স্পোর্টস ডেস্ক : লর্ডসে রোববার মহানাটকীয় ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছে ইংল্যান্ড। যদি প্রশ্ন করা হয়, ইংল্যান্ড ম্যাচটা জিতল কিভাবে, কখন? ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে, ইংল্যান্ড ম্যাচটা জিতেছে ‘বাউন্ডারি আইনে’। মানে ম্যাচে বেশি বাউন্ডারি মারার সুবাদে।
কিন্তু, কাল লর্ডসের ফাইনাল যারা দেখেছেন, তারা বলবেন, ইংল্যান্ড আসলে জিতেছে সেই ওভার থ্রু নাটকে! যে ওভার থ্রুকাণ্ডে ইংল্যান্ড ২ রানের পরিবর্তে পেয়েছে ৬ রান!
ইংল্যান্ডের তখন দরকার ছিল ৩ বলে ৯ রান। খুবই কঠিন সমীকরণ। এই অবস্থায় ট্রেন্ট বোল্টের চতুর্থ বলটি ছিল ইয়র্কার। বেন স্টোকস হাঁটু গেঁড়ে বল ডিপ মিড-উইকেটে পাঠিয়ে দিয়েই ছুটলেন রানের জন্য। সতীর্থ আদিল রশিদকে নিয়ে প্রথম রানটি ভালোভাবে পূর্ণ করার পর দ্বিতীয় রানের জন্য দৌড়ালেন। ডিপ-মিডউইকেট থেকে মার্টিন গাপটিল দ্রুততার সঙ্গে বল কুড়িয়ে নিয়ে নিখুঁত থ্রু করলেন বেন স্টোকসের প্রান্তে।
থ্রুটি এতটাই নিখুঁত ছিল যে, রিপ্লেতে মনে হয়েছে- বল বেন স্টোকসের ব্যাটের কানায় না লাগলে সরাসরি উইকেটে আঘাত হানতো। সেটা হলে বেন স্টোকস হয়ে যেতেন রানআউট! কারণ, বলটি তার ব্যাটে লাগে পপিং ক্রিজ ছোঁয়ার আগেই।
বেন স্টোকস রানআউট হতেন, যদি বলটি তিনি ইচ্ছা করে নিজের ব্যাটে লাগাতেন! কিন্তু, ইংলিশ অলরাউন্ডার ইচ্ছা করে বলে ব্যাট লাগাননি। রানআউটের খড়্গ থেকে বাঁচতে তিনি সজোরে ড্রাইভ দিয়েছিলেন। সৌভাগ্যবশতঃ বল তার ব্যাটে লেগে দিক বদলে পেরিয়ে যায় বাউন্ডারি সীমানা।
শ্রীলঙ্কান আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা সঙ্গে সঙ্গে হাত উঁচিয়ে সিগনাল দিলেন ৬-এর। ২ রানই যেখানে হয় না, ইংল্যান্ড সেখানে পেয়ে যায় ৬ রান! পরের ২ বলে ২ রান নিয়ে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা করে টাই। সেই পরের দুই বলেও নাটক হয়েছে। দু’বারই দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়েছেন আদিল রশিদ ও মার্ক উড।
এরপর সুপার ওভার নাটক। সেখানেও স্কোর টাই হওয়ায় (দু’দলেরই রান সমান ১৫ করে) ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হয় বাউন্ডারি আইনে! যে আইনটাকে সাবেক ক্রিকেটাররা আখ্যায়িত করেছেন ‘অদ্ভূত’ বলে! যাই হোক, ওভার থ্রুতে ওই ৬ না হলে ম্যাচের ফলটা অন্যরকমই হতে পারতো। কে জানে হয়তো ইংল্যান্ডের পরিবর্তে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুটটা এখন শোভা পেতো নিউজিল্যান্ডের মাথায়!
চরম মুহূর্তে ওভার থ্রুতে বাড়তি ৪ রান পাওয়া, ইংলিশরা সৌভাগ্যবানই বটে। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নও উঠে গেছে! মানে ইংলিশদের সৌভাগ্যের সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে বিতর্কের কালো তিলকও! না, পরাজিত কিউইরা প্রশ্ন তুলেনি। প্রশ্নটা উসকে দিচ্ছে, ক্রিকেটের ‘ওভার থ্রু’র আইনটিই!
৬ নয়, ওই ওভার থ্রু থেকে আইনত ইংল্যান্ডের নাকি পাওয়া উচিত ছিল ৫ রান! ‘ওভার থ্রু ও ফিল্ডারের ইচ্ছাকৃত আচরণ’ (ইচ্ছাকৃত থ্রু) আইনের ১৯.৮ ধারায় আছে, ওভার থ্রুতে বা ফিল্ডারের ইচ্ছাকৃতে আচরণে বাউন্ডারি হলে জরিমানা হিসেবে সেই বাউন্ডারি বা ওভার থ্রু থেকে প্রাপ্ত রান প্রতিপক্ষ দল পাবে। তবে শর্ত হলো, থ্রুটা যদি করা হয় ব্যাটসম্যানরা রান পূর্ণ করার পর।
কিন্তু, কাল বেন স্টোকস তো দ্বিতীয় রানটা তখনো পূর্ণ করতে পারেননি। তিনি নিরাপদে ক্রিসে পৌঁছার আগেই বল তার ব্যাটের কানায় লেগে বাউন্ডারি হয়েছে। সেক্ষেত্রে তাদের দৌড়ে পূর্ণ করা ১ রানের সঙ্গে বাউন্ডারির ৪, মোট ৫ রান পাওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু, আম্পায়ার ধর্মসেনা ২ রান হয়েছে ধরে নিয়েই তার সঙ্গে বাউন্ডারি মিলিয়ে ইংল্যান্ডকে ৬ রান দিয়েছেন! ওই ১ রানও যদি কম পেতো ইংল্যান্ড, তাহলেও ম্যাচের ফলটা অন্য রকম হতে পারত। ইংল্যান্ড আসলে সব দিক দিয়েই ভাগ্যবান! কিউইরা আম্পায়ারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেনি। ব্যাখ্যাও কেউ চায়নি। তবে চাইলে ব্যাখ্যা হয়তো আইসিসি দিতোও। কিন্তু, ক্রিকেটের আইনের সুক্ষ্ম ধারাগুলো যদি আরও সুক্ষ্ম হতো, তাহলে কোনো রকম দ্বিধাদ্বন্দ্বই থাকতো না!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।