জুমবাংলা ডেস্ক : টানা তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে পর্যটক ও বনজীবীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। আজ শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বনে গেছেন দেড় হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক।
এরমধ্যে বাগেরহাটের মোংলা, খুলনা ও ঢাকা থেকে নয়টি বিলাসবহুল ক্রুজার ও লঞ্চে করে ৩৪৯ জন দেশি-বিদেশি পর্যটক তিন দিনের ভ্রমণে সুন্দরবন গেছেন। অন্য পর্যটকরা লোকালয় সন্নিহিত সুন্দরবনে করমজল, হারবাড়ীয়া আন্ধারমানিক, শরণখোলা, আলীবান্ধা, শেখেরটেক, কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র এলাকা ভ্রমণ করে সন্ধ্যার আগেই ফিরে এসেছেন। এছাড়াও দুই শতাধিক বনজীবী জেলে বিশ্বখ্যাত শীলা কাঁকড়া, ইলিশসহ অন্যান্য মাছ শিকারে এক সপ্তাহের পাশ-পারমিট নিয়ে সুন্দরবনে গেছেন। বিকালে সুন্দরবন বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার মো. আজাদ কবির জানান, বন্যপ্রাণী ও মৎস্য সম্পদের প্রজনন মৌসুম শেষ হওয়ার পর সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটকের ঢল নেমেছে। শুক্রবার প্রথম দিনেই ৯টি বিলাসবহুল ক্রুজার ও লঞ্চে করে ৩৪৯ জনসহ বিকাল পর্যন্ত লোকালয় সন্নিহিত সুন্দরবনের ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ১৫০০ দেশি বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছে। এরমধ্যে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রেই এসেছে ৪০০ পর্যটক। সুন্দরবনে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিকের খাবার প্লেট, পানি-সফট ড্রিংকসের বোতল, ক্যান ও শপিং ব্যাগসহ নিয়ে পর্যটকরা সুন্দরবরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য কঠোর নজরদারি শুরু করা হয়েছে। পর্যটকদের জন্য সুন্দরবনে নতুন করে চারটি ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রসহ নতুন কয়েকটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। সুন্দরবনে এই প্রথম করমজল ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে একটি ঝুলন্ত সেতু, তথ্য কেন্দ্র নির্মাণসহ সকল ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় গোটা সুন্দরবনে পর্যটকদের অবাধ যাতায়াত নিরুৎসাহিত করে সকল ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র মুখি করতে বন বিভাগ চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
সুন্দরবন ট্যুর অপারেটর রয়েল ট্যুর এন্ড রয়েল হোটেল মালিক গোলাম রহমান বিটু জানান, সুন্দরবন শুধু জীববৈচিত্র্যের আধার, অফুরন্ত অক্সিজেনের ভাণ্ডারই নয়, এই ম্যানগ্রোভ বনের বিশাল জলভাগ বিশ্বের বৃহৎ জলাভূমি আন্তজার্তিক রামসার এলাকাও। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টায় ছয় বার রূপ বদলানো সুন্দরবন দেখতে দেশি-বিদেশি ইকোট্যুরিস্টদের আগ্রহের শেষ নেই। সুন্দরবন খুলে দেয়ার প্রথম দিনই ট্যুর অপারেটদের ৯টি বিলাসবহুল ক্রুজার ও লঞ্চে করে ৩৪৯ জন দেশি-বিদেশি পর্যটক তিন দিনের ভ্রমণে সুন্দরবন গেছেন। এরমধ্যে সাতটি খুলনার, একটি মোংলার ও একটি ঢাকার। এখন বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় পর্যটকরা পহেলা নভেম্বরের আগে সুন্দরবনের হিরনপয়েন্ট ও দুবলা যেতে পারবেন না। এখন পর্যটকবাহী ক্রুজার ও লঞ্চগুলো সুন্দরবনের করমজল, হারবারিয়া, কটকা, কচিখালী ও ডিমেরচর রুটে যাতায়াত করবে। সুন্দরবন উন্মুক্ত হবার খবরে দেশি বিদেশি পর্যটকদের চাপ বেড়েছে। প্রায় সব ট্যুর অপারেটরের পর্যটকবাহী লঞ্চ ও বিলাসবহুল ক্রুজারের কেবিন এক সপ্তাহ আগেই বুক হয়ে গেছে। পর্যটকদের চাপ এভাবে শীত মৌসুমের আগ পর্যন্ত থাকলে তিন মাস বন্ধের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। প্রজনন মৌসুমে তিন মাস গোটা সুন্দরবনে ভ্রমণ বন্ধ না করে পর্যটন শিল্পের বিকাশে এই ম্যানগ্রেভ বনের লোকালয়ের পাশের ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র ভিত্তিক পর্যটন চালুর দাবি জানান তিনি।
৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটারের আয়তনের এই সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কটকার জামতলা সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার রয়েছে অপূর্ব সুযোগ। সুন্দরবনে সুন্দরীসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির অর্কিড ও ৩০০ প্রজাতির পাখি, ১১৪টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, দুই লাখ হরিণ, কিংকোরাসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। এই ম্যানগ্রেভ বনের ৩টি এলাকা ১৯৯৭ সারের ৬ ডিসেম্বর ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হ্যরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করে। এই বনের ১৮৭৪ বর্গ কিলোমিটার জলভাগে কুমির, বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতীসহ ছয় প্রজাতির ডলফিনসহ রয়েছে ২৯১ প্রজাতির মাছ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।