জুমবাংলা ডেস্ক : ঘি তৈরির মূল উপাদান ননি। সেই ননি তৈরি হয় দুধ থেকে। অথচ চট্টগ্রামের বিএসপি কারখানায় ননি কিংবা দুধের কোনো উপাদান ছাড়াই তৈরি হচ্ছে ঘি। বাহারি মোড়কে প্যাঁচানো কৌটায় লেখা– খাঁটি দুধের সর থেকে তৈরি গাওয়া ঘি। রয়েছে বাহারি নামের সঙ্গে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআইর) অনুমোদনের সিলও। কৌটার ভেতরে হালকা হলুদ রঙের সুগন্ধি ঘি দেখে ভোজনরসিক যে কারোরই লোভ হবে। কিন্তু সন্দেহবশত পরীক্ষা চালানোর পরে বেরিয়ে এলো এই তথাকথিত আসল গাওয়া ঘির রহস্য।
এতে দুধের কোনো উপাদান তো নেই-ই, উল্টো পাম অয়েল, ডালডা, সুজির সঙ্গে রং, ফেভিকলের আঠা আর সুগন্ধি মিশিয়ে চুলায় তৈরি হচ্ছে এই ভেজাল ঘি। কল্পনা কমোডিটিস নামে প্রস্তুতকারক যে কারখানার নাম ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি যেমন অনুমোদনহীন, বিএসটিআইর অনুমোদনের সিলটিও ভুয়া।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসেন বলেন, সারা বছরই ভেজাল ঘিয়ের কারবার চলে। তবে রোজার মাসে ঘির চাহিদা বেড়ে যায়। এই সুযোগ কাজে লাগাতে কিছু অতিলোভী ব্যবসায়ী ভেজাল ঘি তৈরি করে। এভাবে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নগরীর বায়েজিদের বিসিক শিল্প এলাকায় অবস্থিত এই কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। যেখানে তৈরি করা হচ্ছিল ১০ ধরনের ভেজাল ঘি! সে সময় কারখানাটি থেকে প্রায় হাজার কৌটা ভেজাল ঘি জব্দের পর ধ্বংস করেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। লাইসেন্স বাতিল করে কারখানা সিলগালাও করা হয়।
পুলিশ, র্যাব নিয়ে জেলা প্রশাসন, বিএসটিআইর অভিযানে নানা সময় এমন প্রচুর ভেজাল ঘি উদ্ধার এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রায় প্রতিটি ভেজাল ঘি তৈরিতেই বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত উপাদান মেশানো হচ্ছে বলে প্রমাণ পেয়েছে বিএসটিআই। এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। চট্টগ্রামের সাধারণ মুদি দোকান থেকে অভিজাত চেইনশপেও দেদার বিক্রি হচ্ছে ভেজাল ঘি।
গত বছরের ১৩ অক্টোবর ভেজাল ঘি তৈরির অভিযোগে ৪টি বৈধ প্রতিষ্ঠানের ঘির লাইসেন্স বাতিল করে বিএসটিআই।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো– বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডী চরখিদিরপুর এলাকার এইচএস ফুড প্রডাক্টসের সোনালী স্পেশাল ঘি, বাকলিয়া শাহ আমানত সেতু এলাকার এমআর কনজ্যুমার প্রডাক্টসের পাকোয়ান ঘি, পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগের হযরত হামজা খাঁ লেনের মেসার্স যমুনা কেমিক্যাল ওয়ার্কসের স্পেশাল ঘি, গোল্ড ও হোমল্যান্ড ঘি এবং কালুরঘাট বিসিক শিল্পনগরীর বিএসপি ফুড প্রডাক্টস লিমিটেডের মনোরমা ঘি।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সাবেক সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, যেসব ক্ষতিকর দ্রব্য দিয়ে ভেজাল ঘি তৈরি করা হয়, তা খেলে ক্যান্সার, লিভার সমস্যা, পেটের সমস্যাসহ শরীরে নানা রোগ দেখা দিতে পারে। তাই ঘি কেনার আগে অবশ্যই এর মান নিশ্চিত হতে হবে।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের সহকারী পরিচালক মোস্তাক আহমেদ বলেন, অবৈধ কারখানার পাশাপাশি অনেক বৈধ কারখানায়ও ভেজাল ও নিম্নমানের ঘি তৈরির অভিযোগ রয়েছে। ফলে লাইসেন্সধারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাজারজাত করা ঘিসহ অন্যান্য পণ্যেরও মান যাচাই করা হয়। গত অক্টোবরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাজারজাতকৃত পণ্যের মান যাচাইয়ের লক্ষ্যে খোলাবাজার ও কারখানা পরিদর্শন করে কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষার ফলাফলে অন্য কোনো ফ্যাট মিশিয়ে ভেজাল ঘি উৎপাদন করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। লাইসেন্সের শর্ত লঙ্ঘন করায় বিএসটিআই এসব প্রতিষ্ঠানের ঘির লাইসেন্স বাতিল করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।