জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও বিভিন্ন স্থানে নদীর পানি এখনো বইছে বিপত্সীমার ওপর দিয়ে। বেড়েছে লাখ লাখ পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ। দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে গাইড বাঁধ ভেঙে বিলীন হয়েছে ২৫টি বসতবাড়ি, কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তার গর্ভে চলে গেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে গত তিন দিন ধরে যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও এখনো তা বিপত্সীমার ওপর দিয়েই বইছে। সোমবার সকালে ১৪ সেন্টিমিটার কমে বিপত্সীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে জেলার বন্যাকবলিত সিরাজগঞ্জ সদর, কাজীপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার বানভাসি মানুষের ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাটে এখনো বিরাজ করছে পানি। সে কারণে পাঁচ উপজেলার বাঁধ, উঁচু জায়গা ও স্কুলে আশ্রয় নেওয়া দেড় লক্ষাধিক পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।
জামালপুর : জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও দুর্ভোগে রয়েছে বানভাসি মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ২৭ সেন্টিমিটার কমে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপত্সীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে ব্রহ্মপুত্রসহ শাখা নদনদীর পানি এখন কমতে শুরু করেছে বলে জানান জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সাইদ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে জেলার সাতটি উপজেলার ৪৯টি ইউনিয়নের প্রায় ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৪৯ জন পানিবন্দি মানুষ এখন বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছে।
মান্দা (নওগাঁ) : উপজেলার জোতবাজার পয়েন্টে আত্রাই নদীর পানি বিপত্সীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে নদীসংলগ্ন এলাকায় বসবাসরত সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে আত্রাই ও ফকির্ণি নদীর অন্তত ২০টি পয়েন্ট। বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন ও সদস্য ইব্রাহীম হোসেন জানান, ২০১৭ সালের বন্যায় চকরামপুর ও কয়লাবাড়ী বেড়িবাঁধ ভাঙার পর আর মেরামত করা হয়নি। নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এসব ভাঙন স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করে দুই গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পানির চাপে ইতিমধ্যে শামুকখোল নমঃশূদ্রপাড়া এলাকায় আত্রাই নদীর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়ে পানি পার হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করছেন।
কালিহাতী (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার গাইড বাঁধ ভেঙে আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে ২৫টি পরিবারের দেড় শতাধিক মানুষ। শনিবার গভীর রাতে বাঁধটি ভেঙে গেলে বেলটিয়া গ্রামের কয়েক শ মানুষের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়। বর্তমানে তারা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সহযোগিতা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী।
উলিপুর (কুড়িগ্রাম) : উলিপুরে সোমবার ভোরে চোখের নিমিষেই তিস্তা নদীগর্ভে চলে গেল জুয়ান সতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে লোহার অ্যাঙ্গেল ও কিছু টিন রক্ষা করা গেলেও অন্যান্য জিনিসপত্র মুহূর্তেই নদীতে তলিয়ে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, তিস্তা নদীর ভাঙন থেকে বিদ্যালয়টি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ না থাকায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেল চরাঞ্চলের একমাত্র বিদ্যাপীঠটি। এছাড়াও গত দুই মাসের ব্যবধানে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীবেষ্টিত উপজেলার আটটি ইউনিয়নে প্রায় সহস্রাধিক পরিবারের বসতবাড়িসহ আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চর ঘুঘুমারী কমিউনিটি ক্লিনিক, দৈ খাওয়ার চর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সুখের চর সরকারি প্রাথমিক ও আশ্রয়কেন্দ্র ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট তিস্তায় পানি প্রতিদিনই কমছে কিন্তু গত দুই দিন থেকে করতোয়ায় অব্যাহতভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ২৪ সেন্টিমিটার কমে বিপত্সীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাঘটের পানি ১৭ সেন্টিমিটার কমে বিপত্সীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচে ও তিস্তার পানি ২২ সেন্টিমিটার কমে বিপত্সীমার ৪৭ সেন্টিমিটার নিচে চলে গেছে। অন্যদিকে করতোয়ার পানি ৬২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে করতোয়া এখনো বিপত্সীমার নিচে রয়েছে। করতোয়ায় পানি বৃদ্ধিতে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মানুষের মধ্যে বন্যার আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।