মো: সজল আলী, মানিকগঞ্জ থেকে: দিনের আলো নিভে আধাঁর নেমে এলেই পাল্টে যায় হরিরামপুর উপজেলার চিত্র। দেখা মেলে একের পর এক মাটির ট্রাকের সারি। চলাচলের কাঁচা ও পাকা রাস্তাগুলো দিনের চেয়েও বেশি ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে। উপজেলার ফসলি জমির বুকের উপর যেন ভেকু নামক হায়েনার থাবা ! আবাদযোগ্য কৃষি জমিতে ভেকু বসিয়ে মাটি কেটে ব্যবসা করছে অসাধুচক্র। এতে শত শত বিঘা জমির শ্রেণী পরিবর্তন হয়ে নষ্ট হচ্ছে তিন ফসলী জমি। প্রতিরাতে ভেকুর আগ্রাসী দাঁত বসিয়ে উপজেলার কৃষি জমিগুলো কেটে চৌচির করা হচ্ছে আর সে মাটি বহন করা হচ্ছে সদ্য ও আগের তৈরী করা কাঁচা ও পাকা রাস্তার উপর দিয়ে। মাটিভর্তি ভাড়ী ট্রাক দ্রুত বেগে চলাচলের কারণে রাস্তাগুলো ক্ষত-বিক্ষত হয়ে ভেঙ্গেচুড়ে যাচ্ছে। দিনের পর দিন তারা এভাবেই ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাতের আধাঁরে কৃষি জমির মাটি লুট করে ব্যবসা করছে, রাতারাতি অর্থবিত্তের লোভে। কিছুতেই থামছে না এ অবৈধ মাটি ব্যবসা। দিন দিন বেড়েই চলছে এ অসাধুচক্রের দৌরাত্ব্য।
জানা যায়, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার গালা, বাল্লা, চালা, বয়রা ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে চলছে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার মহোৎসব। গত এক মাস ধরে রাত ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত অন্তত ১০ থেকে ১৫ টি স্থানে ৫ থেকে ১০ ফুট গভীর পর্যন্ত মাটি কাটা হচ্ছে। কৃষকের কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় জমির মাটি কিনে নেন ব্যবসায়ীরা। জমি থেকে মাটি কাটার চুক্তি হয় তিন থেকে চার ফিট পর্যন্ত। পাশের জমি উচুঁ নিচু হওয়ার কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে তাদের জমির মাটিও বিক্রি করে দেন। আবার ফসলি জমির উপর দিয়ে মাটির ট্রাক চলাচলের কারণে ফসল ও গর্ত হয়ে জমির স্বাভবিকতা নষ্ট হয়ে গেলে তাদেরকেও প্ররোচিত করা হয় মাটি দেওয়ার জন্য ফলে বাধ্য হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকও উৎপাদনক্ষম জমির মাটি বিক্রি করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার চালা ইউনিয়নের কচুয়া ঈদগাহ মাঠের পাশে, ইজদিয়া গ্রামে, দিয়াপাড়, বাল্লা ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামের জইল্লার চকে, সরাই গ্রামে, ভাদিয়াখোলা, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের নয়াকান্দি এলাকায় চলছে আবাদি জমি কাটার হিড়িক। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আমিনুল ইসলাম মিল্টন, কামাল হোসেন, রজ্জব, আনোয়ার হোসেন ও ছাত্র লীগের সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম আরোজ ও সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান ফিরোজসহ রাজা, দুলাল সূত্রধর, শেখ রুবেল, সোহাগ ও শাজাহান মন্ডল এই মাটি ব্যবসার সাথে জড়িত।
স্থানীয় এক কৃষক বলেন, “ব্যবসায়ীরা আমাদের মাটি বিক্রির ব্যাপারে উৎসাহিত করছে। জমির কোনো ক্ষতি হবে না। বর্ষা এলে জমির সেই মাটি পূরণ হয়ে ফসল ফলানো যাবে।”
আর মাটি ব্যবসায়ীরা বলছেন, “কৃষকদের যেসব জমিতে চাষাবাদ হয় না সেসব জমির মাটি আমাদের কাছে বিক্রি করেন। আমরা এগুলো সরকারি রাস্তায় ও ভিটাবাড়ির ভরাটের কাজে বিক্রি করে থাকি।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল গাফফার জানান, “মাটির উপরিভাগের ১০-১৫ ইঞ্চির মধ্যে উর্বরতা শক্তি থাকে। মাটি খুঁড়ে বিক্রি করার ফলে তা পুনরায় ফিরে আসতে সময় লাগে। এছাড়া মাটির এই অংশে যে কোনো ফসল বেড়ে উঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। বীজ রোপণের পর এই অংশ থেকেই ফসল প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে বড়ো হয়। এটাকে টপ সয়েল বলে। এই টপ সয়েল একবার কেটে নিলে সে জমিতে আর প্রাণ থাকে না। এতে দিন দিন ফসলি জমির উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। চাষাবাদের স্বার্থে ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধ হওয়া দরকার।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, “অবৈধভাবে মাটি কাটার খবর পেলে আমরা সেখানে অভিযান চালাই। এরপর থেকে জমির মালিক ও মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলায় যাব।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।