জুমবাংলা ডেস্ক : পাঁচ দিন পর যে বাড়িতে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ডামাডোল শুরু হওয়ার কথা ছিল, সেই বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। দুই মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা রেহেনা পারভীন হীরা।
তিনি শুধু প্রলাপ করছেন– ‘আমাকে মা বলে ডাকার আর কেউ থাকল না।’ তাকে সান্ত্বনা দিতে এসে স্বজন, প্রতিবেশীরাও স্তব্ধ।
শনিবার রাতে যশোর শহরের ঢাকা রোড বিসিএমসি কলেজ এলাকার মোহাম্মদ ইয়াসিন আলীর বাড়িতে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়।
এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে যশোর শহরের বিমান অফিস মোড় এলাকায় প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই বোনসহ তিন নারী নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন- যশোর শহরের ঢাকা রোড বিসিএমসি কলেজ এলাকার ইয়াসিন আলীর মেয়ে তানজিলা ইয়াসমিন ইয়াশা (২৮), তনিমা ইয়াসমিন পিয়াশা (২৫) এবং তাদের খালাতো ভাই আরএন রোড এলাকার মঞ্জুর হোসেনের স্ত্রী আফরোজা তাবাসসুম তিথী (২৬)।
আহত হয়েছেন পিয়াশার স্বামী শফিকুল ইসলাম জ্যোতি (২৮), আফরোজা তাবাসসুম তিথীর মেয়ে মানিজুর মাশিয়াব (৪), শাহিন হোসেন (২৩) ও হৃদয় (২৮)।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, প্রাইভেটকারচালক শফিকুল ইসলাম জ্যোতি পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। গাড়ি চালানোর সময় তিনি নেশা অবস্থায় ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ জন্য তার মাদক পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নিহতের পরিবারের সদস্যদের আবেদনের ভিত্তিতে মরদেহ পোস্টমর্টেম ছাড়াই হস্তান্তর করা হয়েছে।
নিহতের স্বজনরা জানান, যশোর শহরের লোন অফিসপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জ্যোতির সঙ্গে আদ-দ্বীন সখিনা মেডিক্যালের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী তনিমা ইয়াসমিন পিয়াশার দেড় বছর আগে বিয়ে হয়।
আগামী ২৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে পিয়াশাকে তাদের তুলে নেয়ার কথা। সে জন্য জ্যোতির বাড়িতে আলোকসজ্জা করা হয়।
পিয়াশা রাতে ফোন করে জ্যোতিকে জানান, তারা আলোকসজ্জা দেখবেন এবং শহর ঘুরবেন। এ কারণে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে জ্যোতি তার নিজস্ব প্রাইভেটকার নিয়ে বের হন।
গাড়িতে পিয়াশার বোন তানজিলা, খালাতো ভাইয়ের স্ত্রী আফরোজা তাবাসসুম তিথী, তার মেয়ে মানিজুর মাশিয়াব এবং জ্যোতির দুই বন্ধু হৃদয় ও শাহিন ছিলেন।
তারা রাতে আলোকসজ্জা দেখে শহরে তাদের স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে শহরের পালবাড়ি এলাকা থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন।
ফেরার পথে রাত ১টার দিকে যশোর শহরের পুরনো কসবা শহীদ মসিয়ূর রহমান সড়কের (আকিজের গলি) পাশে থাকা একটি বিল্ডিংয়ের প্রাচীর ও বিদ্যুতের খাম্বায় সজোরে আঘাত করে প্রাইভেটকারটি।
এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান। গাড়িতে থাকা অন্যরা আহত হন। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. কাজল কান্তি মল্লিক জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই তিনজনের মৃত্যু হয়।
এদিকে নিহত তানজিলা ও তনিমার খালাতো ভাই রোহান উদ্দিন জানান, দেড় বছর আগে ডা. তনিমা ইয়াসমিন পিয়াশার সঙ্গে শফিকুল ইসলামের বিয়ে হয়।
আগামী ২৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন বধূকে ঘরে তুলে নেবে। প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে বর শফিকুল ইসলাম জ্যোতি নিজেই গাড়ি চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দাওয়াত দিতে বের হন।
নিহত তিথীর স্বামী মঞ্জুর হোসেন, শুক্রবার রাতে শফিকুল ইসলাম জ্যোতি প্রাইভেটকার নিয়ে আমাদের বাসায় যান। শহরে ঘুরতে বের হওয়ার কথা বলে গাড়িতে আমার স্ত্রী সন্তান গাড়িতে তুলে নেন।
সেই গাড়িতে খালাতো দুই বোনও ছিল। তারা শহরের পালবাড়ি, আরবপুর এলাকায় আলোকসজ্জা দেখতে ও বিয়ে দাওতায় দিতে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার দুপুরে যশোর শহরের ঢাকা রোড বিসিএমসি কলেজ এলাকার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকের মাতম। প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনরদের ভিড়। ঘরের মধ্যে তাদের মায়ের আহাজারি।
সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় এই মাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে সবাই স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী ও রেহেনা পারভীন হীরা দম্পতির দুই কন্যাসন্তান।
সেই দুই সন্তান সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। পাঁচ দিন পর যে বাড়িতে বিয়ের ধুমধাম আয়োজন হওয়ার কথা, সেই বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মায়ের কণ্ঠে শুধু সন্তান হারানোর প্রলাপ।
শুধু বলছেন, ‘আমার আর মা বলে ডাকার কেউ থাকল না। আল্লাহ তুমি আমার কলিজা দুটো কেড়ে নিলে। আমি কাদের নিয়ে বাঁচব।’
প্রতিবেশী স্বজনরা জানালেন, দেড় বছর আগে বিয়ে হয়েছে। বাকি ছিল আনুষ্ঠানিকতা। সেই আনুষ্ঠানিকতা ঘিরে ধুমধাম শুরু হয়। সেই অনুষ্ঠানের পাঁচ দিন আগেই তিনজনের মৃত্যু হলো। এটি খুবই কষ্টের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।