জুমবাংলা ডেস্ক : ছুটির দিন কিংবা অবসর সময় কাটাতে বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে সবারই থাকে। পাহাড়-সমুদ্র দেখার জন্য অনেকেই ছুটে যান কক্সবাজার কিংবা বান্দরবানে। তবে সবসময় তো আর ঢাকার বাইরে চাইলেই ঘুরতে যাওয়া যায় না। কর্মব্যস্ত সপ্তাহ শেষে কিংবা হুটহাট একটা দিনের ছুটিতে পরিবার কিংবা বন্ধুদের নিয়ে ঢাকার কাছে দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা যায় এমন জায়াগা খোঁজেন অনেকে।
অল্প সময়ে এই ধরনের ভ্রমণ একদিকে যেমন চিত্তবিনোদনের চাহিদা মেটায়, অন্যদিকে কর্মময় জীবনে নতুন করে কাজের উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে। চলুন জেনে নেয়া যাক রাজধানী ঢাকা থেকে একদিনে ঘুরে আসা যায় এমন পাঁচটি দর্শনীয় স্থান।
পানাম নগর
ঢাকার পাশের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানার প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটারজুড়ে ঐতিহাসিক পানাম নগর। ১৫ শতকে ঈশা খাঁ সোনাগাঁওয়ে বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেন। পানাম সিটি ঢাকা শহর থেকে একদম আলাদা এবং অন্যরকম। পুরানো বাড়িগুলো দেখে দিন পার হয়ে যাবে। পৃথিবীর ১০০টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি পানাম নগর। এখানে কয়েক শতাব্দী পুরানো অনেক ভবন রয়েছে, যা বাংলার বার ভূইয়াঁদের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত। পানাম নগরের কাছেই আছে সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর। একদিনে দুটি জায়গা সহজেই ঘুরে দেখা যায়।
এছাড়া পানাম নগরের কাছেই মেঘনা নদী। নদীর ওপারে গেলেই দেখবেন কাশফুলে ঘেরা বিস্তৃত মাঠ। চাইলে পানাম নগর দেখা শেষে সেখানেও ঘুরে আসতে পারেন।
যোগাযোগ: রাজধানীর গুলিস্তান থেকে দোয়েল, স্বদেশ কিংবা বোরাকের এসি বাসে করে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা নামতে অবে। মোগড়াপাড়া থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে পানাম নগরীতে যেতে পারবেন।
নুহাশ পল্লী
ঢাকার আশেপাশে দর্শনীয় স্থানের মধ্যে নুহাশ পল্লী অন্যতম। এক সময়ের গল্পের জাদুকর, বিখ্যাত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের নিজের হাতের স্পর্শে গড়া এই পল্লী বাগান বাড়ি। এখানে যেতে পারেন আপনার প্রিয়জন, পরিবার সবাইকে নিয়ে। একদিনের মধ্যে ঘুরে আসতে পারেন নুহাশ পল্লী থেকে।
হুমায়ুন আহমেদ তার কল্পনার সমস্ত কিছুই এখানে বাস্তবে রূপ দিয়ে গেছেন। এখানে আছে বৃষ্টি বিলাস, ভুত বিলাস নামের বাড়ি, ট্রি হাউজ, বিভিন্ন ভাস্কর্য, প্রায় ৩০০ প্রজাতির বিভিন্ন গাছের বাগান। পদ্ম পুকুর, মৎস্য কন্যা, প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের অনুকীর্তি দেখতে পাবেন। আর নুহাশ পল্লীর লিচু তলায় তার সমাধিস্থল দেখে আসতে পারেন।
যোগাযোগ: ঢাকা থেকে বাসে করে প্রথমে গাজীপুরের হোতাপাড়া নামক বাস স্ট্যান্ড নামতে হবে। এখানে নেমে রিকশা বা সিএনজিতে নুহাশ পল্লী অনায়াসে যাওয়া যায়। গাজীপুর জেলার চৌরাস্তা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে এক হোতাপাড়া বাজারের পিরুজালী নামক গ্রামে এই নুহাশ পল্লী অবস্থিত।
মৈনট ঘাট, দোহার
ঢাকার আশপাশে দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অল্প সময়ের মধ্যে মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনট ঘাট থেকে খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারেন। ঢাকার অদূরে দোহার উপজেলায় অবস্থিত এই জায়গা আপনাকে সাগরের কথা মনে করিয়ে দেবে। মৈনট ঘাটকে মিনি কক্সবাজার নামে ডাকা হয়ে থাকে। এ ঘাটে সূর্যাস্তের সুন্দর দৃশ্য আপনার ভাল লাগবে।
ঘাটের সঙ্গে বিশাল চরে সমুদ্রের বেলাভূমির স্বাদ নিতে পারেন। ঢাকার খুব কাছে হওয়ায় এই জায়গাটা ভ্রমণপ্রিয় মানুষের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এছাড়াও পদ্মার ইলিশ কিংবা নৌকায় ঘুরার ইচ্ছা থাকলে ঘুরতে পারবেন। এই ঘাটে কাটিয়ে যেতে পারেন একটি সুন্দর বিকেল।
যোগাযোগ: গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের সামনে থেকে বাসে করে সরাসরি দোহারের মৈনট ঘাটে যাওয়া যায়।
জিন্দা পার্ক
কম সময়ে ও কম খরচে সবুজের মাঝে হারাতে চাইলে যেতে পারেন পূর্বাচল হাইওয়ের কাছেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত জিন্দা পার্কে। ঢাকা থেকে দূরত্ব মাত্র ৩৭ কিলোমিটার। খাওয়া-দাওয়ার জন্য পার্কের ভেতরেই রেস্টুরেন্ট আছে। এছাড়া রাতে থাকার জন্যও আছে গেস্টহাউস।
নারায়ণগঞ্জ জেলার দাউদপুর ইউনিয়নে ১৫০ একর জায়গা নিয়ে এই জিন্দা পার্কটি গড়ে উঠেছে। পার্কটিতে রয়েছে ২৫০ প্রজাতির দশ হাজারের বেশি গাছ, ৫টি জলাধার ও অসংখ্য পাখি রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ক্যান্টিন, লাইব্রেরি, চিড়িয়াখানা। রয়েছে ৮টি সুসজ্জিত নৌবহর।
যোগাযোগ: ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড এসে ৩০০ ফিট রাস্তার প্রান্ত থেকে লোকাল সিএনজি বা লেগুনা দিয়ে কাঞ্চন ব্রিজ আসুন। কাঞ্চন ব্রিজের আগে বাইপাসের মোড় থেকে অটোরিকশায় জিন্দা পার্ক যাওয়া যায়। এছাড়া চাইলে কুড়িল ৩০০ ফিট রাস্তা থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা রিজার্ভ নিয়ে সরাসরি জিন্দা পার্ক যাওয়া যায়।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটি অবস্থিত। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নে প্রায় ৩ হাজার ৬৯০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে। এই পার্কে প্রাকৃতিক পরিবেশে বন্য প্রাণীদের বিচরণ দেখতে সারা বছরই দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকে।
এছাড়াও এখানে রয়েছে পাখিশালা, প্রজাপতি সাফারি, জিরাফ ফিডিং স্পট, অর্কিড হাউজ, শকুন ও পেঁচা কর্নার, এগ ওয়ার্ল্ড, বোটিং, লেইক জোন, আইল্যান্ড, প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র, ফ্যান্সি কার্প গার্ডেন এবং আরো অনেক বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর সমারোহ।
যোগাযোগ: সবার প্রথমে গাজীপুরের বাঘের বাজার আসতে হবে। সেখান থেকে খুব সহজেই আপনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে যেতে পারবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।