বাপ্পা মৈত্র : সিলেট ও সুনামগঞ্জের চার উপজেলার মানুষ এক সময় এ নদী ব্যবহার করে চলাচল করত। নদীর পানি ব্যবহার হত ফসলি জমির সেচে। এই নদীতে মাছ শিকার করে সংসার চলত অনেকের। তীরে গড়ে ওঠা বাজারগুলোতে ব্যবসায়ীরা মালামাল আনতেন নদীপথেই।
সেসব এখন অতীত। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার এক সময়ের খরস্রোতা নদী বাসিয়া এখন দূষণ-দখলে অস্তিত্ব হারানোর পথে।
বিশ্বনাথ উপজেলার বিশঘর গ্রামের ৪৭ বছর বয়সী সাদিক আলী আক্ষেপ করে বলছিলেন, “আমার বয়স যখন ১৫ বছর, তখন দেখেছি বড় বড় নৌকা, কার্গো মালামাল নিয়ে বাজারে আসত। নদীর পাড়ে এই ঘরগুলো আগে ছিল না।
“নদীর তীর দখল করে ঘর, বাসাবাড়ি, বাজার, দোকান বানানো হয়েছে। বাজারের ময়লার জন্য নদীর পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। গন্ধে চলাচল করা দায়। বাজারের চারপাশে সারাক্ষণ দুর্গন্ধ থাকে। নদীটা মেরে ফেলা হচ্ছে, অথচ দেখার কেউ নেই!”
বছরের পর বছর ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করা হয়েছে বাসিয়ার তীর। সেখানে গড়ে উঠেছে দোকান, বসতঘর ও বিপণিবিতান। নদীর বিভিন্ন অংশ সংকীর্ণ হতে হতে পরিণত হয়েছে নর্দমায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা একদিকে আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ট; অন্যদিকে নদীর দূষিত পানি দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। নদী তীরবর্তী বাজারের অনেক দোকানদার চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দূষণ ঠেকানো না গেলে ভবিষ্যতে ক্যান্সারের মত মরণব্যাধির ঝুঁকি রয়েছে বলে হুঁশিয়ার করেছেন চিকিৎসকরা।
সংকটাপন্ন নদীটি বাঁচাতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে, তাতে লাভ হয়নি। আন্দোলনকারীদের ভাষ্য, দখলদারের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। এর মধ্যে পৌনে দুইশ দখলদারের বিরুদ্ধে মামলাও চলছে।
বিশ্বনাথ বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. শামীম আহমদ এ পরিস্থিতির জন্য পৌর কর্তৃপক্ষকে দুষলেন।
তিনি বলেন, “ময়লা-আবর্জনা সঠিক স্থানে ফেলা হচ্ছে কি-না, সেটা দেখার দায়িত্ব পৌরসভার। কিন্তু পৌরসভার কর্মীদেরই বাজারের ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলতে দেখা গেছে। পৌর কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছ থেকে ভ্যাট, ট্যাক্স নিচ্ছে; তবে জনগণকে সঠিকভাবে সেবা দিচ্ছে না। বণিক সমিতি কিন্তু ব্যবসায়ীদের নদীতে বাজারের ময়লা-আবর্জনা না ফেলতে জানিয়ে দিয়েছে।”
এদিকে মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবরে ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ এর ৩৮ ধারা মোতাবেক’ বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন কাউন্সিলরদের একাংশ।
সেই অনাস্থা প্রস্তাবে বাসিয়া নদীতে ময়লা ফেলার বিষয়টিও তারা উল্লেখ করেছেন। কাউন্সিলররা বলেছেন, “মেয়র মুহিব রাজস্ব খাত থেকে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার ব্যয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। পৌরসভার টাকা অন্য ইউনিয়নে ও অন্য উপজেলায় স্বদর্পে বিতরণ করেন।
“অথচ পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ল্যান্ড ফিল্ড) স্থাপনা না করেই পৌর এলাকার ময়লা-আবর্জনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত প্রবাসী চত্বর, হাজী মফিজ আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ, মাদানিয়া মাদরাসার পাশে ও বাসিয়া নদীতে ডাম্পিং করছেন।”
এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “সরাসরি অফিসে এসে কথা বলেন।” এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।
বাসিয়ার ইতিকথা
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সদর উপজেলার মাসুকগঞ্জ বাজারের সুরমা নদী থেকে বাসিয়া নদীর উৎপত্তি; মিশেছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার খাইকা এলাকায় কুশিয়ারা নদীতে গিয়ে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪২ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৬০ মিটার।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় সিলেট সদর-দক্ষিণ সুরমা-বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর-জগন্নাথপুরের লোকজনের চলাচলের পথ ছিল বাসিয়া নদী। এ নদীতে চলত লঞ্চ-স্টিমার ও পালতোলা নৌকা।
কিন্তু গত দুই-তিন দশক ধরে মাসুকগঞ্জ বাজারে বাসিয়া নদীর উৎস মুখ ও স্বাধীন বাজারে নিষ্পত্তি মুখ দুটি বন্ধ। বিশ্বনাথসহ বিভিন্ন এলাকার নদীর দুই তীর অবৈধভাবে দখল, ময়লা-আবর্জনা ফেলে একটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নদী তীরবর্তী ফসলি জমি।
উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নদীর দুই তীরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে আদালতে ১৮৭ জনের নামে মামলা চলছে। অন্যদিকে দখলকারীদের করা দুটি রিট আবেদন হাই কোর্টে বিচারধীন। এসব মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সম্ভব হয়নি।
১৮৭ জন অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে মামলা চললেও পুরো নদীতে পাঁচ শতাধিক দখলদার রয়েছেন বলে মো. ফজল খানের ধারণা। তিনি স্থানীয়দের সংগঠন ‘বাঁচাও বাসিয়া নদী ঐক্য পরিষদ’ এর আহ্বায়ক। ২০১৫ সাল থেকে নদীটি বাঁচানোর জন্য আন্দোলন করছে সংগঠনটি।
ফজল খান বলেন, “দূষণ আর দখলে নদীটি দিন দিন শেষ হওয়ার পথে। আমরা উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভায় বহুবার লিখিত আবেদন করেছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। পৌরসভার কর্মীরাও নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন, তার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।”
তিনি বলেন, “নদীর দুই পাড় দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে নদীটিকে ড্রেনে পরিণত করা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বনাথ বাজারের অংশে নদীটি দেখলে ড্রেন মনে করবেন অনেকে। এই হচ্ছে অবস্থা; এখানে রক্ষকরাই ভক্ষক হয়ে আছেন।’’
পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল করিম কিম বলেন, বাসিয়া নদী কয়েক ধাপে খনন হয়েছে, কিন্তু সেই খনন কাজ বিশ্বনাথ অংশে এসে থমকে যায়।
“স্থাপনা উচ্ছেদে প্রশাসনের ব্যর্থতার কথা বলতেই হবে। বার বার প্রশাসন নদী রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিলেও প্রকৃত পক্ষে স্থাপনাগুলো উচ্ছেদে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তাছাড়া নদীর বিভিন্ন জায়গায় বার বার খনন হলেও সুরমা নদীর সঙ্গে বাসিয়ার উৎসমুখ এবং কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে সংযোগ মুখ খনন না হওয়ায় শুকনো মৌসুমে পানি চলাচলের সুযোগ থাকে না।’’
স্থানীয় প্রশাসন নদীটি রক্ষায় কী করছে তা বিশ্বনাথের ইউএনও শাহিনা আক্তারের কাছে জানতে চেয়েছিল এই প্রতিবেদক।
জবাবে তিনি বলেন, “উচ্ছেদ মামলার বিরুদ্ধে হাই কোর্টে দখলকারীদের দুটি রিট মামলা চলমান থাকায় উচ্ছেদ কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। রিট মামলার রায়ের পর আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।“
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য দুজন দখলদারকে ফোন করা হলে তারা বলেন, যেহেতু এ নিয়ে হাই কোর্টে মামলা চলছে ফলে তারা কোনো কথা বলবেন না।
দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ জীবন
বাসিয়া নদীটি সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের বিশ্বনাথ বাজার এলাকায়। সেখানে নদীর উপর নির্মিত একটি ব্রিজে দাঁড়িয়ে বাতাসে দুর্গন্ধের দাপট বোঝা গেল।
এর মধ্যেই এলাকাবাসীর চলাচল। কেউ হেঁটে, কেউ আবার গাড়িতে করে বাজারে যাতায়াত করছেন। ব্রিজ থেকে নিচে তাকালে মনে হয় যেন ময়লার ভাগাড়; আর নদীটিকে মনে হয় মরা খাল।
নদীর পাড় ও পানিতে ছড়িয়ে আছে পলিথিনসহ বাজারের বিভিন্ন বর্জ্য। নদীর দুই তীর দখল করে গড়ে উঠেছে দোকানপাট। সব মিলিয়ে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই, এটি একটি নদী।
আমেনা বেগম নামে এক নারী বললেন, “বাজারের ময়লা ফেলার কারণে নদীর এই অবস্থা। ব্রিজের উপর দিয়ে চলাচল করা যায় না ময়লার গন্ধে। দিন দিন এসব দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। আমরা এই নিয়েই চলাচল করি; দেখার তো কেউ নাই।”
বিশ্বনাথ বাজারের পুরাতন ব্রিজে সুমন মিয়া নামের এক তরুণ বললেন, বৃষ্টি হলে বা পানি এলে এই দুগর্ন্ধময় ময়লা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে; তখন নদীর পানি ব্যবহার করলে নানা রোগ-বালাই হয়।
বিশ্বনাথ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন সুমন বললেন একই কথা।
“বাসিয়া নদীর এখন ভয়াবহ খারাপ অবস্থা। ময়লা-আবর্জনার কারণে পানিবাহিত রোগ, চর্মরোগসহ বিভিন্ন ধরনের রোগের জীবাণু ছড়াচ্ছে। বাজারের সবজি, ফল ও টং দোকানিদের অনেকেই চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। ভবিষ্যতে এলাকাবাসীর চর্ম ও ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।”
সেচের পানি নেই
বিশ্বনাথ উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কালিগঞ্জ বাজার। এ বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বাসিয়া নদী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় বলেন, বাসিয়া নদীটি বিশ্বনাথ উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটিতে পানি সংকট থাকার কারণে উপজেলার তিন হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে ফসল চাষে সমস্যা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে।
“এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত নদীটি খনন করা প্রয়োজন। আর শুকনো মৌসুমে নদীতে পানি ধরে রাখার জন্য নদীতে স্লুইচ গেইট নির্মাণ করা জরুরি।’’
বাজারের ব্যবসায়ী নিশি কান্ত পাল বলেন, “নদীতে পানি না থাকার কারণে এলাকায় কৃষিকাজে সমস্যা হচ্ছে। কিছু মানুষের দখল ও ময়লা ফেলার কারণে নদীটা শেষ হওয়ার পথে। দ্রুত নদী খনন করলে এলাকার মানুষজন ঠিকমত কৃষি করতে পারে। বাসিয়াকে বাঁচাতে সরকার যেন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সেই দাবি জানাই।”
যা বলছে পাউবো
বাসিয়া নদী খননের বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ড চেষ্টা করছে, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী অর্থবছরেই নদীটি খনন করতে। এটি আমাদের পরিকল্পানার মধ্যে রয়েছে।’’
সিলেট জেলা পাউবোর তথ্য বলছে, বাসিয়া নদীতে ২০১৩-১৫ সালে সাড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ কিলোমিটার খননকাজ করেছে তারা। কিন্তু ১৮ কিলোমিটারের শেষ মাথায় বিশ্বনাথ বাজারের অবৈধ স্থাপনা থাকায় খননকাজ শেষ করা যায়নি।
২০১৬ সালে আবার জলবায়ু পরিবর্তন ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ২ কোটি টাকা বরাদ্দে ৭ কিলোমিটার খননকাজ হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড আবার বিশ্বনাথ বাজার বাদ দিয়ে খননকাজ শুরু করলে ৬ কিলোমিটার কাজ করা সম্ভব হয়। কিন্তু বিশ্বনাথ বাজারে অবৈধ স্থাপনা থাকার কারণে ১ কিলোমিটার খননকাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে বিশ্বনাথ পুরান বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও রিটকারী মো. আরশ আলী রেজা বলেন, “১৯৮২ সালে ৪৭ শতক জায়গাকে ৩০টি ভিটায় স্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে। ভিটার মালিকরা নির্ধারিত ফি জমা দিয়েই বন্দোবস্ত নিয়েছেন।
“বাজারের ভিটার বর্তমান মলিকদের সবার পক্ষেই রিট করা হয়েছে। বাজার ছাড়া নদী দখল করে গড়ে উঠা স্থাপনার সঙ্গে আমাদের কোনো সর্ম্পক নেই। আমার আত্মীয় একজনের ভিটা রয়েছে, তাই আমি রিট করি। তবে ব্যবসায়ীদের বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়নি।’’
সিলেটে সংকটাপন্ন ৩১ নদী
গত বছরের ২০ ডিসেম্বর ‘সিলেট বিভাগীয় নদীবিষয়ক কর্মশালা’য় জানানো হয়, অবৈধভাবে নদী দখল করে স্থাপনা নির্মাণ, শিল্প-কারখানার দূষণ, পলি ভরাটসহ বিভিন্ন কারণে সিলেট বিভাগের ৩১টি নদী সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। বাদ যায়নি সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারাও।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) ও পানি অধিকার ফোরাম যৌথভাবে ওই কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় বলা হয়, নদী রক্ষা কমিশনের সর্বশেষ ২০২৩ সালের হিসাব মতে, দেশে ১ হাজার ৮টি নদ-নদী রয়েছে। সিলেট বিভাগে রয়েছে ১৬৮টি। এর মধ্যে সিলেটে ৩৫টি, সুনামগঞ্জে ৯৭টি, মৌলভীবাজারে আটটি ও হবিগঞ্জে ২৮টি।
যদিও আলোচকদের দাবি, সরকারি এ তথ্যে গরমিল রয়েছে। কারণ বাংলাদেশের অনেক নদ-নদী এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে।
সিলেটেও এমন বেশ কয়েকটি নদী তালিকায় রয়েছে কিন্তু অস্তিত্ব নেই। এ ছাড়া বেশ কিছু নদীর তীর ১ হাজার ১৯৪ জন দখল করে রেখেছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এ বিভাগের চার জেলার মধ্যে সিলেট জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, ডাউকি, পিয়াইন, ধলাই, লোভা, সারি, বাসিয়া ও চেঙ্গেরখাল নদী বেশি সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে।
সুনামগঞ্জের ধোপজান, যাদুকাটা, নলজুর, বৌলাই, রক্তি, চেলা, খাশিয়ামারা, কুশিউড়া, মাহরাম, মহাসিং ও বোকা নদী অস্তিত্ব হারানোর পথে।
এ ছাড়া মৌলভীবাজারের ধলাই, মনু, জুড়ী, কণ্ঠীনালা ও গোপলা নদী এবং হবিগঞ্জ জেলার খোয়াই, সুতাং, সোনাই, বরাক, কাষ্টি ও করাঙ্গী নদীরও বিপন্ন অবস্থা।
মূলত নদী দখল করে স্থাপনা নির্মাণ; অবৈধভাবে বালি-পাথর উত্তোলন ও দূষণ; অপরিকল্পিত বাঁধ, সেতু ও স্লুইস গেট নির্মাণ; খালের সঙ্গে নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা; নদীগর্ভে পলির অবক্ষেপণ ও পলির অব্যবস্থাপনার কারণে নদীগুলোর অবস্থা এমন সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে বলেই কর্মশালায় জানানো হয়। সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।