হাসান তনা, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী): চাঁদখানা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও নৌকা প্রতীক নিয়ে মাত্র ১৬৮ ভোটে হেরে যাওয়া নাজিম উদ্দিন আলম সবুজের ঠাঁই হলো না চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকায়। এতে তার সমর্থকসহ সাধারণ জনগণ হতাশ।
আজ (১৪ এপ্রিল) নিজ বাসায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নাজিম উদ্দিন আলম সবুজ বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে বর্ধিত সভায় তার নাম উঠে আসলেও আত্মীয়করণ, টাকার বিনিময় ও প্রতীক থেকে বঞ্চিত করা লক্ষ্যে কেন্দ্রে পাঠানো তালিকায় তার নাম রাখা হয়নি।
চাঁদখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৫ মে। এ ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান হাফি মারা গেলে পদটি শুন্য হয়।
এ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য গত ১২ এপ্রিল বর্ধিত সভা হয়। সভায় দু’বারের সাবেক চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন আলম সবুজের নাম উঠে আসে। সেভাবে রেজুলেশনও করা হয়। কিন্তু জেলায় দেয়া হয় অন্য একটি রেজুলেশন। যেটিতে এ মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীর নাম বাদ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
কৌশলে নৌকা প্রতীক থেকে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে জানিয়ে সবুজ সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মাত্র ১৬৮ ভোটে আমি পরাজিত হই। সেবার আমি পেয়েছিলাম ৩ হাজার ৫২৯ ভোট। যিনি জয়ী হয়েছিলেন তিনি পেয়েছিলেন ৩ হাজার ৬৯৭ ভোট। যা আমার ভোটের চেয়ে ১৬৮ ভোট বেশি।
তিনি বলেন, গত নির্বাচনেও কৌশলে আমাকে নৌকা প্রতীক থেকে বঞ্চিত করা হয়। সে ভোটে মাত্র ১৪ ভোটের ব্যবধানে আমাকে হারিয়ে দেয়া হয়। গতবার আমাকে নৌকা প্রতীক থেকে বঞ্চিত করা না হলে এ ইউনিয়নটি নৌকার হাতেই থাকতো। আমার বিরুদ্ধে গতবার ষড়যন্ত্র করে নৌকা দেয়া হয়নি। এবারও গভীর ঘড়যন্ত্র চলছে।
সবুজ আরও বলেন, স্থানীয় বর্ধিত সভায় নাম থাকলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেন বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক মশিয়ার রহমান আমারসহ আরও একজনের নাম বাদ দিয়ে ৬ জনের নাম পাঠিয়েছে জেলা কমিটিতে এবং জেলা কমিটি সে তালিকা
পাঠিয়েছে কেন্দ্রে।
তালিকায় নাম থাকা মোস্তাফিজুর রহমান যাদু আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও শুধু মাত্র আত্মীয়তা ও টাকার বিনিময়ে তার নাম পাঠানোর অভিযোগও করেন তিনি।
মোস্তাফিজার রহমান যাদু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেন বাবুলের জামাতা সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুল ইসলামের আপন ভগ্নিপতি। প্রতিক পেলেই চেয়ারম্যান হবে এ আশায় টাকা দিয়ে তালিকায় নাম ঢুকিয়েছে বলে অভিযোগ করেন নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী সবুজ।
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে আমার প্রিয় অভিভাবক জননেত্রীসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের এ বিষয়ে সুদৃষ্টি কামনা করছি। আমাকে এ ইউনিয়নে নৌকার মাঝি করা হলে ইনশাআল্লাহ নৌকার পাল ধরে নির্বাচনে জয়ী হয়ে উন্নয়নে মডেল
করবো এ ইউনিয়নটিকে।
নাজিম উদ্দিন আলম সবুজের সংবাদ সম্মেলনে শতাধিক সমর্থক ও ভোটা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় বর্ধিত সভার রেজুলেশনে যে ৮ জনের নাম উঠে এসেছে তার ৫ নম্বর ক্রমিকে নাম ছিল নৌকার সম্ভাব্য এই প্রার্থীর।
এছাড়া কেন্দ্রে পাঠানো প্রার্থী তালিকায় যারা আছেন তারা হলেন- স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আঃ বারেক, কৃষক লীগের তাহসান লেলিন, আওয়ামী লীগ নেতা খায়রুল আলম, কৃষক লীগের মোস্তাফিজুর রহমান যাদু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক সফি কামাল রিয়াদ, আওয়ামী নেতা ধনঞ্জয় রায় সিবু ও চাঁদখানা ইউপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার রায়।
পরবর্তীতে নাজিম উদ্দিন আলম সবুজ ও ধনঞ্জয় রায় সিবুর নাম বাদ দিয়ে উপজেলা কমিটি জেলা কমিটিকে তালিকা দেয় বলে জানা গেছে। সেটি স্বাক্ষর করে জেলা কমিটি কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠিয়েছে।
এ ব্যাপারে চাঁদখানা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান দুলাল বলেন, নিয়ম অনুযায়ী এটি হয়নি। আমরা ইউনিয়ন কমিটি উপজেলা কমিটিকে রেজুলেশনের মাধ্যমে তালিকা দিব, সেই তালিকা উপজেলা কমিটি জেলা কমিটিকে পাঠাবে। পরে জেলা কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রে প্রেরণ করবে। এ তালিকা পাঠানোয় ইউনিয়ন কমিটির ও আমাদের কোনও ভূমিকা ছিল না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিয়ার রহমান জানান, মনোনয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বাছাই শেষে ৬ জনের নাম পাঠানো হয়েছে। সেখানে ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদের স্বাক্ষর রয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেন বাবুল বর্ধিত সভায় ৮ জনের নাম উঠে আসার কথা স্বীকার করে বলেন, নাজিম উদ্দিন আলম সবুজ ও ধনঞ্জয় রায় সিবু গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতিক চেয়েছিলন। কিন্তু প্রতিক না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছেন। তাই মনোনয়ন বোর্ড তাদের নাম বাদ দিয়েছে।
চাঁদখানা ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৫ মে। এ ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান হাফি মারা গেলে চেয়ারম্যান পদটি শুন্য হয়।
গত ৯ এপ্রিল চাঁদখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শূন্য পদে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। আগামী ২৭ এপ্রিল মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ। মনোনয়ন বাছাই হবে ৩০ এপ্রিল েএবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৮ মে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।