জারি বিভাগের সামনেও দাড়িয়ে আছেন অনেক রোগী, কিন্ত কোন রুমেই চিকিৎসক নেই। এমনটাই নজরে পড়ে হাসপাতালের অধিকাংশ ডাক্তারের রুমের সামনে। গত শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ২১২ নং রুমের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ দিলীপের চেম্বারে গেলে দেখা যায় তিনি চেম্বারে নেই। বাইরে অনেক রোগী টিকিট হাতে ডাক্তারের অপেক্ষায় আছে। ওই রুমে থাকা ডাক্তারের সহকারী জানান, স্যার সাড়ে নয়টার দিকে আসছে। তিনি এখন রাউন্ডে আছেন। রাউন্ড শেষে আউটডোরের রোগী দেখবেন। এরপর দুপুর ১টা ২০ মিনিটে সেই চেম্বারে গেলে রুমটি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। পাশেই থাকা হাসপাতালের ঝাড়ুদার নাসিমা জানান, ডাক্তার সাহেব একটু আগে চলে গেছেন।
পুুরাতন ভবনের ২৮ নং রুমের সামনে জটলার মধ্যে দাড়িয়ে থাকা রোগী রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার বাড়ি সদর উপজেলার বেতিলা গ্রামে। সকাল সাতটা সতেরো মিনিটে হাসপাতালে এসে সাড়ে সাতটার সময় টিকিট নিয়েছি। এখন প্রায় সাড়ে দশটা বাজে, এখনো ডাক্তার আসেনি। তত্ত্বাবধায়কের রুমে গেলাম বিষয়টি জানাতে, সেখানে গিয়ে দেখি তিনিও নাই। আরএমও সাহেবের কাছে বলতে গেলাম তাকেও পেলামনা। আর কত ধৈর্য ধরবো?
সকাল ১০টা দশ মিনিটে অর্থোপেডিকস বিভাগের ২১৪ ও ২১৫ নং রুমের সামনে দাড়িয়ে থাকা রোগীদের মধ্য থেকে কথা হয় সাটুরিয়া উপজেলার পারতিল্লি এলাকার জামাল ও সদর উপজেলার বালিরটেক থেকে আসা সিজান রিফাত নামে দুই রোগীর সাথে। তাদের দুজনেরই হাত ভাঙা। সিজানের মা জানান, বালিরটেক থেকে এসেছেন সকাল ৮টার সময়। কিন্তু দশটার বেশি বেজে গেলেও তখনো ডাক্তার আসেনি। ছেলেটা হাত ভাঙ্গা ব্যাথায় কাতরাচ্ছে।
সদর উপজেলার সরুপাই এলাকা থেকে আসা নাসিমা আক্তার নামের এক রোগী বলেন, প্রায় দেড় ঘন্টা হয় দাড়িয়ে আছি। এখনো ডাক্তার ডাক্তার আসেনাই। আর কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে হবে জানিনা। ডাক্তার দেখাতে আসা সুকুমার নামের আরেক রোগী বলেন, একা একা চলতে কষ্ট হয় তাই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। দু’ঘন্টার বেশি হয় এখনও ডাক্তার আসে নাই।
ডিউটিতে দেরি করে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ দীলিপ কুমার বলেন, ডিউটিতে কখন যাবো আসবো সে বিষয়ে আপনাদের কাছে বলবো কেন? আপনার কিছু জানার থাকলে প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে কথা বলেন।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ ২৫০শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ আরশ্বাদ উল্লাহ বলেন, আমার হাসপাতালের কোন ডাক্তার দেরি করে আসলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তাররা দেরি করে আসলে আমরা তেমন চাপ দিতে পারিনা।
এ বিষয়ে কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ জাকির হোসেন বলেন, আপনারা জানালেন, আমি বিষয়টা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, আমি সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলে বিষয়টা খতিয়ে দেখে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা দেখবো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।