জুমবাংলা ডেস্ক : বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের কলাবাড়িয়া গ্রাম প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নিজের পুত্রকে আত্মগোপনে রেখে অপহরণ ও গুম মামলা করেন বাবা। এর নয় বছর পর আত্মগোপনকারী পুত্র রাসেল মৃধাকে (২৩) উদ্ধার করা হয়েছে।
এ মামলায় ৪ আসামি দীর্ঘ দিন কারাভোগ করে বর্তমানে জামিনে ও বাকি ১০ আসামি এখনো পলাতক রয়েছেন।
গুম হওয়া কিশোর রাসেল মৃধাকে সোমবার দিবাগত রাতে রাজধানী ঢাকার রায়েরবাগ এলাকা থেকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ উদ্ধার করে মঙ্গলবার দুপুরে গৌরনদী থানায় নিয়ে আসে।
মিথ্যা মামলায় হয়রানি ও নিঃস্ব হওয়া পরিবারের সদস্যরা বাদী ও তদন্তকারী কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।
মামলার জামিনপ্রাপ্ত আসামি এস রহমান মৃধা জানান, পার্শ্ববর্তী নলচিড়া ইউনিয়নের কলাবাড়িয়া গ্রামের জালাল মৃধার সঙ্গে তার পূর্ব বিরোধ চলে আসছে। এর জের ধরে জালাল মৃধার স্ত্রী মরিয়ম বেগম বাদী হয়ে ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল বরিশাল আদালতে ১৪ জনকে আসামি করে তার পুত্রকে অপহরণের অভিযোগ করেন। অভিযোগে বিবাদীদের বিরুদ্ধে জালাল-মরিয়ম দম্পতির সে সময় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া পুত্র রাসেল মৃধাকে (১৪) মারধর করে অপহরণের অভিযোগ আনা হয়। আদালত এ বিষয়ে গৌরনদী থানাকে মামলা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন।
ভুক্তভোগী এস রহমান আরও জানান, মামলার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা গৌরনদী থানার এসআই ও বর্তমানে গৌরনদী শরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক ফোরকান হাওলাদার বাদীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে এ মামলায় ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ফলে মিথ্যে ওই মামলায় তাকে (এস রহমান) এবং তার পক্ষের লোকজনকে দীর্ঘদিন কারাভোগ করতে হয়।
তিনি বলেন, দীর্ঘ নয় বছর পর সোমবার আমরা জানতে পারি মামলার বাদী মরিয়মের পুত্র রাসেল ঢাকার রায়েরবাগ এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছে। সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে ঢাকার রায়েরবাগ এলাকা থেকে আত্মগোপনকারী রাসেল মৃধাকে (২৩) উদ্ধার করে গতকাল মঙ্গলবার সকালে গৌরনদী থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী রহমান মৃধা, রায়হান মৃধা অভিযোগ করে বলেন, অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুমের মিথ্যা মামলায় আমরা ৪ জন দীর্ঘদিন কারা ভোগ করেছি। ১০ আসামি পালিয়ে থেকে দূর্বিসহ জীবন যাপন করেছে। পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মিথ্যা হয়রানমূলক মামলায় ৯ বছরে আমরা ১৩টি পরিবার সহায় সম্বল সব হারিয়েছি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফোরকান হোসেন বাদীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে সঠিক তদন্ত ছাড়াই আমাদের ১৪ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করায় বাদী ও মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবির জানাই।
আর্থিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করে অপহরণ ও গুম মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গৌরনদী শরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফোরকান হোসেন জানান, গৌরনদী উপজেলার কলাবাড়িয়া গ্রামের মো. জালাল মৃধার স্ত্রী ফাহিমা বেগম (৪৫) বাদী হয়ে ১৪ জনকে আসামি করে ২০১২ সালের গৌরনদী থানায় তার ছেলে রাসেল মৃধাকে (২৩) অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুমের একটি মামলা করেন।
মামলার আসামিরা হলো- একই গ্রামের প্রতিবেশী এস. রহমান মৃধা (৫৫), তার ছেলে আরমান মৃধা (২৬), ছোট ছেলে রায়হান (২৩), স্থানীয় শাহীন মল্লিক (৩০), হক ভূঁইয়া (৭০), তার ছেলে মবিন ভূঁইয়াসহ (২৮) ১৩ জন। ২০১৩ সালে শেষের দিকে এজাহারভুক্ত ১৪ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
ভিকটিম জীবিত থাকার পরেও তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া প্রসঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফোরকান হোসেন বলেন, মামলার তদন্তকালে ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। তাতে যে তথ্য পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতেই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে।
গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হেলালউদ্দিন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে স্থানীয়দের সহায়তা পুলিশ সোমবার ঢাকার রায়েরবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহরণ ও গুম হওয়া ভিকটিম রাসেল মৃধাকে উদ্ধার করে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গৌরনদী থানায় নিয়ে আসা হয়। উদ্ধারকৃত ভিকটিম রাসেল মৃধাকে থানা পুলিশের হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বুধবার সকালে ভিকটিমকে বরিশাল আদালতে নেয়া হবে। আদালতের নির্দেশ অনুয়ায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আ. রব হাওলাদার জানান, রাসেল মৃধা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।