জুমবাংলা ডেস্ক : অধিকাংশ শিক্ষকের কর্মবিরতির মধ্যেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা।
শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দারের অপসারণ ছাড়া আর শ্রেণীকক্ষে ফিরবেন না বলে জানান আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। স্কুলে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় শৈলকুপা শহরে অবস্থিত পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ে ৩৩ জন শিক্ষক কর্মচারী রয়েছে। ৬ষ্ঠ, সপ্তম এবং নবম শ্রেণীর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৫৬ জন।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সকালে বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে স্কুলে গিয়ে দেখা যায় কোন রুমে প্রধান শিক্ষক, কোন রুমে কর্মচারী, আবার কোন রুমে শিক্ষক ছাড়াই বার্ষিক পরীক্ষা চলছে।
মো: বশির উদ্দিন ল্যাব এসিসটেন্ট। তিনি একটি কক্ষে পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন। তার রুমে ৪৮ জন নবম, সপ্তম ও ৬ষ্ঠ শ্রেনীর পরীক্ষার্থী। তিনি জানান, এর আগে তাকে এ দায়িত্ব পালন করতে হয়নি। শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে, তাই তিনি পরীক্ষার ডিউটি করছেন।
সহকারী প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমানসহ ২৭ জন শিক্ষক কর্মচারী বসে আছেন কর্মবিরতিতে। প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে চলতি মাসের ১৭ তারিখ থেকে এ কর্মবিরতি চলছে বলে শিক্ষকরা জানান। আন্দোলনকারী ব্যবসা প্রশাসন বিষয়ের শিক্ষক রমজান আলী জানান, প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন যাবৎ সহকারী শিক্ষক ও কর্মচারীদের উপর বিভিন্ন নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। প্রধান শিক্ষক কয়েকজন শিক্ষকের নামে নারী নির্যাতন মামলা দায়ের করেন। এরপর, তিনি একজন কর্মচারীকে পিটিয়ে হাসাপাতালে পাঠান। এসব কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নষ্ট হতে চলেছে। প্রধান শিক্ষক দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দার স্কুলে থাকলে তারা আর শ্রেণীকক্ষে ফিরবেন না। কোন পরীক্ষায় অংশ নিবেন না, পরীক্ষার খাতাও মূল্যায়ন করবেন না। স্কুলের ২৭জন শিক্ষক কর্মচারী একসঙ্গে এ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
নবম ও দশম শ্রেনীর বাংলা বিষয়ের শিক্ষিকা সুচরিতা রানী জানান, তাদের এক দফা, এক দাবী প্রধান শিক্ষক অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আর পরীক্ষাসহ কোন কার্যক্রমে অংশ নিবেন না। কর্মচারী আবুল কালাম জানান, প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অফিসের কোন কাজে অংশ নিবেন না তারা। শিক্ষকরা জানান প্রতি ১৬ জন পরীক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক বরাদ্দ থাকার কথা পরীক্ষার রুমে।
শিক্ষকদের কর্মবিরতি নিয়ে প্রধান শিক্ষক দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দার বলেন, কয়েকজন শিক্ষক বেআইনিভাবে কর্মবিরতি পালন করছে। এ কারণে, তিনি পরীক্ষার কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে, তার পরীক্ষা নিতে কোন সমস্যা হচ্ছে না বলে জানান।
তিনি আরও বলেন, পরীক্ষার্থীদের দিকে তাকিয়ে তাদের এ কাজ করা ঠিক হচ্ছে না। বিষয়টি স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিকে জানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের যে অভিযোগ ছিলো, তা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এর বাইরে যদি তাদের কোন অভিযোগ থাকে, তবে তারা সেটা সভাপতিকে জানাতে পারেন। কোন কর্মচারীকে মারপিটের ঘটনাটি তিনি অস্বীকার করেন। পরীক্ষার সময় শিক্ষদের অসহযোগীতার বিষয়টি তিনি সব মহলকে অবহিত করেছেন।
পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের ব্যাপারে তিনি বলেন, সব শাখার শিক্ষক তো কর্মবিরতি পালন করছে না। অন্য শাখার শিক্ষক দিয়ে তিনি খাতা মূল্যায়ন করবেন বলে জানান। কর্মবিরতির বিষয়ে শিক্ষকদের স্বাক্ষরিত যে তালিকা তারা বিভিন্ন যায়গায় প্রেরণ করেছেন, তার মধ্যে শিক্ষক সঞ্জয় কুমারসহ অনেকের স্বাক্ষর জাল বলে তিনি দাবি করেন।
শৈলকুপা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি তৈয়বুর রহমান খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। কিছুদিন আগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার কাছে এক কর্মচারীকে মারার অভিযোগ আসে। তিনি তাকে বলেন বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন। এরপর তারা থানায় একটি অভিযোগ দেয়। থানায় অভিযোগটি গ্রহণ হয়েছে কিনা জানিনা।
তিনি আরও জানান, সমস্যা নিরসনে পরীক্ষার আগে তিনি উভয়পক্ষকে মাননীয় সংসদ সদস্যেও বাসায় ডেকেছিলেন, কিন্তু একটি পক্ষ আসেননি। পরীক্ষার মধ্যে কর্মবিরতি খুবই দু:খজনক ঘটনা। সূত্র : ডিবিসি নিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।