নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর : শনিবার বেলা ১১টার দিকে আট মাস বয়সী ছেলে সিয়ামকে নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান জোৎস্না আক্তার। দু’ঘণ্টার অপেক্ষায় চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছিলেন। পরে অপেক্ষমান অন্যান্য রোগীদের অনুরোধে কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আলমগীর হোসেন নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে চিকিৎসা দেন।
আরেক রোগী পঞ্চাশোর্ধ আমিনুল হক চিকিৎসা নিতে গেলে চিকিৎসকরা জানান, আগে মাস্ক কিনে পরে আসুন, তারপর চিকিৎসা শুরু হবে। প্রায় ঘণ্টা খানেক ঘুরে তিনি বরমী বাজার থেকে মাস্ক কিনে আনলেও অপেক্ষমান রোগীদের ভিড়ের কারণে চিকিৎসা আর নিতে পারেননি। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। করোনাভাইরাসে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে চিকিৎসকদের এমন সতর্কতায় গত কয়েকদিন ধরে এই কেন্দ্রে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন।
এমনিতেই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই দীর্ঘদিন ধরে, তাই একাই চিকিৎসা দিতে হয় আলমগীর হোসেনকে। প্রতিদিন অর্ধশত রোগীর ব্যবস্থাপত্রও দিতে হয় তাকে। সম্প্রতি করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন তিনি নিজেও।
তিনি জানান, নিজের নিরাপত্তা এখনও নিশ্চিত না হওয়ায় রোগী যাচাই-বাছাই করে দেখতে একটু সময় লাগছে। তাই সঠিকভাবে চিকিৎসাও দেয়া যাচ্ছে না। সরকারিভাবে তাদের জন্য নিরাপত্তা সামগ্রী বিশেষ করে জীবানুমুক্ত করার কোনো কিছু দেয়া হয়নি। স্বাস্থ্যকর্মীর সুরক্ষায় স্বাস্থ্যবিভাগের জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার দাবি তার।
তিনি আরও জানান, একজন রোগী এলে প্রথমে বিভিন্ন উপস্বর্গ দেখতে হয়, তার সঙ্গে কথা বলতে হয়, শরীরের তাপমাত্রা দেখতে তার গায়ে হাত দিতে হয়। এজন্য মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও গাউন দরকার। কিন্তু এসবের যোগান এখন পর্যন্ত পাননি। নিরাপত্তা সামগ্রী বলতে শুক্রবার একটি মাস্ক ও একটি গাউন দেয়া হয়েছে। বাকি জিনিসগুলোর কথা বললেও এখনো এর ব্যবস্থা করা হয়নি।
শ্রীপুরের উত্তর পেলাইদ গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকে নিরাপদ দূরত্বে বসে রোগীর ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডার (সিএইচপি) নুরজাহান আক্তার। তিনি জানান, সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত আমাদের সুরক্ষায় হ্যান্ড স্যানিটাইজার, গাউনসহ কোনো কিছুই দেয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে নিজে একটি মাস্ক কিনে ব্যবহার করছি।
গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় প্রান্তিক মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে ২২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ১৭টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন প্রায় হাজারো স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করেন। এখন পর্যন্ত সংক্রামক ব্যাধি থেকে এসব কর্মীদের সুরক্ষা দেয়ার কার্যত কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে সম্প্রতি করোনা রোধে নিজেদের উদ্যোগে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আবদার কমিউনিটি ক্লিনিকে গড়ে প্রতিদিন ৭০-৮০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নেয়। এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডার (সিএইচপি) শেফালী খাতুন জানান, নিজেকে নিয়েই এখন যত ভয়। নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থা না থাকায় তিনি ক্লিনিকের দরজা বন্ধ করে জানালা দিয়েই চিকিৎসা সেবার কাজটি করছেন। তবে এখন রোগীর ছোঁয়া এড়িয়ে চলছেন। এতে চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রণয় ভূষন দাস জানান, শুধু মাত্র করোনার লক্ষণ ধারণকারীদের দূর থেকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে, সবাইকে নয়। যারা সকল রোগীকে দূর থেকে চিকিৎসা দিচ্ছেন তারা হয়ত ভুল নির্দেশনা বা আতঙ্কিত হয়ে এ কাজটি করছেন।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান জানান, প্রান্তিক মানুষের চিকিৎসা সেবা ও করোনা রোধে সচেতন করতে নানাভাবে তৎপর রয়েছে মাঠপর্যায়ের এই স্বাস্থ্য কর্মীরা। এ মুহূর্তে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয়া জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।