জুমবাংলা ডেস্ক : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে জন্ম ও মৃত্যু সনদ ওঠাতে সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত কয়েকগুণ টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সবুজ আকন্দ ওরফে শরীফ নামের উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদের এক উদ্যোক্তা এ অনিয়মে জড়িত বলে অভিযোগ আছে। তার এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে সেবাগ্রহীতাদের নানাভাবে হয়রানি হয়। জন্ম সনদে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার অভিযোগ ছাড়াও মৃত্যু সনদ তুলতে তিনি নেন ৭০০ টাকা।
চাকরির শুরু থেকেই গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা সবুজ আকন্দ ওরফে শরীফের বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। সেবাগ্রহীতা-স্থানীয়রাও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাকে নিয়ে।
উপজেলার খানুরবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা সুমি খাতুন। শারীরিকভাবে অসুস্থ সুমি গত ৩১ মে সকালে ইউনিয়ন পরিষদে যান তার শ্বশুরের মৃত্যু সনদ নিতে। সনদ দেওয়ার জন্য সবুজ তার কাছ থেকে ৭০০ টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
সুমি খাতুন বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহ আগে পরিষদের সবুজের কাছে আমার শ্বশুরের মৃত্যু সনদ ওঠানোর জন্য এসেছিলাম। দীর্ঘ সময় বারান্দায় দাঁড় করিয়ে রাখার পর তিনি আমার কাছে ৭০০ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে মৃত্যু সনদ হবে না বলে জানান। বাধ্য হয়ে ৭০০ টাকা দিয়েই সনদের আবেদন করতে হয়। পরে তার দেওয়া তারিখমতে কয়েকদিন পরিষদে এসেও একাধিবার ফেরত যেতে হয়েছে। মৃত্যু সনদ চাইলে নানা অজুহাতে বারবার ফেরত দিয়েছেন তিনি। এরপর আবার গত ৩১ মে আসলে সেদিনও নানা তালবাহানা করেন সনদ দিতে। একপর্যায়ে তর্কবিতর্ক হলে স্থানীয় এক লোকের সহযোগিতায় আমার শ্বশুরের মৃত্যু সনদ দেন তিনি।’
সুমি খাতুনের মতো আরেক ভুক্তভোগী নয়া মিয়া। তার স্ত্রী ও মেয়ে নিয়ে পরিষদে জন্ম সনদ ওঠাতে আসেন। সুমির মতো তাকেও কয়েক সপ্তাহ ঘুরিয়েছেন উদ্যোক্তা সবুজ আকন্দ। এ বিষয়ে নয়া মিয়া বলেন, ‘গেল সপ্তাহে সরকারি নির্দেশনা মতে সকল কাগজপত্র সবুজের কাছে দিয়ে আসি। সে সময় তিনি আমার, স্ত্রী ও মেয়ের সনদের জন্য ১ হাজার ১৫০ টাকা দাবি করেন। এরপর ১৫০ টাকা জমা দিয়ে আসলে সুবজ আমাদেরকে বলেন, বাকি ১ হাজার টাকা সনদ নেওয়ার সময় জমা দিয়ে নিয়ে যাবেন। পরে তার কথা অনুয়ায়ী গত ৩১ মে সকালে পরিষদে সনদ চাইলে তিনি সনদ দেননি। তার দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় নানা ধরনের অজুহাত দেখান তিনি। পরে হয়রানির স্বীকার হয়ে বাড়ি চলে যাই।’
স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, উদ্যোক্তা সবুজ আকন্দ দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। তিনি সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে কয়েকগুণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সেবাগ্রহীতাদের নানা ধরনের হয়রানি করেন। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে পরিষদ কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইউপি সদস্য বলেন, উদ্যোক্তা সবুজের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ নতুন নয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তার এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি করেন তারা।
জানা গেছে, গত মে মাসে সবুজ প্রায় ৩০০ সনদ বিতরণ করেছেন। কিন্তু সরকারি ফি নেওয়ার সময় সবুজ সেবাগ্রহীদের কোনো ধরনের রশিদ প্রদান করেন না। এরকম প্রতারণা করে আসছেন প্রতিনিয়ত। এসব অনিয়ম করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। সবুজের এমন অনিয়ম, দুর্নীতির কর্মকাণ্ডের ঘটনার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উদ্যোক্তা সবুজ আকন্দ শরীফ বলেন, ‘আমি কারও থেকে সনদে সরকারি ফি ছাড়া অতিরিক্ত অর্থ আদায় করিনি। যা শুনছেন সব মিথ্যা ও বানোয়াট। আপনি (সাংবাদিক) আমার অফিসে আসুন, সব বুঝিয়ে দিব। চা খেয়ে যান। আসেন, দেখা করুন। সাক্ষাতে কথা বলি।’
উদ্যোক্তা সবুজ আকন্দের এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করে গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার বাবলু বলেন, ‘আমি জানি, ছেলেটি খারাপ।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. ইশরাত জাহান বলেন, ‘এমন অভিযোগের বিষয় আমার জানা নেই এবং কেউ অভিযোগ করেনি। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।