জুমবাংলা ডেস্ক : মা ইলিশ রক্ষায় গত ১২ অক্টোবর থেকে সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময়ে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। পদ্মা, মেঘনাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের নদীগুলোতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, মৎস্য অফিস ও নৌ-পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত টিম বারবার অভিযান চালাচ্ছে। তারপরও সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা মাছ ধরছেন, ধরা পড়লেই তাদের জেল-জরিমানা করা হচ্ছে।
তবে দেশের জেলেরা ইলিশ ধরা নিয়ে নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকলেও ভিন্ন চিত্র দেখা যায় রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা-সংলগ্ন পদ্মা নদীতে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চারঘাট উপজেলার পদ্মা নদীতে সরেজমিনে দেখা যায়, কিছু জেলে নৌকা করে অবাধে ইলিশ শিকার করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ট্রলার তাদের কাছে গেলেও এই জেলেরা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই জেলেরা সবাই ভারতীয়। জলসীমা পেরিয়ে অবলীলায় বাংলাদেশের অংশে ঢুকে তারা ইলিশ শিকার করছেন। এসময় নিশিথ মণ্ডল নামে এক জেলের সঙ্গে কথা হয়। ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী এলাকার এই জেলে বলেন, নিষেধাজ্ঞা তো বাংলাদেশিদের জন্য। আমাদের সরকার কোনো কিছু নিষেধ করেনি। এ জন্য আমরা মাছ ধরা বন্ধ রাখিনি। অন্য সময় তেমন মাছ পাওয়া যায় না, বরং এ সময় পদ্মায় মাছ ধরা বেশি লাভজনক।
শুধু নিশিথ মণ্ডল নন, এভাবে চারঘাট-বাঘা সীমান্তে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে শত শত ভারতীয় জেলে প্রতিদিন ধরে নিয়ে যাচ্ছেন মা ইলিশ। স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, পদ্মার জলসীমায় ঢুকে ভারতীয় জেলেরা অবাধে ইলিশ শিকার করছেন। বিএসএফের সহযোগিতায় নির্বিঘ্নে নদীতে মাছ ধরতে নামেন তারা। পদ্মার চারঘাট-বাঘা দুই উপজেলায় বাংলাদেশ-ভারতের জলসীমা প্রায় ৪৮ কিলোমিটার। এই জলসীমায় প্রশাসন অভিযান চালিয়ে স্থানীয় জেলেদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলেও ভারতীয় জেলেদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না তারা; যা নিয়ে ক্ষুব্ধ নিষেধাজ্ঞার কারণে বেকার হয়ে পড়া বাংলাদেশি জেলেরা। উপজেলার পিরোজপুর মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি তাজমুল হক বলেন, সরকারি নিয়ম মেনে আমরা নৌকা ডাঙ্গায় তুলে ঘরে বসে আছি। অথচ নিষেধাজ্ঞার সময়ে ভারতের জেলেরা আমাদের সীমানার মধ্যে এসে মাছ ধরছেন, বিক্রি করছেন। বিষয়টি আমরা প্রশাসনকেও জানিয়েছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
চারঘাট মৎস্য অফিস জানায়, ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞার সময়ে পদ্মা নদীর সীমানায় ঢুকে মাছ শিকারের অভিযোগে প্রণব মণ্ডল নামে ভারতীয় এক জেলেকে আটক করে বিজিবি। পরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে গোলাগুলিও হয়। এতে এক বিএসএফ সদস্য মারা যান। এরপর থেকে গত কয়েক বছর চারঘাট সীমান্তে ভারতীয় জেলেরা মাছ ধরতে আসতেন না। কিন্তু এ বছর আবারও ভারতীয় জেলেরা মাছ ধরতে এ দেশের সীমানায় প্রবেশ করছেন। বিষয়টি নিয়ে মৎস্য অফিসও বিব্রত।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওয়ালিউল্লাহ মোল্লাহ বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গেলে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সেটাও চিন্তা করতে হচ্ছে। বিজিবির মাধ্যমে বিএসএফের কাছেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিজিবির চারঘাট ইউসুফপুর কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এখানকার পদ্মা নদীতে দুই দেশের জেলেরা মাছ ধরেন। দেশে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে, কিন্তু ভারতে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তাদের জেলেরা নদীতে নামছেন। ভারতীয়দের আমরা বারবার নিষেধ করছি। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারাও তাদের জেলেদের সতর্ক করছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।