জুমবাংলা ডেস্ক: এক বছর আগেও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার অনেকে ভাবতে পারেননি যে রক্তের জন্য কোথাও ছুটতে হবে না। যখন যার প্রয়োজন তার গ্রুপের রক্ত জোগাড় হয়ে যাবে, শুধুমাত্র সংগঠনের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করলেই হবে। এমনই অসম্ভব করে সম্ভব করেছে আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত ‘গোয়ালন্দ ব্লাড ডোনার ক্লাব’। খবর ইউএনবি’র।
‘আপনার রক্ত অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বন্ধন’- এ শ্লোগানে ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ মাঠ চত্বরে আয়োজিত রক্ত দানের মধ্য দিয়ে সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয়। তখনকার ইউএনও রুবায়েত হায়াত শিপলু রক্ত দানের মধ্য দিয়ে সংগঠনের শুভ সূচনা করেন। ৩০ সদস্য দিয়ে শুরু হলেও কয়েক মাসেই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে যায়।
উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের আব্দুল আজিজ বলেন, ‘অসুস্থ বাবা মোকছেদ আলী শেখের জন্য এ পজেটিভ রক্ত খুঁজছিলাম। তিন মাস আগে বাবা ব্রেইন স্ট্রোক করেন। রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ায় প্রতি মাসে দুইবার তাকে রক্ত দিতে হয়। পরে গোয়ালন্দ ব্লাড ডোনার ক্লাবের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করলে তারাই রক্তের ব্যবস্থা করে দেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর জরুরিভাবে বাবার রক্তের প্রয়োজন পড়লে সংগঠনটির মাধ্যমে রক্ত দেন দৌলতদিয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার কলেজের প্রভাষক মনা সালেহা।’
ডোনার মনা সালেহা বলে, ‘১৯৯৯ সালে গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম কলেজে ফরিদপুর সন্ধানী ক্লাবের আয়োজনে প্রথম রক্ত দান করি। আমিই প্রথম কোনো নারী হিসেবে রক্ত দান করেছিলাম। প্রত্যেক সুস্থ ব্যক্তির রক্ত দেয়া উচিত।’
রাজবাড়ী খানখানাপুর থেকে গোয়ালন্দ হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ বাবার জন্য ও পজেটিভ রক্ত হন্য হয়ে খুঁজছিলেন আলামিন শেখ। শুক্রবার কোথাও থেকে রক্ত জোগাড় করতে না পেরে ব্লাড ডোনার ক্লাবের সাথে যোগাযোগ করলে তারা তিন ব্যাগ রক্ত জোগাড় করে দেয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আমীরুল ইসলাম বলেন, ‘দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি যখন তখন রক্ত সংগ্রহের কাজ করতে হয়। প্রতিদিন ব্লাড ডোনার ক্লাবের সদস্যদের সাথে এখন আমিও নিয়মিত স্বাচ্ছন্দে কাজ করে থাকি।’
ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহাফুজুর রহমান জানান, রক্তের চাহিদা মেটাতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। প্রতিদিন দুই-তিন ব্যাগ রক্ত জোগাড় করতে হচ্ছে। গত শুক্রবার এক দিনেই ছয় ব্যাগ রক্ত জোগাড় করতে হয়েছে। তাদের সদস্যরা রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও ঢাকায় গিয়েও রক্ত দিচ্ছেন। গত ৮ মাসে প্রায় ৫০০ ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ক্লাবের সহ-সভাপতি সাংবাদিক রাশেদ রায়হান বলেন, ‘গোয়ালন্দ উপজেলায় এ ধরনের সংগঠন আগে ছিল না। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঝাঁক তরুণদের নিয়ে গঠিত এমন একটি মহৎ উদ্যোগের কথা শুনে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে আমি প্রথমবারের মতো রক্ত দিয়ে তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করি। আমার বিশ্বাস সংগঠনটি বহুদূর এগিয়ে যাবে।’
ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. সেলীম মুন্সী বলেন, ‘আমরা ভালো কাজের সাথে জড়িত থাকতে চাই। অসহায় মানুষের পাশে থাকতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।